বাংলাদেশের এক নায়িকা মাহিয়া মাহি এখন সংবাদের শিরোনামে। অভিনয়ের জন্য নয়। একটি অডিয়ো বার্তা ফাঁস হওয়ার জন্য। গত রবিবার রাতে ভাইরাল হয় একটি অডিয়ো ক্লিপ। যেখানে শোনা যাচ্ছে, মাহিয়ার সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছেন বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান।
অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই না করলেও মাহিয়া ফোনালাপের সত্যতা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘‘সে দিনও বিব্রত হয়েছিলাম। আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল। আজ আবার বিব্রত হয়েছি।’’ মাহিয়া বর্তমানে মক্কায়।
মন্ত্রী মুরাদ কী বলেছিলেন ফোনে? মাহিয়াকে হোটেলে আসার জন্য জোর করা, ধর্ষণ-হুমকি এবং পুলিশ পাঠিয়ে তুলে নিয়ে আসার কথা বলে ভয় দেখানো—সব কিছুই রয়েছে তাতে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশিষ্টরা। পদক্ষেপ করেছে বাংলাদেশ সরকারও।
এই ফোনালাপ সামনে আসতেই মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিত্ব খোয়ানোই শুধু নয়, দলীয় পদ থেকেও তিনি অপসারিত। আওয়ামি লিগ মুরাদের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখবে না বলেই খবর। ঘোরালো পরিস্থিতিতে এখন ক্ষমা চাইছেন মুরাদ। কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর কঠিন শাস্তির দাবিতে সরব অনেকেই।
কে এই মাহিয়া মাহি? আসল নাম শারমিন আকতার নিপা। জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৯৩। বয়স ২৮।
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় জন্ম। বাবা আবু বকর এবং মা দিলারা ইয়াসমিন। মাহিয়া ঢাকা উত্তরা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বর্তমানে ঢাকার শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
২০১৬ সালে পারভেজ মাহমুদ অপুকে বিয়ে করেন মাহি। বিচ্ছেদ ২০২১ সালের জুনে। পরে এই বছরই সেপ্টেম্বরে মাহি বিয়ে করেন গাজীপুরের ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ রাকিব সরকারকে।
২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিতে অভিনয়ে হাতেখড়ি। পরের বছর মাহির পরপর তিনটি সিনেমা সাফল্যের মুখ দেখে। এর পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মাহি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র জগতের শীর্ষ অভিনেত্রীদের একজন। ইন্টারনেটের তথ্য বলছে ঢালিউডের নায়িকাদের মধ্যে তাঁর পারিশ্রমিক সবচেয়ে বেশি।
মাহির সঙ্গে বাংলাদেশের মন্ত্রীর কথোপকথনের ওই অডিও ক্লিপটি বছর দু’য়েকের পুরনো। ঘটনাটি যখন ঘটে, তখনও মাহিয়া বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রতিষ্ঠিত নায়িকা। বিবাহিত।
বাংলাদেশে তখন সবে অতিমারি পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মাহিয়া তাঁর এক সহকর্মী অভিনেতা এবং পরিচালকের সঙ্গে পরের ছবির মুক্তি নিয়ে একটি রেস্তরাঁয় বৈঠক করছিলেন। অতিমারি পরিস্থিতিতে ছবি কী ভাবে মুক্তি পাবে, আলোচনা হচ্ছিল তা নিয়েই, তখনই আসে মন্ত্রীর ফোন।
মাহিয়ার সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহকর্মী অভিনেতা মামনুন ইমন। বাংলাদেশের এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমন জানিয়েছেন, ফোন এসেছিল তাঁরই মোবাইলে। তাঁকেই মন্ত্রী নির্দেশ দেন মাহিয়াকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসতে। এমনকি তাঁদের খাওয়ানোরও প্রস্তাব দেন মন্ত্রী মুরাদ।
অডিও ক্লিপে ইমন এবং মন্ত্রীর কথাবার্তাও ধরা পড়েছে। সেখানে রীতিমতো ধমকের সুরে মন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, তাঁর আগের ফোনটি ধরা হয়নি কেন? পরে মন্ত্রীকে নির্দেশের সুরে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওরে (মাহিয়াকে) নিয়ে আয়।’’
ফোনে মাহিয়াকে বিভিন্ন সংস্থার নাম করে ভয় দেখানোর কথাও বলেছিলেন মন্ত্রী মুরাদ। সাক্ষাৎকারে ইমন জানিয়েছেন, এর জবাবে তিনি মন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘‘এ সব কিছু লাগবে না। আমি বিষয়টি দেখছি।’’ মন্ত্রীর সঙ্গে ঢালিউডের অভিনেতার এই কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর তাঁকেও তলব করেন তদন্তকারীরা।
যদিও ইমন জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতেই তিনি ওই কথাটি বলেছিলেন। আসলে মন্ত্রীকে নিরস্ত করতেই চেয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রী এরপর মাহিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফোনটি মাহিয়াকে দিয়ে দেন ইমন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তাঁর মনে হয়েছিল মন্ত্রী মজা করছেন। তাই এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবেননি। তবে মাহিয়ার সঙ্গে মুরাদের কি কথোপকথন হয়েছে তা তখনও জানতেন না ইমন।
মুরাদ এবং মাহিয়ার কথোপকথনের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন সম্প্রতি। বিতর্কিত অডিও ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসার পর। ইমনের কথায়, মন্ত্রীর সঙ্গে সে দিন মাহিয়ার কী কথা হয়েছিল, তা অভিনেত্রী তাঁকে বলেননি। তবে তাঁর মনে আছে, এরপরই বৈঠক ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলেন মাহিয়া।