চন্দ্র অভিযান হোক বা মহাকাশ স্টেশনে মাসের পর মাস কাটিয়ে দেওয়া। পৃথিবীর বাইরে গিয়ে মহাশূন্যের অনন্ত রহস্যের খোঁজ করেন নভোচরেরা। এই পেশায় পদে পদে রয়েছে বিপদ। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের নেশা আর মহাকাশ গবেষণায় নয়া দিগন্ত খুলতে বার বার পৃথিবীর বাইরে পা রাখেন তাঁরা।
মহাকাশচারীর পেশা বেছে নেওয়া কিন্তু মোটেই সহজ নয়। উচ্চশিক্ষিত না হলে, বিশেষত মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলে এই কাজ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। পাশাপাশি, মহাকাশচারী হতে গেলে নিতে হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ।
এ হেন নভোচরদের বেতন কত? এই নিয়ে আমজনতার মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। বিশ্বের আলাদা আলাদা মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রে এই পেশায় যুক্তদের পৃথক বেতন কাঠামো রয়েছে। এবং তা পরিবর্তনশীল।
কোন মিশনে তাঁরা যাচ্ছেন, তার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে মহাকাশচারীদের বেতন। এ ছাড়া নভেচরদের অভিজ্ঞতাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের বেতন অনেকটাই বেশি। তুলনায় নতুন নভোচরদের বেতন কম।
মহাশূন্যে নভোচর পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘নাসা’। এখানকার মহাকাশচারীদের বেতন কাঠামো সংস্থাটির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে। আমেরিকার আইন অনুযায়ী, অসামরিক সরকারি কর্মীরা জেনারেল শিডিউলের (জিএস) ফেডারেল কাঠামো অনুযায়ী বেতন পান।
সংবাদ সংস্থা ‘স্পেস ইমপাল্স’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জিএসের ১২ ও ১৩ র্যাঙ্ক অনুযায়ী আমেরিকার মহাকাশচারীরা বেতন পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৮৪ হাজার ডলার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ডলার বেতন দেওয়া হয় তাঁদের। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৭১ লক্ষ থেকে ৯৭ লক্ষ টাকা।
নাসার ওয়েবসাইটে আবার বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মহাকাশচারীরা ১ লক্ষ ৫২ হাজার ২৫৮ ডলার বেতন পাচ্ছেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা।
তবে নাসায় সামরিক বাহিনী থেকে আসা নভোচরদের বেতন কাঠামো অনেকটাই আলাদা। কারণ, ফৌজি চাকরি বজায় রেখেই মহাকাশচারী হিসাবে কাজ করতে পারেন তাঁরা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ‘‘বাহিনী থেকে আসা নভোচরদের বেতন, ছুটি-সহ অন্যান্য যাবতীয় সুযোগ সুবিধার দিকটি জনসন স্পেস সেন্টার থেকে দেখাশোনা করা হয়।’’
বাহিনী থেকে আনা মহাকাশচারীরা সাধারণত অফিসার পদে নাসায় চাকরি পান। তবে নিয়োগের আগে তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা ও কত ঘণ্টা বিমান বা কপ্টার উড়িয়েছেন তা পরীক্ষা করে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
স্পেস ইমপাল্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাকাশচারী ম্যাথু ডমিনিক ফেডারেল বেতন অনুযায়ী প্রতি মাসে ৮,১৯৯ ডলার পেয়ে থাকেন। ২০২০ সাল থেকে আমেরিকার নৌসেনায় কম্যান্ডার পদে রয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে মহাকাশচারী রাজা চেরি প্রতি মাসে বেতন বাবদ পান ১০,৬৩৮.৯০ ডলার। যার মধ্যে রয়েছে বিমা ও পেনশনের সুযোগ সুবিধা। ২০২৩ সালে আমেরিকার বিমানবাহিনীতে উচ্চ পদ পেয়েছেন তিনি।
নাসার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস। আমেরিকার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন তিনি। নাসার ২০২৪ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী তিনি টাকা পাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
এ ছাড়া নভোচরদের প্রতীকী ভ্রমণ ভাতা দিয়ে থাকে নাসা। সেই টাকার পরিমাণ জানা যায়নি। তবে তাঁরা মহাকাশ মিশনের জন্য কোনও বোনাস পান না।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ মহাকাশচারীদের বেতন কাঠামো কিন্তু একেবারেই নাসার মতো নয়। এখানকার নভোচরেরা আমেরিকার সংস্থার তুলনায় কম বেতন পান। তবে আয়করে ছাড় পান তাঁরা।
স্পেস ইমপাল্স জানিয়েছে, ইএসএর নতুন মহাকাশচারীদের মাসে ৫,০১৯.৪৫ পাউন্ড বেতন দেয় ব্রিটিশ সরকার। ফ্রান্সে যা কিছুটা বেশি। সেখানকার নভোচরদের ৬,২৫১.৫১ ইউরো বেতন দেয় প্যারিস সরকার।
প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ হলে ইএসএর মহাকাশচারীরা এ-৩ গ্রেড অনুযায়ী বেতন পেয়ে থাকেন। তখন প্রতি মাসে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সরকার নভোচরদের দেয় যথাক্রমে ৬,১৯৪.৬৫ পাউন্ড ও ৭,৭১৩.৯৯ ইউরো।
ইএসএর মহাকাশচারীরা প্রথম বার মহাকাশে গেলে এ-৪ গ্রেডে চলে যায় তাঁদের বেতন। তখম ৭,১৯৯.১৬ পাউন্ড ও ৮,৯৬৪.১০ ইউরো করে প্রতি মাসে টাকা পান ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মহাকাশচারীরা।
ইউরোপের মধ্যে নভোচরদের সবচেয়ে ভাল বেতন কাঠামো রেখেছে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’। রুশ সংবাদ সংস্থা ‘তাস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নভোচরদের বেতন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।
পুতিনের প্রস্তাব অনুযায়ী, যে রুশ নভোচরেরা মহাশূন্যে রয়েছেন তাঁদের বেতন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর যাঁরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তাঁদের বেতন বাড়ানো হবে ৭০ শতাংশ। বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাতা বৃদ্ধির কথাও বলেছেন তিনি।
তাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিনের প্রস্তাব মান্যতা পেলে প্রতি মাসে মহাকাশচারীদের গড় বেতন ৩ লাখ রুবেলে গিয়ে পৌঁছবে। অন্য দিকে অভিজ্ঞ রুশ মহাকাশচারীরা মাসে পাবেন ৫ লাখ রুবেল।