ঘরভাড়া নিয়েছিলেন এক রাতের জন্য। আর তার উপর ভর করে হোটেলে কাটিয়ে দিয়েছিলেন প্রায় দু’বছর। অভিযোগ, এত দিন ধরে হোটেলে থেকে বিলবাবদ এক টাকাও মেটাননি। এর পর হঠাৎই তিনি ওই হোটেল থেকে ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছেন। সেই অতিথির কীর্তির কথা প্রকাশ্যে আসতেই তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন দিল্লির ওই বিলাসবহুল হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ।
অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম অঙ্কুশ দত্ত। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় সম্প্রতি এফআইআর করেছেন রাজধানীর অ্যারোসিটি এলাকার বিলাসবহুল ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ।
তার পর থেকেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে কীর্তিমান অতিথির পরিচয় নিয়ে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অঙ্কুশ এক জন বাঙালি। তাঁর বাড়ি অসমে।
নয়াদিল্লির ওই বিলাসবহুল হোটেলে মোট ৬০৩ দিন কাটিয়েছিলেন অঙ্কুশ। বিল করেছিলেন ৫৮ লক্ষ টাকা।
তদন্তে উঠে এসেছে, অঙ্কুশের সঙ্গে প্রেমপ্রকাশ নামে ওই হোটেলের এক কর্মীর গোপন আঁতাঁত ছিল। তাঁর সাহায্যেই তিনি অত দিন বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অঙ্কুশের জালিয়াতির নেপথ্যে বড় হাত ছিল প্রেমেরও। পুলিশ সূত্রে খবর, হোটেলের একটি বড় পদে কর্মরত ছিলেন প্রেম। তিনি ছিলেন ফ্রন্ট অফিসের প্রধান।
হোটেলের যাবতীয় তথ্যপঞ্জির দায়িত্বে ছিলেন প্রেম। সেখানেই থাকত অতিথিদের ঘরভাড়া-সহ বিভিন্ন পরিষেবার খতিয়ান। অভিযোগ, অঙ্কুশের হয়ে হোটেলের কম্পিউটার সিস্টেমে হেরফের করতেন তিনি।
এমনকি অভিযোগ উঠেছে, অন্য অতিথিদের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে এমন কারচুপি করা হয়েছে, যাতে মনে হয় অঙ্কুশের থাকাখাওয়ার বিল তাঁরা মেটাচ্ছেন। অঙ্কুশের সঙ্গে প্রেম-সহ কয়েক জন হোটেলকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে অঙ্কুশের কারচুপিতে কেন প্রেম হাত মিলিয়েছিলেন, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
মনে করা হচ্ছে, টাকার লোভ দেখিয়ে প্রেমকে হাত করেছিলেন অভিযুক্ত অঙ্কুশ। তাঁকে আটক করার পর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারী আধিকারিকেরা এ-ও অনুমান করছেন, শুধু প্রেম নয়, বড় বড় শহরের এ রকম বহু হোটেলের উচ্চপদস্থ কর্মীদের হাতে রেখেছিলেন অঙ্কুশ।
পুলিশের এক তদন্তকারী আধিকারিকের কথায়, “বেশির ভাগ বিলাসবহুল হোটেলের নিয়ম, কোনও অতিথি ৫০ হাজার টাকার বেশি বকেয়া বিল রাখতে পারেন না। যদিও অঙ্কুশের ক্ষেত্রে তেমনটা করা হয়নি। আর এর নেপথ্যে প্রকাশের হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।’’
এফআইআর অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ এক রাতের জন্য হোটেলে উঠেছিলেন অঙ্কুশ। পরের দিন হোটেল ছাড়ার কথা থাকলেও তার মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন তিনি।
তার পর থেকে তিনি বার বার একই কাজ করে গিয়েছেন। শেষমেশ ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত হোটেলে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। অভিযোগ, এত দিন ধরে হোটেলের থাকার ভাড়া হিসাবে ৫৮ লক্ষ টাকা বিল হয়েছিল।
তবে সেই বিলের এক পয়সাও না মিটিয়েই গায়েব হয়ে যান অঙ্কুশ।