দিল্লি মেট্রোর ভিতরে বসে স্বল্পবসনা তরুণী। অন্তর্বাস ছাড়া বাকি শরীরে একটি সুতো পর্যন্ত নেই। এক মনে বসে ফোন ঘেঁটে চলেছেন। সকলের চোখ তাঁর দিকে থাকলেও তাঁর সে বিষয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। মাঝেমধ্যে মাথা তুলে এ দিক ও দিক দেখে নিচ্ছেন। দিল্লি মেট্রোর এই তরুণীই গত কয়েক দিনে সমাজমাধ্যমে সাড়া ফেলেছেন। সমাজমাধ্যম তাঁর নাম দিয়েছে ‘দিল্লির উরফি’।
১৯ বছরের তরুণী ‘দিল্লির উরফি’র আসল নাম রিদ্ম চানানা।
রিদ্ম পঞ্জাবের ফতেগড়ের সাহেব সিটি এলাকার বাসিন্দা।
বর্তমানে দিল্লিতে থাকেন রিদ্ম। পড়াশোনার সূত্রেই তিনি সেখানে থাকেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচের প্রশিক্ষণও নেন তিনি।
রিদ্ম ইনস্টাগ্রাম প্রভাবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় রয়েছেন। তাঁর ইনস্টা হ্যান্ডেলের নাম ‘প্রিটি পেস্ট্রি’।
বর্তমানে কয়েক হাজার মানুষ ইনস্টাগ্রামে রিদ্মকে ফলো করেন। তিনি নিজে ফলো করেন ৫৪০ জনকে। তাঁর ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
রিদ্মের ইনস্টাগ্রামে বহু ছবি এবং রিল রয়েছে যেখানে তাঁকে শুধু অন্তর্বাসে শরীর ঢাকতে দেখা গিয়েছে। একটি ছবি প্রকাশ্যে আসার পর রিদ্মের বাকি ছবিগুলিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে।
রিদ্মকে উরফির সঙ্গে তুলনা করার যে যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তা তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেই স্পষ্ট। উরফির মতো তিনিও স্বল্পবসনে থাকতেই ভালবাসেন। বক্ষযুগল কোনও রকমে ঢেকে রাখেন উরফির মতোই।
যদিও রিদ্মের দাবি, তিনি কোনও ভাবেই উরফির দ্বারা অনুপ্রাণিত নন। কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিনি উরফিকে চিনতেন না বলেও দাবি করেছেন।
রিদ্ম জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে উরফির ছবি দেখান। বন্ধুর কাছেই তিনি উরফির বিষয়ে জেনেছেন বলেও দাবি রিদ্মের।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি উরফি জাভেদের দ্বারা অনুপ্রাণিত নই। আমি কী পরব সেটা সম্পূর্ণ আমার বিষয়। সাময়িক খ্যাতি পাওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। লোক কী বলবে আমি সেই সব নিয়ে ভাবতে রাজি নই।’’
রিদ্ম জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার খুবই রক্ষণশীল। তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁর এই ধরনের পোশাক পরা নিয়ে বহু বার আপত্তি জানিয়েছেন। প্রতিবেশীদের হুমকির মুখেও তাঁকে বেশ কয়েক বার পড়তে হয়েছে। কিন্তু তাঁর স্পষ্ট দাবি, তিনি এ সব ছোটখাট বিষয়ে চিন্তিত নন।
রিদ্ম এ-ও দাবি করেছেন, বহু দিন ধরে এই পোশাকেই তিনি রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। তবে এক দিনে তিনি এ রকম ‘নির্ভীক’ তৈরি হননি। এর নেপথ্যে একটি বড় প্রক্রিয়া ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
নিজের ভাইরাল হওয়া নিয়ে বিশেষ খুশি নন রিদ্ম। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে বহু বার স্বল্পবসনে বাইরে বেরোলেও তিনি কোনও দিন ভাইরাল হননি। তাঁর কথায়, “আমার পোশাকের জন্য আমায় এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। আর কেউ যদি কটাক্ষ করেনও, আমি সে সব বিশেষ পাত্তা দিই না।”
যে বা যাঁরা তাঁর ছবি তুলে ভাইরাল করেছেন, তাঁরা যথেষ্ট অন্যায় করেছেন বলেও দাবি করেছেন রিদ্ম। তিনি জানিয়েছেন, যে যা খুশি পরে রাস্তায় বেরোতে পারেন। কারও অসুবিধা হলে তিনি দেখবেন না। কিন্তু এ ভাবে বিনা অনুমতিতে ছবি তুলে ভাইরাল করা অনৈতিক বলেও রিদ্ম জানিয়েছেন।
যদিও রিদ্মের ‘যা খুশি পরা’কে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। রিদ্মের ছবি ভাইরাল হতেই মেট্রোর তরফে টুইট করে সকল যাত্রীকে সামাজিক শিষ্টাচার এবং নিয়ম মেনে মেট্রোয় চলাচল করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি মেট্রোর টুইটে লেখা হয়, ‘‘কেউ এমন কিছু করবেন না যা সহযাত্রীদের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এ রকম করলে অভিযুক্ত যাত্রীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
যদিও ‘দিল্লির উরফি’র দাবি, দিল্লি মেট্রো নিজেদের নিয়ম ভুলে গিয়েছে। মেট্রোর ভিতরে ভিডিয়ো তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু এক জন তাঁর ভিডিয়ো তুলে তা ভাইরাল করেছেন। অতএব ওই ব্যক্তিরও শাস্তি পাওয়া উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘মেট্রোর মধ্যে ওই রকম জামাকাপড় পরে আমি যদি অপরাধী হই, তবে যিনি বা যাঁরা ভিডিয়োটি তুলেছেন, তাঁরাও সমান অপরাধী।”