সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে আমেরিকা কাজ করতে যাওয়ার এইচ ১বি ভিসা নিয়ে লটারি কেলেঙ্কারি। যাতে নাম জড়িয়েছে এক ভারতীয় রাজনীতিকের!
সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে যে, আমেরিকার ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থায় কারচুপি করে একই ব্যক্তির জন্য একাধিক আবেদনপত্র জমা দিয়েছে একাধিক সংস্থা।
এই জালিয়াতির নেপথ্যে যাঁর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি তেলঙ্গানার আদিলাবাদের কংগ্রেস নেতা কান্দি শ্রীনিবাস রেড্ডি। পেশায় তিনি এক জন ভারতীয়-আমেরিকান ব্যবসায়ী। ২০২৩ সালে তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে আদিলাবাদ থেকে কংগ্রেসের প্রার্থীও হয়েছিলে তিনি। কিন্তু হেরে যান।
শ্রীনিবাস এক জন তেলুগু রাজনীতিক। স্নাতকোত্তর করতে আমেরিকায় গিয়েছিলেন শ্রীনিবাস। পরে প্রযুক্তি পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ শুরু করেন।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ অনেক দিন ধরেই এইচ ১বি ভিসা লটারি কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আরও অনেক সংস্থা একই কাজ করছে। সেই তদন্ত চলাকালীনই নাম উঠে এসেছে শ্রীনিবাসের।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে সংস্থাগুলির মাধ্যমে একই ব্যক্তির জন্য একাধিক বার আবেদনপত্র জমা পড়ছে, সেগুলির অনেকগুলিই নিয়ন্ত্রণ করেন শ্রীনিবাস বা তাঁর স্ত্রী।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্রীনিবাস। ব্লুমবার্গের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত্কারে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ওই সংস্থাগুলির এক জন এজেন্ট মাত্র এবং পুরো বিষয়টিতে তাঁর হাত নেই।
তবে অন্যত্র শ্রীনিবাস অন্য দাবি করেছেন। টেক্সাস কর্তৃপক্ষকে শ্রীনিবাস জানিয়েছেন, ক্লাউড বিগ ডেটা নামে একটি সংস্থার সিইও তিনি।
কিন্তু এইচ ১বি ভিসা লটারি কেলেঙ্কারি আসলে কী? এইচ ১বি ভিসা কাজে লাগিয়ে আমেরিকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলি অন্য দেশ থেকে দক্ষ পেশাদারদের আমদানি করে। পেশাদারেরা আমেরিকা যান এইচ ১বি ভিসা নিয়ে। সেই ভিসা পেতে আগে থেকে আবেদন করতে হয়।
আর পুরো কেলেঙ্কারিটি নাকি হয়েছে ‘মাল্টিপল রেজিস্ট্রেশন’ নামে একটি আবেদন পদ্ধতির মাধ্যমেই।
এইচ ১বি ভিসা পেতে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আবেদন করেন আবেদনকারীরা। প্রতি এপ্রিলে একটি লটারি করা হয় সরকারের তরফে। সেই লটারিতে যাঁদের নাম উঠে আসে তাঁরা সুযোগ পান আমেরিকা যাওয়ার।
এ বার যদি একই ব্যক্তির নামে একাধিক সংস্থা থেকে একাধিক বার আবেদনপত্র জমা পড়ে, তা হলে লটারিতে তাঁর নাম উঠে আসার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। লটারিতে নাম ওঠানোর জন্য এ ভাবেই নাকি চলছিল জালিয়াতি।
তদন্তে উঠে এসেছে, শ্রীনিবাস এমন বেশ কয়েকটি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন যেগুলোর ঠিকানা একই। ক্লাউড বিগ ডেটা তেমনই একটি সংস্থা। অভিযোগ, এর ফলে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে সিস্টেমে কারচুপি করছিলেন তিনি এবং তাঁর দল। এ ভাবেই শতাধিক মানুষকে তিনি এইচ ১বি ভিসা পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
শ্রীনিবাসের সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠা সংস্থাগুলির মাধ্যমে যাঁরা এইচ ১বি ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁদের সুনিশ্চিত ভাবে ভিসা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি উঠেছে। অন্য দিকে যে সংস্থাগুলি নিয়ম মেনে চলে, সেগুলি এই কারচুপির জন্য অসুবিধার মুখে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীনিবাস নাকি কাউকে ভিসা পাইয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর বেতনের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাবি করতেন যা গড়ে বার্ষিক ১৫ হাজার ডলারেরও বেশি।
২০২০ সালের লটারিতে শ্রীনিবাসের ক্লাউড বিগ ডেটা সংস্থা প্রায় ২৮৮টি নাম জমা দিয়েছিল। অভিযোগ, ওই সময়ে তাঁর অধীনে থাকা অন্য সংস্থাগুলিও একই নাম জমা দিয়েছিল। ২০২০ সালে তাঁর সঙ্গে যোগ থাকা সংস্থাগুলি মোট তিন হাজারেরও বেশি বার লটারির জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিল বলেও অভিযোগ।
সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে শ্রীনিবাস বলেছেন, ‘‘এতে বেআইনি কিছুই নেই। যখন ভিসার জন্য একাধিক আবেদন জমা পড়ে তখন কর্মচারীদের উপর নির্ভর করে যে তারা কোন সংস্থাকে বেছে নেবেন। নিয়ম বদলেছে। এখন থেকে পাসপোর্ট নম্বরও জমা দিতে হবে। যদি একই নামে একাধিক আবেদন করা হয়, তা হলে তা সর্বত্রই প্রতিফলিত হবে।’’
উল্লেখ্য, কৃষকদের সাহায্যের জন্য তেলঙ্গানায় একটি সংস্থা রয়েছে শ্রীনিবাসের। পাশাপাশি নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেল এবং নিউজ় পোর্টালও রয়েছে।