রাস্তায় লাল সমুদ্রের স্রোত। ভক্তরা লাল পোশাক পরে ঈশ্বরের উদ্দেশে গান গাইছেন। তবে সেই ভক্তিগানে ভগবানের নাম নেওয়ার চল নেই। বরং তার পরিবর্তে থাকে বহু কটু কথা, গালিগালাজ। কেরলের এক মন্দিরে দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রথাই চলে আসছে।
কদুঙ্গাল্লুর ভগবতী মন্দির। কেরলের ত্রিশুর জেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি একটি কালী মন্দির। স্থানীয়েরা কালীর এই রূপকে ‘শ্রী কুরুম্বা’ নামে পুজো করেন।
প্রাচীন লোকগাথা থেকে জানা যায়, দেবী কুরুম্বা আসলে মা কালীর উগ্র রূপ। শিবের তৃতীয় নেত্র থেকে কুরুম্বার জন্ম।
কথিত আছে, দারুকা নামের এক অতিকায়, শক্তিশালী দানবকে মারতেই তাঁর জন্ম।
কুরুম্বা দেবীর মূর্তি সাত ফুট লম্বা। মোট আটটি হাতের এক হাতে দারুকার কাটা মুণ্ড, এক হাতে তরবারি। বাকি ছ’টি হাতে ছয় ধরনের অস্ত্র রয়েছে দেবী কুরুম্বার।
উত্তর কেরলের অধিবাসীরা এই দেবীকে জাগ্রত বলে মনে করেন। প্রতি বছর মার্চ থেকে এপ্রিল মাস নাগাদ কুরুম্বা দেবীর জন্মতিথি হিসাবে উৎসবও পালন করা হয়। এই ‘ভরানি’ উৎসবে কেরলের নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা মন্দিরে জমায়েত হয়।
মালয়ালম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বছরের এই সময়টি ‘মীনম’ নামে পরিচিত। কথিত আছে, এই সময় দেবীকে সন্তুষ্ট করতে ভক্তরা সকলে দেবীর মতোই লাল রঙের পোশাক পরে রাস্তায় নামেন।
সাধারণত এই উৎসব শুরু হয় ‘কোজিক্কল্লু মুদল’ নামের একটি প্রথার মাধ্যমে। ভক্তরা লাল পোশাক পরে তাঁদের মাথায় একটি জ্যান্ত মোরগ নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন।
পরে সেই মোরগগুলি বলি দেওয়া হয়। ভক্তরা মনে করেন, এর ফলে দেবী সন্তুষ্ট হন।
এর পরে শুরু হয় ‘কাভু থীন্ডল’। কদুঙ্গাল্লুরের রাজা, ক্র্যাঙ্গানোর রাজপরিবারের সদস্য মন্দিরের সামনের বটগাছের বেদির উপর দাঁড়িয়ে একটি সিল্কের প্যারাসল খোলার পর মন্দিরের প্রবেশদ্বার খোলা হয়।
ভক্তরা মন্দিরে ঢোকার আগে হাতে লাঠি নিয়ে মন্দিরের চারপাশে তিন বার ঘুরে তার পর মন্দিরের ভিতর ঢোকেন।
অনেক সময় ভক্তরা হাতে তরবারির মতো ধারালো অস্ত্র নিয়ে মন্দিরের ভিতর ঢোকে। দেবী কুরুম্বার উদ্দেশে তাঁরা যে ভক্তিগান করেন তা কটু কথায় ভরা।
ভক্তদের মুখে কটু কথা শুনলে দেবী শান্ত হন বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা।