পাহাড়প্রেমীদের অন্যতম প্রিয় শৈলশহর শিমলা। হিমালয়ের বাঁকে, পাহাড়ের কোলে রয়েছে ছবির মতো সুন্দর বহু বাংলো। কিন্তু সূর্য ডুবলেই যে শিমলার এক বিলাসবহুল বাংলোয় ‘প্রেতের’ আনাগোনা শুরু হয় তা জানেন কি?
শিমলায় ‘দুখানি’ নামে একটি বাংলো রয়েছে। ভারত যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে তখন দুখানির মালিক ছিলেন বাকি নামে এক বৃদ্ধ। দিল্লির বাসিন্দা হলেও মাঝেমধ্যে শিমলায় গিয়ে ওই বাংলোয় থাকতেন তিনি।
স্থানীয়দের দাবি, মাঝেমধ্যে সপ্তাহান্তে শিমলার বাংলোয় পার্টির আয়োজন করতেন বাকি। সেই পার্টিতে অধিকাংশ সময় উপস্থিত থাকেন জন স্মিথ নামে এক বিদেশি। কর্মসূত্রে বাকি এবং জনের পরিচয় হলেও তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল অটুট।
সহকর্মী এবং বন্ধু বাকির বাংলোয় সপ্তাহান্তের পার্টিতে সস্ত্রীক হাজির থাকতেন জন। পার্টি থেকে ফিরতে দেরি হওয়ার কারণে এক বার সেই বাংলোয় রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন জন এবং তাঁর স্ত্রী।
স্থানীয়দের দাবি, জনের স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জন ছিলেন বাকির ঘরে। বাংলোর সবচেয়ে পুরনো ঘরটিতে থাকতেন বাকি।
ঘুমোনোর সময় নাক ডাকার অভ্যাস ছিল বাকির। সেই আওয়াজে ঘুম আসতে দেরি হচ্ছিল জনের। বহু ক্ষণ পর জন ঘুমিয়ে পড়লেও কিছু ক্ষণ পর জোর হাওয়ার শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়।
স্থানীয়দের দাবি, ঘুম ভাঙার পর জন দেখেন, জোর হাওয়ায় ঘরের জানলা খুলে গিয়েছে। ক্লান্ত ছিলেন বলে আর জানলা আটকাতে যাননি তিনি। কিন্তু জানলা থেকে চোখ সরাতেই থেমে গেলেন জন।
স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, জানলার কাছে ড্রেসিং গাউন পরিহিত এক ছায়ামূর্তি দেখতে পান জন। ঘুমচোখে তাঁর মনে হয়েছিল, জানলার সামনে বাকি-ই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বাকিকেই ছায়ামূর্তি ভেবে ভুল করছেন তিনি।
বাকিকে জানলাটি লাগিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জন। কিন্তু জনের কানে হঠাৎ অন্য আওয়াজ ভেসে আসে। তা শুনে চমকে ওঠেন জন।
জনের কানে ভেসে আসে বাকির নাক ডাকার শব্দ। পাশে তাকিয়ে জন দেখেন, বাকি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন। তবে জানলার সামনে কে দাঁড়িয়ে রয়েছেন?
জানলার দিকে ধীর পায়ে হেঁটে যান জন। ঘরের মধ্যে মাঝরাতে কে প্রবেশ করেছেন তা ভাল করে দেখার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ছায়ামূর্তির কাছাকাছি পৌঁছতেই নাকি আচমকা তা খোলা জানলা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে অন্ধকারে মিশে যায়।
কৌতূহলের বশে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে খোঁজ করতে শুরু করেন জন। কিন্তু কাউকে দেখতে পাননি তিনি। ভোর হতেই বাকিকে এই ঘটনার কথা জানান জন। এমনকি সেখানকার স্থানীয়দের কাছেও খোঁজখবর করতে শুরু করেন তিনি।
জনের মুখে ঘটনার সমস্ত বিবরণ শুনে সেখানকার এক স্থানীয় জানান, ‘দুখানি’ বাংলোয় বহু বছর আগে এক বৃদ্ধ বাস করতেন। ব্রিটেন থেকে শিমলায় এসেছিলেন তিনি। বাকি যে ঘরে থাকেন, সেই ঘরেই নাকি ৪০ বছর আগে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ।
স্থানীয়দের দাবি, আত্মহত্যা করার সময় ড্রেসিং গাউন পরেছিলেন বৃদ্ধ। রাতের অন্ধকারে ওই বৃদ্ধের ‘প্রেতাত্মা’ই নাকি সারা বাংলো টহল দিয়ে বেড়ায়।
এখনও বাংলোর সামনে দিয়ে সন্ধ্যার পর হেঁটে গেলে নাকি অপশক্তির উপস্থিতি টের পান স্থানীয়েরা। বাংলোর ভিতর থেকে কেউ তাঁদের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছেন বলেও মনে হয় স্থানীয়দের।
শিমলার ‘ভূতুড়ে’ বাড়ি হিসাবেই পরিচিত হয়ে গিয়েছে দুখানি বাংলো। সন্ধ্যার পর এই বাংলোয় বৃদ্ধের ‘প্রেতাত্মা’ ঘুরে বেড়ায় বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। তবে অনেকের দাবি এ সবই তাঁদের মনগড়া কাহিনি।