আরও পশ্চিমে সরে গিয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গেল দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ। যা বুধবার সন্ধ্যাতেই পরিণত হতে পারে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’য়।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন দেওয়া হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এক কফির নামে? তা নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিভিন্ন দেশ। যেমন এর আগে বাংলার বুকে আঘাত হানা ‘সিত্রং’ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল তাইল্যান্ড। তেমনই ‘মোকা’ নামটি দিয়েছে আরব সাগরের প্রান্তে অবস্থিত ইয়েমেন।
যদিও ‘মোকা’ শব্দের আক্ষরিক কোনও অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’ (উচ্চারণ মোকা)-র নামে ঘূর্ণিঝড়ের এই রকম নামকরণ করা হয়েছে।
১৯ শতক পর্যন্ত মোখা ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর। এই শহরেই বিখ্যাত কফি ‘মোকা’র চাষ হয়। কফির নামকরণও হয়েছে শহরের নামেই।
বহু বছর ধরে মোখা বন্দর দিয়েই দেশ-বিদেশে ‘মোকা’ কফি রফতানি করা হয়।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বর্তমানে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৫৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ১৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মায়ানমারের সিতওয়ে থেকে ১৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে রয়েছে অতি গভীর নিম্নচাপ।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া অতি গভীর নিম্নচাপ বুধবার সন্ধ্যাবেলা আরও পশ্চিমে সরে গিয়ে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
পরের কয়েক ঘণ্টায় সেটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে বৃহস্পতিবার সকালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে ‘মোকা’।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ গত ৬ ঘন্টা ধরে প্রতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-পশ্চিমে সরে গিয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, গভীর নিম্নচাপটি বুধবার বিকালের মধ্যে আরও উত্তর-পশ্চিমে সরবে। তার পর তা আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ‘মোকা’। শুক্রবার সকালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এবং তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরে সরে গিয়ে ‘মোকা’ পরিণত হতে পারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর একটু একটু করে উত্তর-উত্তরপূর্বে সরে যেতে পারে মোকা। শনিবার থেকে শক্তি ক্ষয় করতে শুরু করবে ঘূর্ণিঝড়।
রবিবার দুপুরের দিকে তা কক্সবাজার এবং মায়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের উপর আছড়ে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করবে।
আবহবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলে সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে মোকা।
মৌসম ভবন তাদের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই সমুদ্রে তৈরি হওয়া অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
শুক্রবার থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর অর্থাৎ ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে।