রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত ‘মর্দানি’ ছবির কথা মনে আছে? কী ভাবে শিবানী শিবাজী রায়ের চরিত্রে একা হাতে দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন করেছিলেন রানি। পরে এই সিনেমার দ্বিতীয় পর্বেও একই চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
বলিউড-হলিউড-টলিউড মিলে এ রকম বহু ছবি রয়েছে যেখানে নির্ভীক মহিলা পুলিশের চরিত্র ঘিরে পুরো সিনেমার গল্প ঘুরেছে। দেখানো হয়েছে, সাহসিকতার নিরিখে পুরুষ পুলিশকর্মীদের থেকে কোনও অংশে কম যান না মহিলা পুলিশ আধিকারিকরা।
শুধু রুপোলি পর্দায় নয়, বাস্তবেও এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। এক সময় দেশের প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার কিরণ বেদীকে নিয়েও দেশবাসীর মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। তাঁকে আদর্শ মেনে অনেকে মহিলাই পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এখনও দেখেন।
সম্প্রতি মহিলা পুলিশের সাহসিকতা এবং নির্ভীক চরিত্রের আরও এক নিদর্শন উঠে এসেছে বিহার থেকে। বিহারের এক ব্যাঙ্কে ডাকাতি করতে আসা সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের আটকে বাস্তবের ‘হিরোইন’ হয়ে উঠলেন দুই মহিলা কনস্টেবল।
বিহারের হাজিপুরের একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ঘটনাটি ঘটে। সংবাদমাধ্যমে যে ঘটনার খবর প্রকাশিত হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ওই দুঃসাহসিক ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়।
বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ হাজিপুরের সেন্দুয়ারি চকের উত্তর বিহার গ্রামীণ ব্যাঙ্কে পাহারা দিচ্ছিলেন পুলিশের দুই মহিলা কনস্টেবল জুহি কুমারী এবং শান্তি কুমারী।
হঠাৎ করেই সশস্ত্র তিন দুষ্কৃতী ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই ব্যাঙ্কে হানা দেয়। লোহার দরজা পেরিয়ে ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকার মুখেই প্রতিরোধের মুখোমুখি হন তাঁরা।
বেগতিক দেখে তাঁরা জুহি এবং শান্তিকে ভয় দেখাতে থাকেন। দুষ্কৃতীরা তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করলেও ভয় পাননি দুই মহিলা কনস্টেবল। এক লাফে ডাকাতদের কাছে পৌঁছে, তাঁদের বন্দুক ধরে পরাস্ত করেন ডাকাতদের।
প্রকাশ্যে আসা ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ডাকাতদের এক জন জুহি এবং শান্তিকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এক মুহূর্তও নষ্ট না করে ডাকাতদের দিকে এগিয়ে যান তাঁরা।
খালি হাতে দুষ্কৃতীদের পিস্তলের নল ধরে ফেলেন নির্ভীক দুই মহিলা পুলিশকর্মী। ডাকাতদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয় জুহি এবং শান্তির।
লড়াইয়ে জুহি এবং শান্তি আহত হলেও তাঁরা দুষ্কৃতীদের এক মুহূর্তের জন্যও চড়াও হতে দেননি। উল্টে মহিলা পুলিশকর্মীদ্বয়ের সঙ্গে না যুঝতে পেরে ময়দান ছেড়ে পালায় ডাকাতের দল। ব্যাঙ্ক লুট না করেই চম্পট দেন তাঁরা।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে জুহি বলেন, ‘‘আমি ওই তিন দুষ্কৃতীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তিন জনেরই ব্যাঙ্কে কাজ আছে কি না। তাঁরা সম্মতি জানিয়েছিলেন। সন্দেহ হওয়ায় আমি তাঁদের পাশবুক দেখাতে বলেছিলাম। তখনই ওঁরা বন্দুক বের করেন।’’
শান্তির কথায়, ‘‘ওঁরা আমাদের রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, যাই ঘটুক না কেন, আমরা ওঁদের ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে দেব না। আমরা আমাদের রাইফেলও কেড়ে নিতে দিইনি। ওরা পালিয়ে যাওয়ার পরও জুহি ওঁদের দিকে তেড়ে গিয়েছিল।’’
সেন্দুয়ারি চক থানার পুলিশ আধিকারিক ওম প্রকাশ বলেন, ‘‘তিন জন দুষ্কৃতী বুধবার সকাল ১১টার দিকে সেন্দুয়ারিতে ব্যাঙ্ক লুট করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের মহিলা কনস্টেবল সাহস দেখিয়ে তাঁদের আটকে দেন। গুলি চালাতে হয়নি। কনস্টেবলদের পুরস্কৃত করা হবে।’’
পুলিশ এখন ওই দুষ্কৃতীদের সন্ধানে রয়েছে এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে। সেলুলয়েডের পর্দায় সাহসিকতার যে দৃশ্য বারবার দেখা গিয়েছে, বাস্তবে যেন তেমন কিছুই ঘটল।