ছিলেন গরিব খনিশ্রমিক। হঠাৎই হয়েছেন লাখপতি! লটারির টিকিটে ভাগ্য ফিরেছে অস্ট্রেলিয়ার জনা কুড়ি খনিশ্রমিকের। দিনরাত এক করে খেটে খাওয়া ওই শ্রমিকেরা কি এ বার আদৌ আর কাজে ফিরবেন? আশঙ্কায় ভুগছেন খনির মালিক। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কাজ ছেড়ে পালালে ওই শ্রমিকদের ঠিক খুঁজে বার করব!’’
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কালগোর্লি শহরের একটি সোনার খনিতে কাজ করেন ওই লটারিজয়ীরা। গত বৃহস্পতিবার মুহূর্তের মধ্যে ভাগ্যবদল ঘটেছে তাঁদের। প্রত্যেকের হাতে এসেছে ২৬ লক্ষ করে অস্ট্রেলীয় ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার লোট্টো পাওয়ারবলের লটারিতে ভাগ্যের সন্ধানে নেমেছিলেন ওই কুড়ি জন। তাতে পাওয়ারবলের প্রথম ডিভিশনের জ্যাকপট জিতে নেন তাঁরা। একত্রে যার পুরস্কারমূল্য ৫ কোটি ৩ লক্ষ অস্ট্রেলীয় ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২৬৬ কোটি টাকা।
পাওয়ারবলের প্রথম ডিভিশনের জ্যাকপট জিততে হলে লটারির একক গেমের প্যানেলে ৭টি নম্বর ছাড়াও পাওয়ারবল বাছাই করতে হয়।
লটারি খেলার সময় ১ থেকে ৬৯ নম্বরের মধ্যে যে কোনও ৫টি নম্বরের পাশাপাশি ১ থেকে ২৬ নম্বরের মধ্যে পাওয়ারবল নম্বর বাছতে হবে। এর পর লটারির ড্র হয়। তাতে বাছাই করা ওই ৬টি নম্বর মিলে গেলে জ্যাকপট জিতে নেন লটারির মালিক।
এক মুহূর্তেই যে কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন, তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না প্ল্যান্ট অপারেটর পিটার। তবে এই জয়ের পর রাতারাতি নিজের শহরে তারকার খ্যাতি পাচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় রেডিয়ো স্টেশনকে তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের আগে কখনও একসঙ্গে লটারির টিকিট কাটিনি। বড়জোর ড্র হওয়ায় এক বার খেলতে চেয়েছিলাম মাত্র।’’
পিটার জানিয়েছেন, তাঁর দলের কুড়ি জন একসঙ্গে এক-একটি লটারির টিকিট কিনেছিলেন। সে ফাটকা যে কাজে লেগে যাবে, বিশ্বাসই করতে পারছেন না। পিটারের কথায়, ‘‘সকলে মিলে আচমকাই ১০০ ডলার করে টিকিট কিনেছিলাম। আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না যে জিতে গিয়েছি!’’
তাঁর শ্রমিকেরা কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন? এমনও হতে পারে নাকি? বিশ্বাসই হচ্ছে না খনিমালিক ক্রিস উডের। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসি-র কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমনটা হতেই পারে না!’’
গোল্ডফিল্ড-এসপারেন্স অঞ্চলে ওই সোনার খনির মালিক ক্রিস। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা আমাকে ফোন করে লোট্টো জেতার কথা জানিয়েছিল। তবে আমার বিশ্বাস হয়নি।’’
ক্রিস জানিয়েছেন, রাতের শিফটে তাঁর খনিতে যত জন কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে ওই কুড়ি জনের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। ফলে ওই শ্রমিকদের তিনি হারাতে চান না। ক্রিসের আশঙ্কা, ‘‘মনে হচ্ছে, এ বার হয়তো ওরা কাজ ছেড়ে দেবে।’’
শ্রমিকদের লটারি জয়ের খবর শুনে তিনি যে যারপরনাই আনন্দিত, সে কথাও অবশ্য জানিয়েছেন ক্রিস। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কুড়ি জনের প্রত্যেকের জন্য খুবই খুশি আমি। তবে ওদের বলেছি, লটারি জেতার পর কাজ ছেড়ে পালিয়ে গেলে ঠিক খুঁজে বার করব। এমনকি কাজে না ফিরলে লটারির টিকিটও চুরি করে নিতে পারি।’’
যদিও ক্রিসের এই আশঙ্কা যে অমূলক, তা জানিয়েছেন কাইলি ওয়েন্স নামে খনির এক কর্মী। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোটিপতি হলেও সাধারণ জীবনযাপন করবেন তাঁরা। খনিতেও কাজ চালিয়ে যেতে চান তিনি।
কাইলির কথায়, ‘‘জানেন তো, সকলে বলাবলি করছে যে, জ্যাকপট জেতার পর খনির কাজ ছেড়ে দেব আমরা। তবে সেটা সত্যি নয়। লটারি জেতার খবর পেয়েও আমি কাজে এসেছি। এখনও আগের মতোই ট্রাকে মাল তুলছি।’’
লটারিজয়ীদের সকলেই যে ওই মহিলার মতো সাধারণ জীবন বেছে নেবেন, এমন নয়। জ্যাকপট জেতার অর্থে বিলাসে গা ভাসাতে চান এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে মোটে ১০০ ডলার খরচ করে লটারি জিতেছি। আমাদের সকলের জীবনই পাল্টে গিয়েছে।’’
সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের জন্য এ বার একটা বাড়ি কিনতে পারব। বড়দিনের সময় যেখানে খুশি ছুটি কাটাতে পারবে আমার বাচ্চারা। ভবিষ্যতের চিন্তা আর নেই!’’