শুরুটা যে ভাবে হয়েছিল, শেষটা সে ভাবে হয়নি। প্রায় চুপিসারে বলিউড থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। অশ্বিনী ভাভে। প্রবাসে সংসার পেতেছিলেন। তার পর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘরকন্যা সামলেছেন। কেন? সেই নিয়ে বহু জল্পনা রয়েছে। অনেকে আবার এর নেপথ্যে সলমন খানের একটি ছবির ভূমিকাও দেখেন।
মাধুরী দীক্ষিতের সমসাময়িক অশ্বিনী। মাধুরীর সঙ্গে মুখের মিল ছিল বলে বলিউডে পা রাখা যেমন সহজ হয়েছিল, তেমনই অনেকে মনে করেন, তাঁর ব্যর্থতার কারণও এই মিল।
মরাঠি ছবিতে কাজ করতে করতে বলিউডে পা রাখেন অশ্বিনী। যদিও ছবির আগে চুটিয়ে থিয়েটার করতেন তিনি।
অশ্বিনীর পড়াশোনা মুম্বইয়ে। পড়াশোনা শেষ করে থিয়েটারের দলে যোগ দেন। থিয়েটার করার সময়ই ‘অন্তরীক্ষ’ নামে একটি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন ওই সিরিয়ালে অভিনয় করে।
সিরিয়াল করার সময়ই মরাঠি ছবির অফার আসতে থাকে। মরাঠি ছবিতে বেশ সফল হয়েছিলেন অশ্বিনী। এর পর বলিউড থেকেও প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
ঋষি কপূরের বিপরীতে ‘হানিমুন’ ছবির প্রস্তাব এসেছিল অশ্বিনীর কাছে। সই করেছিলেন নায়িকা। সেই ছবিতে অভিনয় করার সময়ই ঋষির সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয় অশ্বিনীর। অনেকে অবশ্য একে ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ও বলেছিলেন।
‘হানিমুন’ ছবির পাশাপাশ ঋষির ‘হেনা’ ছবিতেও অভিনয় করেন অশ্বিনী। হেনায় একটা ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল তাঁর, যাতে অভিনয়ের প্রস্তাব বলিউডের প্রায় সব নায়িকাই ফিরিয়ে দেন। মীনাক্ষী, আয়েষা জুলকা, জুহি রাজি হননি ওই চরিত্রের জন্য।
‘হেনা’ ছবির শুটিংয়ের সময় রাজ কপূর মারা গিয়েছিলেন। ফলে ছবির দায়িত্ব ঋষি, রণধীর এবং রাজীব তিন কপূর-ভাইয়ের উপর বর্তায়।
অগত্যা ঋষি গিয়ে বন্ধু অশ্বিনীকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। অশ্বিনী রাজি হয়ে যান। চাঁদনি কলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই চরিত্রের লিপে ‘দের না হো যায়ে’ গান দারুণ হিট হয়।
গানটি অশ্বিনীকে নতুন পরিচিতি দেয়। ‘হানিমুন’ ছবির আগে ‘হেনা’ মুক্তি পায়। অশ্বিনীর কেরিয়ারে সেটাই প্রথম ছবি হয়ে থেকে যায়। এর পর একের পর এক বড় ব্যানারের ছবির অফার পেতে থাকেন অশ্বিনী।
১৯৯৩ সালে ‘সৈনিক’ ছবি মুক্তি পায়। সেখানে অক্ষয়ের বিপরীতে অভিনয় করেন অশ্বিনী। দু’জনের জুটি দারুণ সফল হয়। তার পর কানাঘুষোও শুরু হয়। নিন্দকেরা বলেন, ছবির শুটিংয়ের সময় সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অশ্বিনী আর অক্ষয়। যদিও এই নিয়ে কখনও দু’জনে মুখ খোলেননি।
‘সৈনিক’-এর পর যশরাজ ব্যানারে ‘পরম্পরা’ ছবিতে অভিনয় করেন অশ্বিনী। সৎ মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সইফ আলি খান আর আমির খান অশ্বিনীর ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁরা দু’জনেই বয়সে অশ্বিনীর থেকে বড়।
অনেকেই মনে করেন, ‘পরম্পরা’-তে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত অশ্বিনীর জন্য ঠিক হয়নি। মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করার পর নাকি আর নায়িকা হয়ে ওঠা হয়নি অশ্বিনীর। এর পর শুধুই পার্শ্বচরিত্রের প্রস্তাব আসতে থাকে তাঁর কাছে। এর পর কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে কোনওটিই হিট হয়নি।
নব্বইয়ের দশকে বলিউডের নিয়ন্ত্রক ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ড। রোজ কোনও না কোনও প্রযোজক ছবিতে টাকা ঢালতেন। তার পর মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেত অনেক ছবি। সে কারণে বেশ কিছু ছবিতে অশ্বিনী সই করলেও সেগুলি দিনের আলো দেখেনি।
সলমনের সঙ্গে ‘বন্ধন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অশ্বিনী। তাঁর দিদির ভূমিকায়। ১৯৯৫ সালে ছবি তৈরি শুরু হয়। তবে তা শেষ হতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল।
ওই ছবির শুটিংয়ের সময় এক শিল্পপতির সঙ্গে দেখা হয় অশ্বিনীর। নাম কিশোর গোপারডিকর। কিশোরকে বিয়ে করেন অশ্বিনী। বিয়ের পর ভারত ছেড়ে আমেরিকা চলে যান নায়িকা।
যদিও তখনও ‘বন্ধন’ ছবির কাজ শেষ হয়নি। দেশে মাঝেমধ্যেই ফিরে এসে কাজ শেষ করেন অশ্বিনী। ছবিটি শেষ হতে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। অনেকেই বলেন, ওই ছবিই কাল হয়েছিল অশ্বিনীর জীবনে। ওই ছবির জন্য হাতছাড়া হয়েছিল অনেক বড় ছবির প্রস্তাব।
আমেরিকা থেকে মাঝেমধ্যে ফিরে এসে বেশ কিছু ছবিতে সই করেছিলেন অশ্বিনী। যদিও সেগুলি দিনের আলো দেখেনি। এর পর অভিনয় ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে আমেরিকায় থিতু হন। দুই সন্তান রয়েছে তাঁর।
১৯৯৯ সালের পর আর তেমন ছবিতে অভিনয় করেননি অশ্বিনী। ২০০৭ সালে প্রযোজক হয়ে দেশে ফেরেন। ‘কদাচিৎ’ বলে একটি ছবি তৈরি করেন। নিজে তাতে অভিনয়ও করেন। যদিও ছবিটি চলেনি।
২০১৪ সালে একটি ছবি মুক্তি পায় অশ্বিনীর। তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে সলমন ছবির প্রচার করে টুইটও করেন। তাতেও লাভ হয়নি।
আমেরিকায় থাকাকালীন বেশ কিছু ছবির কোর্স করেন নায়িকা। ওটিটিতে ‘২৪’ সিরিজে অনিলের স্ত্রীর চরিত্রের জন্য অডিশন দেন। তাতেও সফল হননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তিসকা চোপড়া ওই চরিত্রে অভিনয় করেন।
অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘ দিন সলমনের ছবি ‘বন্ধন’-এ অভিনয় করাই কাল হয় অশ্বিনীর। ওই ছবির জন্য বহু ছবি ফিরিয়েছিলেন তিনি। অনেকে আবার বলেন, মাধুরীর সঙ্গে মুখের মিলই তাঁকে সফল হতে দিল না। শুরুটা ভাল হলেও শেষটা আকস্মিক নেমে এসেছে নায়িকার কেরিয়ারে।