ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৮৮ জনের।
দুর্ঘটনাস্থলের ছবি দেখে আঁতকে উঠছেন অনেকে। বিপর্যয়ের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, ট্রেনের একাধিক কামরা তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। মালগাড়ির উপরে উঠে গিয়েছে করমণ্ডলের ইঞ্জিন।
বালেশ্বরের কাছে বাহানগা স্টেশনের কাছে শুক্রবার সন্ধ্যার এই দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ৪২ বছর আগের কথা। ১৯৮১ সালে এই জুন মাসেই আরও এক ভয়ানক রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী ছিল ভারত।
১৯৮১ সালের ৬ জুন। ৮০০-র বেশি যাত্রী নিয়ে বিহারের মানসি থেকে সহরসার দিকে যাচ্ছিল একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। মাঝপথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেটি।
এ ক্ষেত্রেও প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি করমণ্ডলের মতো লাইনচ্যুত হয়। একাধিক কামরা মূল ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু এই ট্রেন দুর্ঘটনার পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বিহারের ১৯৮১ সালের ট্রেন দুর্ঘটনাকে ভারতের রেল দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এবং মর্মান্তিক বলে দাবি করেন অনেকে। ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ঠিক কী হয়েছিল ৪২ বছর আগে? জানা যায়, মানসি থেকে সহরসার দিকে যাওয়ার পথে বিহারের বাগমতি নদীর উপর দিয়ে যাচ্ছিল ট্রেনটি। নদীর উপরে রেলসেতু পেরোনোর সময় দুর্ঘটনা হয়।
ট্রেনের একাধিক কামরা ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লাইনচ্যুত হয়। সেতুর উপর থেকে যাত্রিবাহী কামরাগুলি সোজা গিয়ে পড়ে নদীতে। নদীর জলে সেগুলি ডুবে গিয়েছিল।
৪২ বছর আগের এই দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। নিশ্চিত করে জানা যায়নি দুর্ঘটনার কারণও। তবে কী ভাবে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সে সম্বন্ধে একাধিক তত্ত্ব উঠে আসে।
অনেকে বলেন, ট্রেনটি আসলে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছিল। ৬ জুন ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। দমকা হাওয়ার ধাক্কায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারান।
ঝড়বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে ট্রেনটি ঝড়ের গতিতে ছুটছিল। রেলসেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা চালক ব্রেক কষেন বলে দাবি। তার পরেই কামরাগুলি ছিটকে নদীতে পড়ে।
বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রাবল্যে বাগমতি নদীও তখন উত্তাল। জল ফুলেফেঁপে উঠেছিল। ফুঁসতে থাকা সেই নদীতে কার্যত সলিলসমাধি হয় যাত্রীদের।
অনেকে বলেন, বৃষ্টিতে দৃশ্যমানতা হারিয়ে চালক সেতুর উপর জোরে ব্রেক কষেন। অনেকে আবার বলেন, সেতুর উপরে একটি গরু চলে এসেছিল। সেই কারণে চালক আচমকা ব্রেক কষতে বাধ্য হন।
আচমকা ব্রেক কষায় ট্রেন ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেনি। অনেকে আবার বলেন, ট্রেনটির ব্রেক ফেল করেছিল।
দুর্ঘটনার আর এক সম্ভাব্য কারণ হিসাবে উঠে আসে বন্যা। প্রবল বৃষ্টিতে রেলসেতু ভেসে গিয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে। বাগমতি নদীর জল নাকি সেতুর উপরে উঠে এসেছিল। ফলে চালক সমস্যায় পড়েন।
এই ট্রেন দুর্ঘটনায় ৭৫০-র বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন বলে দাবি। যদিও সরকারি পরিসংখ্যানে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৫০ জন।
উদ্ধারকাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ৬ দিন। এই উদ্ধারকাজ একেবারেই সহজ ছিল না। ফলে যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। তবে সরকারি হিসাব বলছে, ৮৮ জন দুর্ঘটনার কবলে পড়েও বেঁচে ফিরেছিলেন।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ শুরু হতে দেরি হয়েছিল। বহু মানুষের কোনও খোঁজই পাওয়া যায়নি। জলের তোড়ে কে কোথায় ভেসে গিয়েছেন, কেউ জানে না। অনেকে ট্রেনের সঙ্গেই নদীতে ডুবে গিয়েছিলেন।
যদিও, মানসি থেকে ট্রেনটি যখন রওনা দিয়েছিল তখন আবহাওয়া ভাল ছিল বলেই দাবি করা হয়। মাঝপথে আচমকা ঝড় ওঠে। এই দুর্ঘটনা রেলের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ স্মৃতি হিসাবে রয়ে গিয়েছে।