২০০১ সালের জানুয়ারি মাস। শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে গুজরাত। যার কেন্দ্রস্থল ছিল ভুজ শহর। সেই মারাত্মক ভূকম্পনে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ মারা যান। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে একের পর এক বাড়ি। রাতারাতি ‘মৃতের শহরে’ পরিণত হয় ভুজ।
এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়া মানুষদের শরীর এবং মনে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, তা আর আলাদা করে বলতে হয় না।
তবে গুজরাত থেমে যায়নি। নিজেদের পরিস্থিতি বদলানোর লক্ষ্যে উঠে দাঁড়িয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের প্রকোপ থেকে নিজেদের ধীরে ধীরে বার করে এনেছে ভুজবাসী।
২০২২ সালের অগস্টে গুজরাতে ভারতের বৃহত্তম স্মৃতিসৌধ এবং জাদুঘর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে গুজরাতের ভূমিকম্পে প্রাণহারাদের স্মৃতির উদ্দেশে।
গুজরাত এমন একটি রাজ্য, যেখানে চাষাবাদের জমি এবং মরুভূমি উভয়ই রয়েছে। সেই মরুভূমির একাংশ রয়েছে ভুজে।
ভুজের ডুঙ্গারের মরুভূমিতেই ‘স্মৃতিবন (স্মৃতির বন)’ নামে ওই স্মৃতিসৌধ এবং জাদুঘর তৈরি করেছে সরকার। একদা যেখানে মরুভূমি ছিল, সেখানেই এখন তৈরি হয়েছে বিশাল বন।
‘স্মৃতিবন’-এর নকশা তৈরি করেছে ‘বাস্তু শিল্প সংগঠ স্টুডিয়ো’। মূল ভাবনা বালকৃষ্ণ দোশীর।
‘স্মৃতিবন’ স্মৃতিসৌধ এবং জাদুঘর চত্বরটি ১৯০ হেক্টরেরও বেশি এলাকা জুড়ে তৈরি।
জাপানের উদ্ভিদবিজ্ঞানী তথা উদ্ভিদ বাস্তুবিদ্যা বিশেষজ্ঞ তথা বন বিশেষজ্ঞ আকিরা মিয়াওয়াকির তৈরি মডেল অনুযায়ী খটখটে ওই মরুভূমি তৈরি হয়েছে সবুজ বনাঞ্চলে।
আকিরা মিয়াওয়াকির মডেল অনুযায়ী ওই বনে তিন হাজার গাছপালা রয়েছে। ওই বন বর্তমানে রুক্ষ ভুজ শহরের ‘ফুসফুস’ হিসাবেও কাজ করে।
জাদুঘর এবং স্মৃতিসৌধটি ১.১ মেগাওয়াটের ‘সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট’ দ্বারা চালিত।
‘স্মৃতিবন’ চত্বরে ৫০টি পুকুর রয়েছে। যার উপর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের ফলক তৈরি করা হয়েছে।
‘স্মৃতিবন’-এর জাদুঘরটি ১১,৫০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে তৈরি। এখানে সাতটি আলাদা আলাদা ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক সুড়ঙ্গ রয়েছে। বেশির ভাগ কক্ষে বিদেশি আলো ব্যবহার করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারেও রয়েছে বিশেষ আলোকসজ্জা।
এ ছাড়াও ওই জাদুঘরে রয়েছে অনেক ভাস্কর্য। ‘স্মৃতিবন’ জাদুঘরে যে সাতটি কক্ষ রয়েছে সেগুলির নাম রিবার্থ, রিডিসকভার, রিস্টোর, রিবিল্ড, রিথিঙ্ক, রিলিভ এবং রিনিউ।
সোমবার বাদে প্রতি দিনই পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে স্মৃতিবন।