মুদ্রা গাইরোলা। অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের অপর নাম ভারতের এই আইএএস অফিসার। যিনি বাবার স্বপ্নপূরণ করতে নিজের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন। মাঝপথেই ছেড়ে দেন চিকিৎসক হওয়ার পড়াশোনা। আইপিএস হওয়ার পরও পরিশ্রম থামাননি মুদ্রা। বাবার ইচ্ছাপূরণ করতে তিনি আইএএস অফিসার হয়েছেন।
মুদ্রা উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার কর্ণপ্রয়াগের বাসিন্দা। বর্তমানে তাঁর পরিবার দিল্লিতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় চৌখস ছিলেন মুদ্রা। স্কুলে সব সময় প্রথম হতেন তিনি।
দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় মুদ্রার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৯৬ শতাংশ। দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ৯৭ শতাংশ নম্বর।
স্কুলজীবনে ভারতের প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার কিরণ বেদীর হাত থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন মুদ্রা।
দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর মুম্বইয়ের একটি মেডিক্যাল কলেজে বিডিএস (ব্যাচেলর অফ ডেন্টাল সার্জারি) নিয়ে ভর্তি হন মুদ্রা। কলেজের পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার জন্য স্বর্ণপদকও পেয়েছিলেন তিনি।
বিডিএস নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে মুদ্রা দিল্লি চলে আসেন। সেখানে এমডিএসে ভর্তি হন তিনি।
তবে মেয়ে চিকিৎসক হোক, এমনটা চাননি মুদ্রার বাবা অরুণ গাইরোলা। তিনি চাইতেন মুদ্রাকে আইএএস অফিসার হিসাবে দেখতে।
অরুণ নিজে আইএএস হতে চাইতেন। ১৯৭৩ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ইন্টারভিউ রাউন্ড থেকে নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় তাঁকে।
সেই কারণেই অরুণ চাইতেন যে, মুদ্রা যেন আইএএস অফিসার হয়ে তাঁর স্বপ্নপূরণ করতে পারে।
বাবার মুখে হাসি ফোটানোর তাগিদে এমডিএসের পড়া মাঝপথেই ছেড়ে দেন মুদ্রা। শুরু করেন ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
২০১৮ সালে মুদ্রা প্রথম বারের জন্য ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। লেখা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হোঁচট খান।
২০১৯ সালেও ইউপিএসসি পরীক্ষার ইন্টারভিউ পর্বে গিয়ে বাতিল হন মুদ্রা। এর পরের বছর ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতেই পারেননি তিনি।
২০২১ সালে কঠোর পরিশ্রমের ফল পান মুদ্রা। ইউপিএসসি পরীক্ষায় ১৬৫ র্যাঙ্ক হয় তাঁর। কিন্তু এত করেও স্বপ্নপূরণ হয়নি মুদ্রার। আইএএসের পরিবর্তে আইপিএস হন তিনি।
আইএএস হতে ২০২২ সালে আবার ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন মুদ্রা। সে বার তাঁর র্যাঙ্ক হয় ৫৩। বাবার স্বপ্নপূরণ করে আইএএস হন তিনি।
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রচুর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করা সহজ নয়। এটি দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা। বহু পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষা দেন। তবে স্বপ্নপূরণ হয় হাতেগোনা কয়েক জনের।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রার্থী আইপিএস, আইএএস অফিসার হওয়ার দৌড়ে নামেন এবং এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। কেউ নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এই পরীক্ষা দেন তো কেউ প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। যেমনটা বাবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মুদ্রা করেছেন।