ধরুন কেউ খুব খেটেখুটে, প্রচুর খরচ করে একটি বিলাসবহুল হোটেল বানালেন। কিন্তু সেই হোটেলে কেউ কোনও দিন থাকলেন না! কেমন লাগবে? শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টি সত্যি।
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে এমনই একটি হোটেল রয়েছে। ২৫ বছর আগে তৈরি হওয়া যে হোটেলে এক দিনের জন্যও কোনও অতিথি বাস করেননি!
পিয়ংইয়ংয়ের সেই হোটেলের নাম রিয়ুগইয়ং। ২৫ বছর আগে হোটেলটি তৈরি করতে মোট খরচ হয়েছিল ১৬০ কোটি পাউন্ড। অথচ কোনও অতিথিই সেই হোটেলের আতিথেয়তা গ্রহণ করেননি।
রিয়ুগইয়ং হোটেলটির কাঠামো পিরামিড আকৃতির। অর্থনৈতিক ভাবে বিশ্বের অন্যতম দুর্বল দেশে অবস্থানের কারণে হোটেলটিকে কাল্পনিক শয়তানের দেশ ‘মর্ডোর’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়।
রিয়ুগইয়ং হোটেলটির নির্মাণকাজ প্রাথমিক ভাবে ১৯৮৭ সালে শুরু হয়েছিল। দু’বছরের মধ্যে হোটেল তৈরির কাজ শেষ হলে সেটিই পৃথিবীর উচ্চতম হোটেল হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি।
পরিবর্তে অন্য তকমা জুটেছে রিয়ুগইয়ংয়ের কপালে। বর্তমানে বিশ্বের উচ্চতম অথচ খালি বহুতলের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সেটি।
রিয়ুগইয়ং হোটেলে অতিথিদের জন্য মোট ৩০০০টি কক্ষ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনাও সফল হয়নি। কিন্তু কেন এমন পরিণতি হয়েছিল হোটেলটির?
১৯৯২ সালে হোটেলটির কাজ মাঝপথেই থেমে যায়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর উত্তর কোরিয়া চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়ে। খরচ এড়াতে সেই সময়ে হোটেল তৈরির কাজে আর হাত দেয়নি সে দেশের সরকার।
১৬ বছর পর মিশরীয় ঠিকাদার গোষ্ঠী ‘ওরাসকম গ্রুপ’ আবার সেই হোটেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
২০০৮ সালে হোটেল তৈরির কাজ মোটামুটি শেষ করে এনেছিল ‘ওরাসকম’ গোষ্ঠী। তবে এর পর তারা ওই প্রকল্প থেকে সরে যায়।
তবে আবার কাজে ছেদ পড়ে। ২০১১ সালের জুলাই নাগাদ পুরো ভবনের বাইরের অংশে চওড়া কাচের দেওয়াল বসানো হয়।
এর পর ২০১২ এবং ২০১৩ সালেও হোটেলটির উদ্বোধন করা যায়নি। জার্মানের বিলাসবহুল হোটেল সংস্থা ‘কেম্পিনস্কি’ ওই হোটেল চালু করার এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেয়। তবে তারাও কয়েক মাস পরে সেই প্রকল্প থেকে সরে আসে।
এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত সেই হোটেল চালু করা যায়নি। তবে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সরকার এখনও সেই হোটেল চালু করার বিষয়ে আশাবাদী।