বাগানের সামনে কালো রঙের লোহার দরজা। দরজার মাঝে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ‘দিজ প্ল্যান্টস ক্যান কিল’। লেখার সঙ্গে কঙ্কালের মুখ, হাড়ের চিহ্ন দিয়ে ক্রস সাইন করে কাটা রয়েছে। সাধারণত, বিপজ্জনক জায়গা এড়িয়ে চলার চিহ্ন হিসাবে কঙ্কালের এই মুখ ব্যবহার করা হয়।
এই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে কেউ কালো দরজা পার করলেই শেষ। বাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যখন মন ভরে ফুলের ঘ্রাণ নিতে যাবেন, তখনই সাক্ষাৎ মৃত্যু। গল্পের পাতায় নয়, বরং পৃথিবীর বুকেই রয়েছে এমন এক ‘বিষ বাগান’।
ইংল্যান্ডের নর্থাম্বারল্যান্ড এলাকায় অ্যালনউইক গার্ডেনের কিছু অংশ জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ‘পয়জন গার্ডেন’। সকলেই এই বাগানের ভিতরে যেতে পারে কিন্তু তার জন্য রয়েছে বিশেষ নিয়ম।
হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক এবং পরনে অ্যাপ্রন— এই পোশাকেই বাগানের ভিতর ঢোকার অনুমতি রয়েছে। খালি হাতে কোনও গাছের পাতায় হাত দিলে বা কোনও ফুলের গন্ধ শুঁকলে মানবদেহে তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এই বাগানে মোট ১০০ প্রজাতির বিষধর গাছ রয়েছে। ‘পয়জন গার্ডেন’-এর এক ট্যুর গাইড ডিন স্মিথ জানান, বাগানে ঢোকার আগে সকলকে খুব ভাল করে নিয়মগুলি বলে দেওয়া হয়।
অনেক সময় দেখা গিয়েছে, বাগানে ঘোরার সময় কিছু পর্যটক হাওয়ায় টক্সিন মিশ্রিত ধোঁয়ার উপস্থিতির কারণে অজ্ঞানও হয়ে পড়েন।
এই বাগানে জায়েন্ট হগউইড বলে এক ধরনের গাছ রয়েছে যার উচ্চতা আট ফুট। এই গাছের পাতার সঙ্গে চামড়ায় ঘষা লাগলে ঘা হয়ে যেতে পারে। সাত বছর পর্যন্ত এই ঘা থাকতে পারে।
মঙ্কসহুড গাছ যখন নীল রঙের ফুলে ভরে ওঠে তখন গাছটি অপূর্ব সুন্দর রূপ নেয়। কিন্তু এই গাছের শুধু ফুল নয়, সম্পূর্ণ গাছটিই বিষাক্ত। এই গাছের বেরি ফলগুলি কাউকে খাওয়ানো হলে তাঁর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
লরেল গাছ থেকে সায়ানাইড নিঃসৃত হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ সায়ানাইড এক বার শরীরে প্রবেশ করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তিটি মারা যান।
অ্যাট্রোপা বেলাডোনা গাছে যে বেরি ফল জন্মায়, কোনও শিশু এই বেরি পর পর চারটি খেলেই তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো যাবে না।
২০০৫ সালে এই বাগানটি জনগণের জন্য খোলা হলেও এর ইতিহাস বহু পুরনো। ফুলের বাগান নয়, বরং ‘বিষ বাগান’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন ডাচেস অব নর্থাম্বারল্যান্ড।
তখন থেকেই এই বাগানে সব রকম বিষাক্ত গাছের চাষ করা হয়। ব্রিটেনের আবহাওয়ায় এই গাছগুলি বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত।
এমন কি, লোকের বাড়িতে বাগানের আনাচে-কানাচেও এই গাছগুলি গজিয়ে ওঠে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই গাছের অপকারিতা সম্পর্কে লোকজন অবগত নয়।
এই বাগানের ভিতর নির্দিষ্ট নিয়মাবলি মেনে যে কেউ যেতে পারে। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ট্যুর গাইডের মাধ্যমে এই বাগানটি ঘুরিয়ে দেখানো হয়।