নতুন সংসদ ভবনে জায়গা পেতে চলেছে ঐতিহাসিক সোনার রাজদণ্ড ‘সেঙ্গল’। আগামী রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন। সেই অনুষ্ঠানেই লোকসভার স্পিকারের আসনের কাছে এই রাজদণ্ড বসাতে দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ব্রিটিশরাজ থেকে মুক্তি এবং ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে এই রাজদণ্ড দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই রাজদণ্ডই এ বার জায়গা পাচ্ছে নতুন সংসদ ভবনে।
‘সেঙ্গল’ শব্দটি তামিল শব্দ ‘সেম্মাই’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ‘ন্যায়’। তবে সেঙ্গলের ইতিহাস অনেকেরই অজানা। যার সূত্রপাত ইংরেজ শাসিত ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটনের এক প্রশ্ন থেকে!
প্রধানমন্ত্রী নেহরুর কাছে নাকি একটি সাধারণ প্রশ্ন করেছিলেন মাউন্টব্যাটন। মাউন্টব্যাটনের জিজ্ঞাস্য ছিল, ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক কী হবে?
উত্তর খুঁজতে প্রধানমন্ত্রী নেহরু তখন দেশের শেষ গভর্নর জেনারেল সি রাজাগোপালাচারীর দ্বারস্থ হন।
রাজাগোপালাচারী বেশি পরিচিত ছিলেন ‘রাজাজি’ নামে। তিনি নেহরুকে তামিলনাডুর রাজপরিবারের ঐতিহ্যের বিষয়ে বলেন। সে রাজ্যের প্রথা অনুযায়ী, রাজপরিবারের নতুন রাজার অভিষেকের সময় হাতে রাজদণ্ড তুলে দেওয়া হয়। যার সূত্রপাত হয়েছিল চোল রাজাদের শাসনকাল থেকে।
সেই প্রথা অনুযায়ীই নাকি নেহরুকে ব্রিটিশদের হাত থেকে রাজদণ্ড নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজাগোপালাচারী।
রাজাগোপালাচারীর পরামর্শ মনে ধরে নেহরুর। তবে সেই ঐতিহাসিক রাজদণ্ড জোগাড় করার গুরুভারও তিনি রাজাগোপালাচারীকেই দেন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর তামিলনাড়ুর মঠ ‘তিরুভাদুথুরাই আথিনাম’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজাগোপালাচারী। মঠের তৎকালীন গুরু রাজদণ্ড তৈরি করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
‘তিরুভাদুথুরাই আথিনাম’ আবার সেই রাজদণ্ড তৈরির দায়িত্ব তুলে দেন তৎকালীন মাদ্রাজের এক জহুরি ভুমিদি বঙ্গারু চেট্টার হাতে। বঙ্গারুই সেই সোনার রাজদণ্ড তৈরি করেছিলেন।
পাঁচ ফুট উঁচু সেঙ্গলের মাথায় রয়েছে ‘নন্দী’ ষাঁড়। যা ন্যায়বিচারের প্রতীক।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেঙ্গল তৈরি করার পর বঙ্গারু সেই রাজদণ্ড মঠকে দেন। মঠের এক প্রবীণ পুরোহিত আবার রাজদণ্ড তুলে দেন মাউন্টব্যাটনের হাতে।
এর পর রাজদণ্ডটি আবার মাউন্টব্যাটনের থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। রাজদণ্ডে গঙ্গাজল ছিটিয়ে তা নিয়ে যাওয়া হয় নেহরুর কাছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট মধ্যরাতের মিনিট পনেরো আগে সেঙ্গল নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
নেহরু রাজদণ্ড গ্রহণ করার মুহূর্তের কথা মাথায় রেখে একটি বিশেষ গান রচনা করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তা পরিবেশিতও হয়েছিল।
সেঙ্গল বর্তমানে ইলাহাবাদের একটি জাদুঘরে রয়েছে। সেখান থেকে বার করে রবিবার এটিকে সংসদ ভবনে আনা হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার জানান, সেঙ্গলের ইতিহাস এবং তাৎপর্য অনেকেরই অজানা। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত করতেই সেঙ্গল নতুন সংসদ ভবনে জায়গা পাবে বলে জানিয়েছেন শাহ।