ভারতের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (এএমসিএ) তৈরির জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিল দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি (দ্য ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি বা সিসিএস)। সিসিএস এই সপ্তাহেই এএমসিএ তৈরির জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমান তৈরির পুরো প্রকল্প দেখরেখের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)’-এর ‘অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এডিএ)’-কে। এই প্রথম স্টেলথ যুদ্ধবিমান হাতে আসতে চলেছে ভারতের।
বিমানটির নকশাও তৈরি করবে এডিএ। যুদ্ধবিমানটি তৈরি করবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল)’।
এএমসিএ যুদ্ধবিমান তৈরি হয়ে যাওয়ার পর ভারত সেই দেশগুলির মধ্যে পড়বে, যাদের হাতে পঞ্চম প্রজন্মের নিজস্ব যুদ্ধবিমান থাকবে।
কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এএমসিএ-র? এই যুদ্ধবিমানে দু’টি ইঞ্জিন থাকবে, যার ওজন আনুমানিক ২৫ হাজার কিলোগ্রাম।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে যে যুদ্ধিবিমানগুলি রয়েছে, এএমসিএ-র আকার তার তুলনায় বড় হবে।
এএমসিএ এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হবে, যা যুদ্ধবিমানটিকে সহজে শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা পড়তে দেবে না।
এডিএ-তে থাকা এএমসিএ-র প্রজেক্ট ডিরেক্টর কৃষ্ণরাজেন্দ্র নীলি জানিয়েছেন, নতুন এই যুদ্ধবিমানটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের হাতে থাকা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের সমতুল্য বা আরও উন্নত হবে।
সংবাদ সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে কৃষ্ণরাজেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা তেজস যুদ্ধবিমানের উন্নয়ন দেখেছি। এএমসিএ-ও বিশ্বের অন্যান্য পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে টক্কর দিতে সক্ষম।’’
এএমসিএ যুদ্ধবিমানের পেটের ভিতরে থাকবে বিভিন্ন পাল্লার অস্ত্র। এগুলি শত্রুপক্ষের উপর নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এই অস্ত্রগুলির মধ্যে অনেকগুলি ভারতেই তৈরি।
এ ছাড়াও বিমানটির মধ্যে থাকবে ৬৫০০ লিটার জ্বালানি ধারণে সক্ষম একটি বড় ট্যাঙ্ক।
এএমসিএ এমকে১ যুদ্ধবিমানে থাকবে ৯০ কিলোনিউটন শ্রেণির আমেরিকার জিই৪১৪ ইঞ্জিন। অন্য দিকে, আরও উন্নত এএমসিএ এমকে২ যুদ্ধবিমান উড়বে ১১০ কিলোনিউটন ইঞ্জিনে যা বিদেশি প্রতিরক্ষা সংস্থার সহযোগিতায় ডিআরডিও-র একটি সংস্থা তৈরি করবে।
জানা গিয়েছে, এএমসিএ এমকে২ যুদ্ধবিমানটির ইঞ্জিন তৈরির জন্য ফ্রান্সের ‘সাফরান এসএ’ সংস্থার সঙ্গে কথা বলছে ভারত।
এএমসিএ যুদ্ধবিমানটিতে থাকছে শক্তিশালী সেন্সর এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রাগার।
এএমসিএ নিয়ে ভারত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ২০০৭ সালে। আলোচনাও শুরু হয় সেই সময়। প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা ছিল রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিমানটি তৈরি করার।
তবে ২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ওই বিমান তৈরির প্রকল্প থেকে সরে আসে। নিজেরাই দেশীয় পদ্ধতিতে এই যুদ্ধবিমান তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এর আগে নতুন প্রজন্মের একক ইঞ্জিনযুক্ত তেজস যুদ্ধবিমান তৈরিতে হাত লাগিয়েছিল ভারত। এর পর আবার দেশীয় পদ্ধতিতে বিমান তৈরির সিদ্ধান্ত নিল ভারত।
এডিএ আগামী সাড়ে চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এএমসিএ তৈরি করে ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিমানটিকে আরও অত্যাধুনিক বানাতে সময় লাগবে প্রায় ১০ বছর।
এইচএএল বিমান তৈরির কাজ শুরু করার আগে পাঁচটি প্রোটোটাইপ তৈরি করবে বলেও জানা গিয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও বিমানটি তৈরিতে যুক্ত হতে পারে।
মাত্র কয়েকটি দেশের হাতে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে আমেরিকা (এফ-২২ র্যাপ্টর এবং এফ-৩৫এ লাইটিনিং-২), চিন (জে-২০ মাইটি ড্রাগন) এবং রাশিয়া (সুখোই সু-৫৭)। সেই তালিকাতেই যুক্ত হতে চলেছে ভারত।
ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে বর্তমানে ৩০টি যুদ্ধবিমানের স্কোয়াড্রন রয়েছে। এএমসিএ হাতে এলে আরও সমৃদ্ধ হবে বিমানবাহিনী।