ঘুরতে এসে ‘দুষ্টুমি’ করা চলবে না। শ্রদ্ধাশীল হতে হবে স্থানীয় রীতিনীতির প্রতি। না হলে বিপদে পড়তে হবে। কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ‘দুষ্টু’ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য এমনই নির্দেশিকা জারি করলেন ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শহর বালির গভর্নর।
‘দেবতাদের দ্বীপ’ (আইল্যান্ড অফ দ্য গডস) নামে পরিচিত বালি প্রদেশের বর্তমান গভর্নরের পদে রয়েছেন আই ওয়াইয়ান কোস্টার। সোমবার বিদেশি পর্যটকদের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি সরকারি বিবৃতি জারি করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালেও একই ধরনের একটি সরকারি বিবৃতি জারি করা হয়েছিল।
সরকারি বিবৃতিতে কোস্টার বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, বালির পর্যটন যেন সম্মান এবং আমাদের স্থানীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে টিকে থাকে।’’
কোস্টারের জারি করা বিবৃতিতে পর্যটকদের বালির ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন করার এবং ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া পর্যটকদের মন্দিরে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার বা প্রকাশ্যে ‘দুষ্টুমি’ না করা এবং যথাযথ অনুমতি ছাড়া ব্যবসা করতেও বারণ করা হয়েছে পর্যটকদের।
সোমবার কোস্টার স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নতুন সেই নির্দেশিকা কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হবে। পর্যটকদের কোনও ভুল মাফ করা হবে না।
নতুন নির্দেশিকা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য বালি সান’কে বালির গভর্নর বলেছেন, “আমরা অভিযান চালানোর জন্য এবং বিদেশি পর্যটকদের উপর নজর রাখার জন্য একটি বিশেষ দল প্রস্তুত করেছি। যে সব বিদেশি পর্যটক প্রকাশ্যে দুষ্টুমি করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
যদিও সেই দুষ্টুমি বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, যে সব পর্যটক প্রকাশ্যে অশালীন আচরণ করবেন, তাঁদের উদ্দেশেই ওই বার্তা দিয়েছেন ‘দেবতাদের দ্বীপ’-এর গভর্নর।
তবে পর্যটকদের নিয়ে উদ্বেগ শুধু বালির গভর্নরের নয়, স্থানীয় শিক্ষাবিদদেরও। তাঁদের দাবি, পর্যটন ভিসা নিয়ে এসে বেশ কিছু বিদেশি অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন বালিতে। আর তার কুপ্রভাব স্থানীয়দের ব্যবসার উপর পড়ছে।
বালির সুরাবায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা এবং অর্থনীতির অধ্যাপক পুতু আনোম এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, দ্বীপে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসাগুলি বিপদে পড়ছে। তাঁর যুক্তি অনেক বিদেশি পর্যটক পর্যটন ভিসা নিয়ে এসে অবৈধ ভাবে ব্যবসা করে ওই ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করছেন।
‘দ্য বালি সান’কে পুতু বলেন, “এমন পর্যটক আছেন যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে বালিতে থাকেন এবং ব্যবসা করেন। তাঁদের বন্ধুরা এলেও পরিষেবা প্রদান করেন। এটি নিষিদ্ধ করা উচিত এবং সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত।”
পুতু আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে বহু পর্যটক বালিতে আসছেন। কিন্তু অত পরিমাণ পর্যটকদের সামলানোর মতো পরিকাঠামো নেই। আর সে কারণেই নাকি এই পরিস্থিতি।
নতুন নিয়মের পাশাপাশি পর্যটকদের উপর নতুন পর্যটন শুল্কও চাপানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, পর্যটন শুল্ক বাবদ পর্যটকদের ১৫০,০০০ রুপিয়া বা ৯ ডলার দেওয়া বাধ্যতামূলক। বালি ছাড়ার আগে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে।
আগামি শনিবার বালি প্রদেশ জুড়ে পবিত্র নীরব দিবস ‘নাইপি’ পালিত হবে। তার ঠিক আগে আগেই বিদেশি পর্যটকদের জন্য নয়া নিয়ম জারি করল স্থানীয় প্রশাসন।
‘নাইপি’র দিন পর্যটক-সহ বালির স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্যই ঘরের ভিতরে থাকতে হয়। বাইরে বেরোনোর নিয়ম নেই সাধারণের জন্য।