দেড়শো বছর ধরে নানা গবেষণাপত্রে ঘুরেফিরে এসেছে ইজ়রায়েলের এক প্রাচীন গুহার কথা। সত্তরের দশকে ওই গুহার ভিতরে নানা অলিগলির সন্ধানও মিলেছিল। কী রয়েছে সে গুহার গহীনে? কেন সেটি নিয়ে গবেষকদের এত কৌতূহল?
সাম্প্রতিক এক খননকাজে ইজ়রায়েলের পশ্চিম জেরুসালেমে তেওমিম গুহার ‘অন্দরের কথা’ জানতে পেরেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। মিলেছে মাথার খুলি, মাটির প্রদীপ থেকে অজস্র অস্ত্রশস্ত্র। গবেষকদের একাংশের মতে, হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ওই গুহাকে ‘নরকের দ্বার’ মনে করা হত।
তেওমিম গুহা থেকে উদ্ধার নানা নিদর্শন থেকে এটাও নাকি প্রমাণিত হয় যে, প্রায় দু’হাজার বছর আগে গুহায় বসেই চলত জাদুবিদ্যার অনুশীলন। ‘কালাজাদু’র মাধ্যমে ‘দুষ্ট’ আত্মার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলত।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইজ়রায়েলের ওই গুহার বয়স খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ বছর থেকে চতুর্থ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এ গুহার কথা প্রথম নজরে এসেছিল ১৮৭৩ সালে। তার পর থেকে গত দেড়শো বছর ধরেই গবেষকদের আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে এটি।
কয়েক দশক ধরে আলোচ্য হলেও গত ২০০৯ সাল থেকে এ গুহায় খননকাজ শুরু হয়েছিল। বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন ডিপার্টমেন্ট অফ ল্যান্ড অ্যান্ড ইজ়রায়েল স্টাডিজ়-এর সঙ্গে ওই খননকাজে নেমেছিলেন জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেভ রিসার্চ সেন্টারের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
তেওমিম গুহার গোপন খাঁজ থেকে মিলেছে তিনটি মাথার খুলি, ১২০টি মাটির প্রদীপ, কারুকাজ করা পাত্র, কুড়ুলের মাথা, মুদ্রা এবং অজস্র অস্ত্রশস্ত্র। সংবাদমাধ্যম সূত্রে এমনই খবর।
উদ্ধার হওয়া তিনটি খুলি-সহ এ সব নির্দশন নাকি ‘আত্মা’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টায় কাজে লাগানো হত। গবেষকদের দাবি, গুহায় নরমুণ্ডের উপস্থিতি সেটি প্রমাণ করে। ‘কালাজাদু’ রপ্ত করার চেষ্টাও করতেন এককালে ওই জায়গার স্থানীয়েরা।
জেরুসালেম থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইজ়রায়েলি শহর বেইতের ওই গুহা নিয়ে দেশ-বিদেশের নানা সংবাদমাধ্যমে ইদানীং তোলপাড় হচ্ছে। গবেষকদের দাবি কি সত্য? সত্যিই কি এই গুহাকে ‘নরকের দ্বার’ বলে মনে করা হত?
ইজ়রায়েলের পুরাকীর্তি সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ তথা বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আইটান ক্লাইন এ নিয়ে ‘হার্ভার্ড থিওলজিক্যাল রিভিউ’-তে লিখেছেন, ‘‘জেরুসালেমের পাহাড়ের তেওমিম গুহায় এমন সব প্রমাণ মিলেছে যাতে একে সম্ভাব্য নরকের দ্বার বলা যেতে পারে।’’
অনেকের মতে, গুহার ভিতর দিয়ে একসময় জলধারা বয়ে যেত। যে জলের স্পর্শে বহু জনের রোগবালাই বিদায় নিত।
গুহার ভিতরের একাধিক গোপন কক্ষে যাওয়ার জন্য অসংখ্য গোপন পথের সন্ধান মিলেছিল সেই সত্তরের দশকে। ইজ়রায়েলি গবেষকেরা জানিয়েছেন, গুহার অন্দরে বহু সঙ্কীর্ণ খাঁজ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির মধ্যে মুদ্রা, মৃৎপাত্র, অস্ত্রশস্ত্রগুলি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
গুহা থেকে উদ্ধার নিদর্শন নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী হয়নি। তবে গবেষকেরা এখান থেকে এমন একটি মাথার খুলি এবং চারটি প্রদীপ পেয়েছেন যা রোম সাম্রাজ্যের সময়কালের বলে দাবি।
খুলি-সহ ওই প্রদীপগুলি নাকি এমন এক খাঁজে লুকোনো ছিল, যা বার করে আনতে বেগ পেতে হয়েছে গবেষকদের। তবে তাঁদের দাবি, ‘দুষ্ট আত্মা’ তাড়াতে এগুলি কাজে লাগানো হত।
গুহার দেওয়ালে প্রাচীন লেখচিত্রও দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, ওই লেখচিত্রগুলি রোমান এবং গ্রিক সময়কালের।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘ডেইলি স্টার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, লেখচিত্রগুলি পরীক্ষার পর গবেষকদের ধারণা, প্রদীপের শিখার নাচনকে আত্মার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় হিসাবে মনে করা হত।
মাথার খুলিগুলিতে ফাটলের চিহ্ন দেখে গবেষকেরা মনে করছেন যে সেগুলি বিশেষ জাদুবিদ্যা রপ্ত করার চেষ্টায় কাজে লাগানো হয়েছিল।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘‘তেওমিম গুহায় একশোর বেশি মাটির প্রদীপ উদ্ধার হলেও এখনও পর্যন্ত মোটে তিনটে নরমুণ্ড উদ্ধার হয়েছে। আমাদের ধারণা, নানা আচার-অনুষ্ঠানে অশুভ শক্তিকে জাগৃত করা এবং ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে প্রদীপগুলিকে ব্যবহার করা হত।’’