রাজকুমার এবং নানা পটেকর অভিনীত ‘তিরঙ্গা’ ছবির প্রলয়নাথ গুন্ডাস্বামীকে মনে আছে? বা অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত ছবি অগ্নিপথ-এর অন্না শেট্টিকে? তিনি বলিপাড়ার পরিচিত অভিনেতা দীপক শিখরে। যদিও তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘গুন্ডাস্বামী’ চরিত্রের জন্য। তাই এখনও অনেকের কাছেই তিনি ওই নামে পরিচিত।
নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বলিউডে একচেটিয়া ভাবে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপক।
বলিউডে অমরেশ পুরীর পর যখন দাপুটে ভিলেনের আকাল দেখা গিয়েছিল, তখন সদাশিব অমরাপুরকার এবং দলীপ তাহিলদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে মিলে ‘ভিলেনগিরি’র পতাকা ধরেছিলেন দীপক।
টকটকে লাল চোখ এবং ভারী গলার কারণে বলিপাড়ার ভিলেন হিসাবে খুব তাড়াতাড়ি জমি পেয়ে যান দীপক।
তবে এখন বলিউড ছবিতে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না দীপককে। মাঝেমধ্যে দু’-একটা মরাঠি ছবি এবং ওয়েব সিরিজ়ে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। যদিও মরাঠি নাট্যমহলে এখনও তাঁর অবাধ বিচরণ।
বলিপাড়ার গুঞ্জন, নিজের ভুলেই নাকি বলিউডে জমি হারিয়েছিলেন দীপক। কী ছিল সেই ভুল, যার জন্য বলিউডের অন্যতম সেরা ভিলেন থেকে নিমেষে হারিয়ে গেলেন তিনি?
দীপকের জন্ম মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দীপকই ছিলেন বড়। বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সি এই অভিনেতা কোনও দিন অভিনয় জগতে পা দিতেই চাননি।
ছোটবেলা থেকেই দীপকের ইচ্ছা ছিল পুলিশ হওয়ার। পুলিশের নকল পোশাক পরে ছবি তোলাতেও তিনি ভালবাসতেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই দীপকের ইচ্ছার দিশা বদলে যায়। ঝোঁক বাড়ে অভিনয়ের দিকে।
আসলে দীপক যে স্কুলে যেতেন, তার ঠিক পিছনেই ছিল ‘রঙ্গভবন’ নামে একটি নাট্যমঞ্চ। সেখানে বিভিন্ন নাট্যদলের কর্মীরা রিহার্সাল করতেন। এক দিন ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই সেখানে চলে যান দীপক।
নাট্যকর্মীদের অভিনয় করতে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি। এর পর থেকে প্রায়ই দীপক রঙ্গভবনে যেতেন। বসে বসে নাট্যকর্মীদের সঙ্গে গল্প করতেন, তাঁদের অভিনয় দেখতেন। বেশ কয়েক মাস পর রঙ্গভবনে নাটক করতে আসা একটি নাটকের দলে যোগ দেন দীপক।
রাস্তায় নাটক করতে করতেই ভাগ্য ফেরে দীপকের। নজরে পড়েন খ্যাতনামী পরিচালক গোবিন্দ নিহালনির। ১৯৮০ সালে গোবিন্দের ছবি ‘আক্রোশ’-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান দীপক।
দীপকের অভিনয় নজর কাড়লেও সৌভাগ্য ফেরেনি তাঁর। ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও বড় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ তিনি পাচ্ছিলেন না।
সুযোগ আসে ১৯৯০ সালে। মুকুল এস আনন্দের ছবি ‘অগ্নিপথ’-এ অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান দীপক। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্র অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ। ভিলেন আন্না শেট্টির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দীপক।
এই ছবিতে অভিনয়ের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি দীপককে। একের পর এক বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে তাঁর ঝুলিতে। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটকেও অভিনয় করতেন।
একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করা সত্ত্বেও ২০০৫ সালের পর থেকে তাঁর অভিনয়ের সুযোগ কমতে থাকে।
২০১০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে বলিপাড়া থেকে হারিয়ে যান জাঁদরেল ভিলেন দীপক। কিন্তু কেন এত নামীদামি ছবি এবং অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করার পরও বলিউড তাঁকে পর করে দিল?
মনে করা হয়, ২০০০ সালের পর থেকে বলিউডে ছবির গল্প এবং ছবি তৈরির পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছিল। বলিউড ছবিতে নতুন ধারার প্রচলন শুরু করেছিলেন নতুন পরিচালকরা। ধীরে ধীরে আবছা হতে শুরু করে তথাকথিত ভিলেনের ধারণা।
বলি ছবিতে দীপক একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যে ধরনের ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতেন, সেই ধরনের চরিত্রের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে আসছিল। আর সেই কারণেই দীপকের কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব আসা কমে যায়।
বর্তমানে দীপক কালেভদ্রে দু’একটি ছবিতে মুখ দেখালেও বড় কোনও ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আর পান না। তবে এখনও মরাঠি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা যায় দীপককে।
অভিনয় জগতে পা দেওয়ার পর থেকে হিন্দি এবং মরাঠি মিলে ১০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন দীপক।