সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে লেখক, পরিচালক সতীশ কৌশিকের। সেই শোক কাটিয়ে না উঠতেই বলিউডে আরও এক শোক সংবাদ। তিনি লেখক, পরিচালক প্রদীপ সরকার। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৬৭।
প্রদীপকে শুধু বলিউডের গণ্ডিতে বেঁধে দেওয়া বোধহয় ঠিক হবে না। টলিউডে ছবি না বানালেও টলি অভিনেতা-পরিচালকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল কলকাতার ঘরের ছেলে প্রদীপের।
কলকাতার সঙ্গে প্রদীপের যোগাযোগ যে নিবিড় ছিল, তা বোঝা যেত তাঁর ছবিতে চরিত্র বাছাই দেখে।
প্রদীপ বলিউডে পাঁচটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন। যার মধ্যে চারটিতেই রয়েছে বাঙালি মুখ। আর সেই কারণে বাঙালিদের কাছে প্রদীপের ছবির বিশেষ গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা ছিল। বাংলার পরিচালক না হয়েও যেন তিনি বাঙালির পরিচালক হয়ে উঠেছিলেন।
প্রদীপের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৩০ এপ্রিল। বেড়ে ওঠা এবং প্রাথমিক শিক্ষাও কলকাতায়। ‘দিল্লি কলেজ অফ আর্ট’ থেকে ১৯৭৯ সালে স্বর্ণপদক নিয়ে স্নাতক হয়ে যাত্রা শুরু করেন প্রদীপ।
বিজ্ঞাপনের জগতে ১৭ বছর ধরে কাজ করার পর প্রদীপ নিজের প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেন।
প্রদীপ বহু সফল বিজ্ঞাপনের পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। বিজ্ঞাপন পরিচালনার কারণে তিনি একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন ছাড়াও, প্রদীপ বহু জনপ্রিয় মিউজ়িক ভিডিয়ো পরিচালনা এবং প্রযোজনার কাজও করেছেন। যার মধ্যে শোভা মুদগলের জনপ্রিয় ‘আব কে সওন’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ‘মায়েরি’, ‘পিয়া বাসন্তী’ও অন্যতম।
১০০০টিরও বেশি বিজ্ঞাপন এবং মিউজ়িক ভিডিয়োতে কাজ করার পর প্রদীপ ছবি পরিচালনার কাজে হাত লাগান। যদিও পরিচালনাতে আসার আগে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবির সম্পাদনা মাধ্যমে তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন।
প্রদীপ পরিচালিত প্রথম ছবি ‘পরিণীতা’ সমালোচকদের প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি বক্স অফিসেও সাফল্য পায়।
পরিণীতা ছবির জন্য ৫৩তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে স্বীকৃতি পান প্রদীপ। এ ছাড়াও এই ছবি আরও অনেকগুলি পুরস্কার জিতেছিল। ফিল্মফেয়ারের মঞ্চ থেকে জিতেছিল মোট ৫টি পুরস্কার।
প্রদীপের পরের তিনটি ছবি ‘লাগা চুনরি মে দাগ’, ‘লফঙ্গে পরিন্দে’ এবং ‘মর্দানি’ ছবি ‘যশরাজ ফিল্মস’ প্রযোজিত। তবে তাঁর শেষ ছবি ‘হেলিকপ্টার ইলা’-র প্রযোজক ছিলেন অজয় দেবগণ।
ছবি পরিচালনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজ়ও পরিচালনা করেছিলেন প্রদীপ। যার মধ্যে ‘কোল্ড লস্যি অর চিকেন মসালা’ এবং ‘ফরবিডেন লভ’ অন্যতম।
প্রদীপের বলিউড যাপন ২০ বছরের। পরিচালক হিসাবে তিনি পরিচিত ১৮ বছর ধরে। বলিউডের অনেকের মতে আরও কিছু বছর পেলে তিনি আরও ভাল ভাল ছবি উপহার দিতেন। অনেকের মতে তাঁর আরও আগে ছবি পরিচালনায় আসা উচিত ছিল। প্রদীপের পরিচালনা করা বেশিরভাগ ছবিই সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বিদ্যা বালন, রানি মুখোপাধ্যায়, কাজল, দীপিকা পাড়ুকোন-সহ একাধিক অভনেত্রীর সঙ্গে কাজ করলেও প্রদীপের সব সময়ের পছন্দের অভিনেত্রী ছিলেন রানি। তা তিনি অনেক বার জনসমক্ষে স্বীকারও করেছেন।
ভোজনরসিক হিসাবেও সুনাম ছিল প্রদীপের। তবে বিশেষ দুর্বলতা ছিল কষা মাংসের প্রতি। পছন্দের উৎসব ছিল দুর্গাপুজো।
অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর পর প্রদীপই ছিলেন সেই মানুষ, যিনি বলিউডের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দাদা’ হিসাবে।
বলিউডের সেই ‘দাদা’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে। অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী, অজয় দেবগণ থেকে শুরু করে পরিচালক হনসল মেহতা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকজ্ঞাপন করেছেন। শুক্রবার বিকেল ৪টায় সান্তাক্রুজের একটি শ্মশানে প্রদীপের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।