উত্তর আমেরিকার একেবারে দক্ষিণের যে অংশ সরু হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দিকে এগিয়েছে, সেই দেশের নাম মেক্সিকো। এই দেশের এক দিকে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর, অন্য দিকে অতলান্তিকের উত্তাল জলরাশি।
ভৌগোলিক কারণেই আমেরিকা মহাদেশের এই দেশটিকে ঘিরে নিরাপত্তাজনিত তৎপরতা থাকে তুঙ্গে। পশ্চিম এবং পূর্ব, উভয় উপকূল থেকেই শত্রুর আক্রমণের আশঙ্কা। উপকূলঘেঁষা এলাকায় জনবসতিও অপেক্ষাকৃত কম।
মেক্সিকো প্রায়ই আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে উঠে আসে অন্য কারণে। এখানকার আকাশে নাকি মাঝেমধ্যেই ভিন্গ্রহীদের বাহনের দেখা মেলে। তাকে কেন্দ্র করে ডালপালা মেলে নানা গুজবও।
অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু (আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট বা ইউএফও) নিয়ে পৃথিবীতে চর্চা দীর্ঘ দিনের। বিজ্ঞানীরা নানা সময়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে পাওয়া ইউএফও এবং সেই সংক্রান্ত গুজব ঘেঁটে দেখেছেন।
আমেরিকার উপকূলে, বিশেষত মেক্সিকোয় ঘন ঘন উড়ন্ত চাকি দেখতে পাওয়ার অবশ্য অন্য ব্যাখ্যা আছে। অনেকে বলেন, চিন বা অন্য কোনও শত্রু দেশ নজরদারির উদ্দেশ্যে ওই ধরনের উড়ন্ত বস্তু আমেরিকার আকাশে পাঠিয়ে থাকে। যাকে ইউএফও বলে ভুল করেন মানুষ।
কিন্তু সম্প্রতি মেক্সিকোর আইনসভার (কংগ্রেস) একটি অধিবেশনের সরাসরি সম্প্রচার তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সেখানে ‘ভিন্গ্রহীদের মৃতদেহ’ দেখানো হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন মেক্সিকান সংবাদমাধ্যমে।
মোট দু’টি প্রাণীর দেহ দেখানো হয়েছে মেক্সিকান কংগ্রেসে। তাদের হাতে তিনটি করে আঙুল রয়েছে। এই দেহগুলি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণাগারে সেগুলি নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
মেক্সিকোর ইউএফও বিশেষজ্ঞ তথা সাংবাদিক জেমি মসান জানিয়েছেন, ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অফ মেক্সিকোতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে আকর্ষণীয় এবং বিস্ময়কর কিছু তথ্য মিলেছে।
জেমির দাবি, ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গিয়েছে এই মৃতদেহগুলি অন্তত এক হাজার বছরের পুরনো। পেরুর কুসকো শহর থেকে এগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। পৃথিবীর কোনও প্রাণীর সঙ্গে এদের ডিএনএ নমুনা মেলাতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।
মসান জানিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে দাবি, এই প্রাণীদের দৈহিক গঠনের অন্তত ৩০ শতাংশ বিজ্ঞানীদের অচেনা। পৃথিবীর কোনও প্রাণীর শরীরে সেই নমুনা নেই।
এমনকি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই প্রাণীগুলির স্তর থেকে বিবর্তনের মাধ্যমেও বর্তমানের কোনও প্রাণী তৈরি হয়নি। অর্থাৎ, পৃথিবীতে আগে এমন প্রাণী ছিল, এখন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
দেহগুলির এক্স রে করে আরও আকর্ষণীয় একটি তথ্য মিলেছে। একটি দেহের ভিতরে ‘ডিম’ জাতীয় বস্তুর সন্ধান মিলেছে। সেই ডিম এবং হাড়গোড় অত্যন্ত বিরল পদার্থ দিয়ে তৈরি। তার মধ্যে রয়েছে অসমিয়ামও।
একাধিক তথ্যই ইঙ্গিত করছে, মেক্সিকোর কংগ্রেসে দেখানো দুই সংরক্ষিত ‘লাশ’ ভিন্গ্রহীদের হলেও হতে পারে। কারণ, পৃথিবীতে কোথাও তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি।
মেক্সিকোয় এত দিন পর্যন্ত যা কিছু অশনাক্ত থেকেছে, যে যে ঘটনার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি, কংগ্রেসে সেই সংক্রান্ত একাধিক ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছিল। তার মাঝেই এই দুই প্রাণীর মৃতদেহ তুলে ধরা হয়।
যদিও ইউএফও বিশেষজ্ঞ মসানের দাবিকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজ্ঞানীদের একাংশ। ভিন্গ্রহীদের সম্বন্ধে এর আগেও তিনি একাধিক ‘ভুয়ো’ খবর রটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
তবে মেক্সিকোর আইনসভার অধিবেশনের সরাসরি সম্প্রচারে তথ্যপ্রমাণ-সহ এমন দাবি বিশ্ববাসীকে ধন্দে ফেলেছে। অনেকেই বিশ্বাস করছেন, ইউএফও-তে চড়ে পৃথিবীর মাটিতে সুদূর অতীতে কখনও নেমে এসেছিল ভিন্গ্রহীরা।