দ্য বিস্ট। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরাপদ গাড়ি। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পদে যিনিই বসবেন, তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়াই বুলেট প্রতিরোধী এই গাড়ির দায়িত্ব। বর্তমানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্বে রয়েছেন ‘ইনি’।
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি আসছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন বাইডেন। দিল্লি পৌঁছবেন শুক্রবার। বাইডেনের পাশাপাশি আমেরিকা থেকে উড়ে আসছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরকারি গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’।
ভারত সফরের সময় বাইডেন এই বিলাসবহুল ক্যাডিলাক গাড়়ি চড়েই ভ্রমণ করবেন। সূত্রের খবর, আমেরিকা থেকে একটি বোয়িং বিমানে চাপিয়ে আনা হবে গাড়িটিকে। সাধারণত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন দেশের বাইরে যান, পাহারা দিতে যায় ‘বিস্ট’।
বাইডেনের আগে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও বিদেশে নিরাপদ রেখেছে এই গাড়ি। ২০২০ সালে গুজরাত এসেছিলেন ট্রাম্প। তখনও ভারতে দেখা গিয়েছে ‘বিস্ট’কে।
বিস্টের এখন যে মডেলটি বাইডেন চড়়েন সেটি ২০১৮ সালের মডেল। আগের মডেলটিকে সরিয়ে এই মডেল আনা হয় ট্রাম্পের জমানায়।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের এই সরকারি গাড়িতে এমন সব অত্যাধুনিক সুবিধা আছে, যা জানলে তাক লেগে যাবে।
এই বিলাসবহুল ক্যাডিলাক গাড়ির জানলার পাঁচটি স্তর রয়েছে। যা কাচ এবং পলিকার্বনেট দিয়ে তৈরি। শুধুমাত্র চালকের পাশের জানলা ছাড়া আর কোনও জানলার কাচ নামানোর নিয়ম নেই। সেই জানলার কাচও মাত্র তিন ইঞ্চি পর্যন্ত নামানো যায়।
বলা হয়, এই গাড়ির জানলার প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই যে, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ভেদ করে যাবে এমন বুলেটও এই গাড়ির জানলার কাচ ভেদ করতে পারবে না।
গাড়ির মূল অংশ (বডি) তৈরি হয়েছে স্টিল, টাইটেনিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং সেরামিকস্ দিয়ে। এই সামরিক বর্মের মতো সেই কাঠামো পাঁচ ইঞ্চি মোটা এবং অত্যন্ত শক্ত। গাড়ির পুরো কাঠামোই বোমা এবং মাইন প্রতিরোধী। ‘বিস্ট’ যেন পুরোদস্তুর দানব।
বিস্ট কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া। গাড়িটির মধ্যেই রয়েছে পাম্প অ্যাকশন শটগান্স, কাঁদানে গ্যাস। জরুরি অবস্থার কথা মাথায় রেখে প্রেসিডেন্টের গ্রুপের রক্তের ব্যাগ সব সময় গাড়ির মধ্যে মজুত রাখা হয়। পাশাপাশি, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও রয়েছে এই গাড়ির মধ্যে।
কোনও সাঁজোয়া গাড়ির থেকে কম নয় বাইডেনের নিরাপত্তায় থাকা এই গাড়ি। গাড়ির সামনে রয়েছে কাঁদানে গ্যাসের গ্রেনেড লঞ্চার এবং নাইট ভিশন ক্যামেরা।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ক্যাডিলাক গাড়িটিতে চাপলেই, তাঁর প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর রাখে পেন্টাগন। তার জন্য গাড়িটির পিছনের আসনে স্যাটেলাইট ফোন রয়েছে। যার সাহায্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
বিস্টের পিছনের আসনে প্রেসিডেন্ট ছাড়াও আরও চার জন বসতে পারেন। চালক এবং পিছনের আসনের জায়গার মধ্যে একটি কাচের দেওয়াল রয়েছে। প্রেসিডেন্টের কাছেই এই দেওয়াল নিয়ন্ত্রণ করার সুইচ থাকে।
প্রেসিডেন্ট চাইলে তবেই সেই কাচের দেওয়াল ওঠানামা করতে পারে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের আসনের সামনে রয়েছে একটি প্যানিক বোতাম এবং আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা।
বিস্টের জ্বালানি ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণ প্রতিরোধক ফোম দিয়ে পরিপূর্ণ। সরাসরি ট্যাঙ্কের মধ্যে হামলা হলেও কোনও বিস্ফোরণ হবে না, এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের গাড়ির প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে নজর রেখে সেই গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে গাড়ির টায়ারও। স্টিল রিমের সেই টায়ার কখনও ফাটবে না। টায়ার যদি কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলেও গাড়ি চালাতে কোনও অসুবিধা হবে না।
দ্য বিস্টে অত্যাধুনিক সেন্সর লাগানো রয়েছে। কোনও রকম নিউক্লিয়ার, কেমিক্যাল বা বায়োলজিক্যাল হামলা হওয়ার আগেই তা বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই সেন্সরের।
বিস্টের সঙ্গে লাগানো রয়েছে একটি উলম্ব অ্যান্টেনা। যা খুব সহজেই যাতায়াতের রাস্তায় যে কোনও যোগাযোগের যন্ত্র এবং রিমোটকে বিকল করে দিতে সক্ষম। মানবহীন ড্রোনও শনাক্ত করতে সক্ষম এই অ্যান্টেনা।
বিস্টের চালকের দায়িত্ব যাকে তাকে দেওয়া হয় না। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেই চালক হিসাবে বেছে নেওয়া হয়।
সেই চালকের হাত এতটাই পোক্ত যে, যে কোনও পরিস্থিতিতে সুদক্ষ ভাবে গাড়ি চালাতে ওস্তাদ তিনি। বিপদের আঁচ পেলেই দ্রুত প্রেসিডেন্টকে সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে তাঁর কাছে। তিনি নাকি এমন ভাবেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে, কাল্পনিক গোয়েন্দা জেমস বন্ডকেও গাড়ি চালানোর দিক থেকে বলে বলে গোল দিতে পারেন।
প্রেসিডেন্টের কনভয়ে বিস্ট ছাড়াও আরও অনেকগুলি গাড়ি থাকে। প্রেসিডেন্টের গাড়ির ঠিক পিছনের গাড়িতে থাকে নিরাপত্তারক্ষী এবং গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকেরা। অন্য গাড়িগুলিতে চিকিৎসক এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরা থাকেন।
সেই বিশেষ গাড়িই বাইডেনের সঙ্গে ভারতে আসছে। বাইডেন দিল্লিতে থাকাকালীন সব সময় তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা এই গাড়ির পাহারায় থাকবেন।
বাইডেনের আগমন ঘিরে চরম ব্যস্ততা দিল্লি জুড়ে। কড়া ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানীকে। বাইডেনে ভারতে থাকাকালীন দিল্লির উপর নজর রাখতে আকাশে ক্রমাগত চক্কর দেবে বায়ুসেনা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। এই হেলিকপ্টারগুলিতে সেনাবাহিনী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর কমান্ডোরা থাকবেন।
দিল্লির বহুতলগুলিতে এনএসজি এবং সেনার স্নাইপারদের মোতায়েন করা হবে। বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছে দিল্লি পুলিশও। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেক জায়গায় এমন প্রযুক্তি বসানো হচ্ছে, যা ড্রোন চলাচলে বাধা দেবে। একই সঙ্গে বাইডেনকে পাহারা দেবে প্রেসিডেন্টের বিশ্বস্ত সঙ্গী ‘দ্য বিস্ট’।