কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র পরিচিত বলিউডের ‘হিম্যান’ হিসাবে। ছয় দশকের কেরিয়ারে ৩০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন ৮৭ বছর বয়সি এই অভিনেতা। ধর্মেন্দ্রের পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই বলিউডের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তবে জানা আছে কি ধর্মেন্দ্রের এমন এক জন ভাই ছিলেন, যিনি খোদ ধর্মেন্দ্রর নাম পেয়েছিলেন। তিনি পরিচিত ছিলেন ‘পঞ্জাবের ধর্মেন্দ্র’ নামে।
ধর্মেন্দ্রর সেই খুড়তুতো ভাইয়ের নাম ছিল বীরেন্দ্র সিংহ দেওল। তবে এটা ছিল তাঁর সিনেমার নাম। তাঁর আসল নাম ছিল সুভাষ ধাদওয়াল।
ছোট থেকেই অভিনয় করতে ভালবাসতেন বীরেন্দ্র। পঞ্জাবি সিনেমার দক্ষ অভিনেতা হিসাবে পরিচিতিও পেয়েছিলেন।
অভিনয়ের নেশায় এমনই বুঁদ ছিলেন যে, জঙ্গিদের হুমকি উপেক্ষা করেই অভিনয় করতে গিয়েছিলেন। শুটিংয়ের সেটেই গুলি চালিয়ে খুন করা হয় তাঁকে।
১৯৪৮ সালে পঞ্জাবের ফাগোয়ারায় বীরেন্দ্রের জন্ম। তিনি বয়সে দাদা ধর্মেন্দ্রের থেকে প্রায় ১৩ বছরের ছোট ছিলেন।
বীরেন্দ্র অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি এক জন পরিচালক, প্রযোজক এবং লেখকও ছিলেন। ১২ বছরের কেরিয়ারে প্রায় ৪০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বীরেন্দ্র। বেশ কয়েকটি ছবি পরিচালনাও করেছিলেন। বীরেন্দ্র একটি হিন্দি ছবিও পরিচালনা করেছিলেন। সেই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গোবিন্দ।
১৯৭৫ সালে পঞ্জাবি ছবি ‘তেরি মেরি এক জিন্দরি’-র মাধ্যমে বীরেন্দ্র অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। সেই ছবিতে বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্রও। ১৯৮০-র দশকে পঞ্জাবি সিনেমা জগতে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন বীরেন্দ্র।
বীরেন্দ্রর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ছবির মধ্যে অন্যতম ছিল ‘লম্ভারদারনি’, ‘বলবীরো ভাবী’ এবং ‘দুশমনি দি আগ’। এর মধ্যে ‘দুশমনি দি আগ’ ছবি তাঁর মৃত্যুর পর মুক্তি পেয়েছিল।
বীরেন্দ্রর হাবভাব, পোশাকআশাক সবই ছিল দাদা ধর্মেন্দ্রর মতো। তাঁকে দেখতেও অনেকটা ধর্মেন্দ্রর মতোই ছিল। তাই তিনি পরিচিত ছিলেন ‘পঞ্জাবের ধর্মেন্দ্র’ নামে।
১৯৮৮ সালের ঘটনা। বীরেন্দ্র একটি ছবিতে কাজ করছিলেন। ছবির নাম ছিল ‘জট তে জমিন’। সেই সময় পঞ্জাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছিল।
পঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদীরা হুমকি দিয়েছিল, সিনেমার শুটিং করা যাবে না। ছবির কলাকুশলীদের বাড়ির বাইরে পা না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও বীরেন্দ্র শুটিংয়ের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বীরেন্দ্রের মত ছিল, মৃত্যু যখন খুশি আসতে পারে। তাই মৃত্যু নিয়ে আতঙ্কিত হলে চলবে না। তিনি যদি অভিনয় করতে করতে মারা যান, তা হলে সেটা তাঁর পরম সৌভাগ্য হবে বলেও তিনি মনে করতেন।
সেই কারণেই জঙ্গিদের হুমকি উপেক্ষা করে ছবির শুটিংয়ে যান বীরেন্দ্র। ১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ছবির সেটেই তাঁকে গুলি করে খুন করে কয়েক জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। তবে তাঁকে কে বা কারা খুন করেছিলেন, সে রহস্যের এখনও পর্যন্ত সমাধান হয়নি।
অনেকে আবার মনে করেন, বীরেন্দ্র অভিনয় জগতে সফল হতে শুরু করেছিলেন। তাঁর সাফল্য অনেকের কাছেই নাকি চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। তাই তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করে দোষ চাপানো হয় সন্ত্রাসবাদীদের নামে।
বীরেন্দ্রর মৃত্যু পঞ্জাবি ছবির জগতে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। ভাইকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন ধর্মেন্দ্রও।