চিনা রসুনের ঝাঁজে ভারতীয় রসুনের চোখে জল। দেশি রসুনের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ফের বাজারের দখল নিতে উঠেপড়ে লেগেছে চিন থেকে আমদানিকৃত নিম্ন মানের বিষাক্ত রসুন।
নিষিদ্ধ করা হয়েছে এক দশক আগেই। তা সত্ত্বেও চিনা রসুনের আধিপত্য আবার ভারতীয় বাজার জুড়ে। নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চোরাগোপ্তা ভাবে ঢুকে পড়ে ভারতে রমরমিয়ে বিকোচ্ছে চিনা রসুন।
দেশের সমস্ত প্রান্তের বাজারেই চিনা রসুনে ছেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় রসুনের বিক্রি কমার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
সম্প্রতি গুজরাতের ‘গোন্ডাল এগ্রিকালচার প্রোডিউস’ বাজারে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৭৫০ কেজির চিনা রসুন। যা দেখে হতবাক অন্য ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা দ্রুত বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঘটনাটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আনা হয়েছে।
‘গোন্ডাল এগ্রিকালচার প্রোডিউস’ বাজারের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, শুক্রবার গোন্ডালের বাজারে ২০০০ বস্তা দেশি রসুনের লেনদেন হয়। ২০ কেজি রসুনের দাম ৩৬০০ থেকে ৫৫০০ টাকার মধ্যে ঘোরফেরা করেছে। অর্থাৎ, প্রতি কেজির দাম ছিল ২৭৫ টাকার মধ্যে। কোয়া ছোট, কম সাদা। সেগুলোই আসল খাঁটি ভারতীয় রসুন।
প্রতি বছরই টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা অভিযান চালিয়ে ক্ষতিকারক চিনা রসুনের বিক্রি আটকানোর চেষ্টা করেন। দাম কম ও দেখনদারির চটকে দেশি রসুনকে বার বার টেক্কা দিয়ে ভারতীয় বাজারে আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশের এই কৃষিপণ্যটি।
ভারতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর মূলত বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে এই ধরনের চোরাচালান বেড়েছে। চিন থেকে নেপাল সীমান্ত হয়ে এই রসুন ভারতে আনা হচ্ছে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, ভারতে কেন চিনের রসুনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল? একে বিষাক্ত রসুনই বা কেন বলা হচ্ছে?
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে চিনা রসুন আমদানি করা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। পরীক্ষা করার পর চিনা রসুনে ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
ধবধবে সাদা বড় বড় কোয়া, এই রসুন দেখতে সুন্দর হলেও আদতে তা শরীরে পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। ভারতে চিন থেকে যে রসুন পাঠানো হত সেই রসুনে থাকত মিথাইল ব্রোমাইড। রসুনকে ফাঙ্গাসের হাত থেকে বাঁচাতে কীটনাশক হিসাবে চিন এই বিষাক্ত রাসায়নিকটি ব্যবহার করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নিয়মিত মিথাইল ব্রোমাইড পেটে গেলে লিভার-কিডনি বিকল হতে পারে। স্নায়ুর সমস্যাও হতে পারে। নষ্ট হতে পারে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি। চিনে যে রসুন উৎপাদন করা হয়ে তাতে নিম্ন মানের সার প্রয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া লালচে ভাব কাটিয়ে রসুনের কোয়া সাদা করতে ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক। মানবদেহে যার বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ভারত ও চিন উভয়ই রসুনের প্রধান উৎপাদক। এ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ রসুন চাষ হয় মধ্যপ্রদেশে। ১৫ শতাংশ রসুন চাষ করে রাজস্থান। দুই আমেরিকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ২০২০ সালের পর থেকে ভারতীয় রসুনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বেড়েছে ভারতের রফতানির পরিমাণও।
অন্য দিকে, চিনের রসুনে ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিদেশের বাজারে চাহিদায় ভাটা পড়ে। রাসায়নিক দেওয়ার ফলে রসুনে উপস্থিত উপকারী যৌগ অ্যালিসিনের পরিমাণ বেশ কম রয়েছে চিনা রসুনে। সে কারণে বেশ কয়েকটি দেশে কদর কমেছে চিনা রসুনের।
রফতানি বাড়ার ফলে ভারতের বাজারে দেশি রসুনের চাহিদা ক্রমেই বেড়েছে। আর তার ফলে দাম বাড়ছে ভারতীয় রসুনের। এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চেয়েছে চিন। অর্ধেক দামে চিনের রসুনকে ভারতীয় বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালাচ্ছে বেজিং।
তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে শুল্ক বিভাগ পৃথক অভিযানে নেপাল থেকে ভারতে পাচার হওয়া প্রায় ১৬ টন চিনা রসুন উদ্ধার করেছে। শুল্ক বিভাগ সম্প্রতি ১৪০০ কুইন্টাল চিনা রসুন নষ্ট করেছে।