প্যারিস অলিম্পিক্সে মহিলাদের কুস্তিতে ৫০ কেজি বিভাগের ফাইনালে লড়তে পারেননি বিনেশ ফোগাট। ওজন বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
মঙ্গলবার ফাইনালে ওঠার পথে গত বারের সোনাজয়ী ইউ সুসাকিকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছিলেন বিনেশ। পরের ম্যাচে ইউক্রেনের ওকসানা লিভাচকে ৭-৫ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। সেমিফাইনালে কিউবার গুজ়মান লোপেজ়কে হারিয়েছিলেন বিনেশ।
কিন্তু বুধবার ফাইনালের দিন সকালে যখন তাঁর ওজন মাপা হয়, তখন দেখা যায় তাঁর ওজন ৫০ কেজির থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম বেশি। এর পরেই বিনেশকে প্রতিযোগিতা থেকেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ওজন কমানোর বহু চেষ্টা করেও সফল হননি তিনি। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে, নড়ে গিয়েছে রাজনীতির অলিন্দও।
অলিম্পিক্স ফাইনালে না খেলতে পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছে বিনেশকে। ইতিমধ্যেই অবসর ঘোষণা করেছেন ভারতীয় কুস্তিগির।
এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি লেখেন, “মা, কুস্তির কাছে আমি হেরে গেলাম। আমাকে ক্ষমা কোরো। তোমার স্বপ্ন, আমার সাহস সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আর শক্তি বাকি নেই। কুস্তি, তোমায় বিদায়। ২০০১-২০২৪। সব সময় তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকব। ক্ষমা করে দিয়ো।”
এই কঠিন সময়ে বিনেশের পরিবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়েছেন স্বামী সোমবীর রাঠী।
বিনেশের স্বামী সোমবীরও পদকজয়ী কুস্তিগির। প্রেম করে বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের প্রেমকাহিনি হার মানাবে বলিউড সিনেমাকেও।
হরিয়ানার সোমবীর জাতীয় স্তরের কুস্তিগির। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দু’টি সোনা জিতেছেন তিনি।
সোমবীর এবং বিনেশ দু’জনেই খেলাধুলোর সুবাদে চাকরি করতেন ভারতীয় রেলে। একই জায়গায় কর্তব্যরত ছিলেন তাঁরা। সেখানেই দু’জনের প্রেম। কুস্তির প্রতি ভালবাসা তাঁদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।
২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসের সময় নিজেদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনেন যুগল। নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে নাটকীয় ভঙ্গিমায় বিনেশকে বিয়ের প্রস্তাব দেন সোমবীর।
জাকার্তা এশিয়ান গেমস ২০১৮-য় জাপানের ইউকি আইরিকে পরাজিত করে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন বিনেশ। ফেরার সময় তাঁর বিমান নয়াদিল্লিতে অবতরণ করে। সেখানেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সোমবীর।
বিনেশ বিমানবন্দরের বাইরে এসে দেখেন তাঁর জন্য ফুলের তোড়া হাতে দাঁড়িয়ে সোমবীর। মুখে একগাল হাসি। বিনেশকে দেখেই এগিয়ে আসেন। সকলকে চমকে দিয়ে বিমানবন্দরের বাইরের বিনেশকে বিয়ের প্রস্তাব দেন সোমবীর। চোখে জল নিয়ে প্রস্তাবে সায় দেন বিনেশও।
২০১৮ সালের অগস্টেই বাগ্দান সারেন দম্পতি। ওই বছরেরই ডিসেম্বরে পরিণতি পায় তাঁদের প্রেম। বিয়ে করেন বিনেশ এবং সোমবীর।
হরিয়ানায় চরখি দাদরিতে বসেছিল দুই কুস্তিগিরের বিয়ের আসর। বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ছোট একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আট পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা। উল্লেখ্য, কুস্তিগির যুগল সাত পাকের বদলে বিয়েতে আট পাকে বাঁধা পড়়েছিলেন। আট নম্বর পাকে তাঁরা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়ও, বেটি খেলো’— এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যম ‘অমর উজালা’র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিয়ের আচার ও অনুষ্ঠানের জন্য বিনেশ এবং সোমবীর তাঁদের পরিবারকে শুধুমাত্র এক টাকা খরচ করতে বলেছিলেন। বিয়েতে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয়ে বিশ্বাসী ছিলেন না দু’জনেই।
বিনেশের বিয়েতে তাঁর জ্যাঠতুতো দিদি তথা কুস্তিগির গীতা এবং ববিতা ফোগাটও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ভিনেশের বোন রিতু ফোগাটও। তিনিও এক জন কুস্তিগির।