‘কান্তারা’— দক্ষিণী এই সিনেমা নিয়ে চর্চা চলছে দেশ জুড়ে। সেই সঙ্গে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছেন এই ছবির নায়ক ঋষভ শেট্টি।
শুধু মুখ্যচরিত্রেই অভিনয় করেননি ঋষভ। একই সঙ্গে এই ছবির গল্পকার এবং পরিচালক ছিলেন ঋষভ।
তবে, ঋষভের কাহিনি অন্য রকম। ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু স্কুলে পড়াকালীন নাটকে অভিনয় করে তাঁর স্বপ্ন বদলে যায়। ঋষভের চোখের সামনে তখন শুধু ক্যামেরা আর বড় পর্দা।
স্বপ্নের পথে যেন কোনও বাধা না আসে, তার জন্য নিজের নামও বদলে ফেলেছিলেন তিনি। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল প্রশান্ত। কর্নাটকের কেরাড়ি গ্রামে তাঁর জন্ম।
সেই গ্রামেই প়ড়াশোনা করেছিলেন তিনি। খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল বরাবর। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন স্কুলে একটি নাটকের আয়োজন করা হয়। সেই নাটকেই প্রথম অভিনয় করেছিলেন তিনি।
খেলা ছেড়ে তাঁর আগ্রহ জন্মায় অভিনয়ের দিকে। স্কুলের নাটকের দলের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে যান তিনি। সেই সূত্রে, বহু নাটকে অভিনয় করেছেন প্রশান্ত।
কিন্তু স্কুলের অন্য ছাত্ররা তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করত যার ফলে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতেন তিনি। বয়স আন্দাজে অনেক রোগা ছিলেন প্রশান্ত। তাকে নিয়ে প্রকাশ্যে হাসাহাসি করত স্কুলের ছাত্ররা। এই পরিবেশ তাঁর জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছিল।
তাই তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন। বিজয়া কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হন প্রশান্ত।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি রোজগারের পথ খুঁজতে থাকেন। হোটেলকর্মী হিসাবে কাজ করেন কিছু দিন। তার পর একটি রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন।
কিন্তু স্থায়ী চাকরির বদলে ব্যবসার দিকে মন ঝুঁকতে শুরু করে প্রশান্তের। এক বন্ধুর সঙ্গে জলের ক্যান সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
হঠাৎ তাঁদের কাছে প্রস্তাব আসে একটি কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জল সরবরাহ করার। খোঁজ নিতে তিনি জানতে পারেন, সেখানে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন হচ্ছে।
এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাননি প্রশান্ত। সে দিনই ওই কলেজে ভর্তি হয়ে যান তিনি। সেই সূত্রে তাঁর পরিচয় হয় কন্নড় অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে।
প্রশান্ত বহু তারকাকে সাক্ষাৎকারে বলতে শুনেছেন, কেরিয়ারের প্রথমে তাঁরা সকলেই সহ-পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন। তার পর অভিনয়জগতে পা রাখেন তাঁরা। তাই প্রশান্তও সেই পথেই হাঁটতে চেয়েছিলেন।
এক খ্যাতনামী পরিচালকের সহকারী হিসাবে কাজ করার সুযোগও পান। তাঁর সঙ্গে ওই ফিল্মে আরও অনেকে সহ-পরিচালনার কাজ করছিলেন।
কিন্তু শুটিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিন পর বাকি সকলেই কাজ ছেড়ে চলে যান। একমাত্র প্রশান্তই টিকে থাকেন। সেই ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগও পান তিনি।
এর পর বহু ছবিতে সহ-পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন প্রশান্ত। কিন্তু তাঁর মন ছিল অভিনয়ের দিকে। প্রচুর জায়গায় অডিশনও দিয়েছিলেন তিনি। অভিনেতাকে সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অডিশনের কিছু দিন পরেই ছবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে। কিন্তু কোনও ছবির ঘোষণাই করেননি নির্মাতারা।
২০০৮ সালে নিজে থেকেই সিনেমার জন্য গল্প লিখতে শুরু করেন প্রশান্ত। ছবি নির্মাতাদের কাছে স্ক্রিপ্ট নিয়ে যাওয়ার পর সকলেই তাঁকে ফিরিয়ে দিতেন।
সবই ভাগ্যের দোষ— এই ভেবে গণনাকারীর কাছে গিয়ে নিজের নাম বদলে ফেলেন তিনি। নাম বদলে রাখেন ঋষভ। এই নামই তাঁর ভাগ্য ফিরিয়ে আনবে, কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন, এই আশায় ‘প্রশান্ত’ নামকে চিরতরে বিদায় জানালেন তিনি।
ছোট পর্দায় কাজ করা শুরু করলেন ঋষভ। দিনপিছু ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন তিনি। তখন তাঁর আলাপ হয় রক্ষিত শেট্টির সঙ্গে। কন্নড় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা এবং ছবি নির্মাতা ছিলেন রক্ষিত। একটি ছবি ফ্লপ করায় খুব ভেঙে পড়েছিলেন রক্ষিত। সেই সময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান ঋষভ।
ঋষভ এবং রক্ষিতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এত দৃঢ় যে তাঁদের দেখে অনেকেই ভাবতেন, ঋষভ-রক্ষিত দুই ভাই। রক্ষিত জানতেন, ঋষভ ছবির জন্য একটি গল্প লিখেছেন। রক্ষিত জানান, ঋষভের এই গল্পের উপর ভিত্তি করেই ছবি বানাবেন তিনি।
২০১৬ সালে ‘রিকি’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন ঋষভ। ছবিটি বক্স অফিস থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেলেও পরিচালক হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে।
সেই বছরে ‘কিরিক পার্টি’ নামে আরও একটি ছবি পরিচালনা করেন তিনি। এই ছবিটি হিট করে। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবির একটি বলিউড রিমেক বানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য কার্তিক আরিয়ানকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
২০১৯ সালে ‘বেল বটম’ ছবিতে প্রথম মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন ঋষভ। তথাকথিত বাণিজ্যিক এই ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ সাড়া পায়।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পায় অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘কান্তারা’। চিত্রনাট্যকার, পরিচালক এবং অভিনেতার ভূমিকা এত নিপুণ ভাবে পালন করেছেন যে এই ছবির নাম আজ সারা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের মুখে মুখে। ঋষভও ইন্ডাস্ট্রিতে বহুল প্রশংসা কুড়োচ্ছেন।