ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি করছে সৌরাষ্ট্র-কচ্ছের উপর থাকা গভীর নিম্নচাপ। মৌসম ভবন সূত্রে খবর, শুক্রবারই এই নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। আছড়ে পড়তে পারে উপকূলীয় এলাকায়। ফলে গুজরাতের বিস্তীর্ণ অংশে শুক্রবারও প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা থাকছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
এই আবহে গুজরাতের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রশাসন। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে গুজরাতের বিস্তীর্ণ অংশে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে।
তবে প্রশাসনের চিন্তা এবং উদ্বেগ বাড়িয়ে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবারও গুজরাতের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি হবে।
মৌসম ভবন বলছে, গুজরাতের সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছের উপর গভীর নিম্নচাপ পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সরে যেতে পারে এবং কচ্ছ ও তদ্সংলগ্ন পাকিস্তান উপকূল থেকে উত্তর-পূর্ব আরব সাগরে গিয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
যদি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তা হলে তার নাম হবে আসনা। এই নাম পাকিস্তানের দেওয়া।
তবে আসনা যে সে ঘূর্ণিঝড় নয়। গত ৮০ বছরে মাত্র চার বার এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় দেখা গিয়েছে। নিম্নচাপ সাধারণত তৈরি হয় সমুদ্রে। পরে তা শক্তি বৃদ্ধি করে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আছড়ে পড়ে স্থলে।
কিন্তু আসনার ক্ষেত্রে উল্টো। নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে স্থলে এবং এই নিম্নচাপ থেকে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে সমুদ্রে।
মৌসম ভবন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘কচ্ছ এবং আশপাশের এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপ ভূজের প্রায় ৯০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে অবস্থান করছে। শুক্রবার তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামী দু’দিনের মধ্যে উপকূল থেকে প্রায় পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে উত্তর-পূর্ব আরব সাগরের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে।’’
এই পরিস্থিতিতে গুজরাতের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সে রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টিপাত কমলেও বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর সে কারণেই উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রশাসনের।
উল্লেখ্য, ভারী বর্ষণের কারণে বিধ্বস্ত গুজরাতের বরোদা এবং রাজ্যের অন্যান্য বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীর জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কুমির।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে গুজরাতে মোট ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। গুজরাতে বিশ্বামিত্রি-সহ বেশ কয়েকটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদীর জল ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে।
গুজরাত সরকার জানিয়েছে, আরাবল্লী, দ্বারকা, পঞ্চমহল, ডাং, বারুরুচ, মোরবি এবং বরোদায় এলাকাগুলিতে কমপক্ষে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আনন্দে ছ’জন, আমদাবাদে পাঁচ জন, মহিসাগর এবং জামনগরে তিন জন মারা গিয়েছেন। গান্ধীনগর, খেদা, মহিসাগর, দাহোড় এবং সুরেন্দ্রনগর জেলায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।
এই পরিস্থিতিতে ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকাগুলি থেকে প্রায় ১,২০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে চলছে উদ্ধারকাজ।
উল্লেখ্য, গুজরাতের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেবভূমি দ্বারকা, জামনগর, রাজকোট এবং পোরবন্দর জেলায়। শুধু দেবভূমি দ্বারকাতেই ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বামিত্রি নদী বরোদা শহরের মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে বর্তমানে নদীর জল বিপদসীমার ৯ ফুট উপর দিয়ে বইছে। ফলে নদীর জল ঢুকে পড়েছে বরোদা এবং আশপাশের নিচু এলাকাগুলিতে।
বিশ্বামিত্রি নদী থেকে জলের পাশাপাশি একাধিক কুমিরও ঢুকে পড়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ জনগণের মধ্যে।
বরোদা শহর এবং আশপাশের লোকালয়ে কুমির ঘুরে বেড়ানোর বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে সমাজমাধ্যমে। প্রকাশ্যে এসেছে অডি-সহ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির ভেসে যাওয়ার ভিডিয়োও। (যদিও ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )।
বরোদা এবং আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা প্লাবনের পাশাপাশি কুমিরের আতঙ্কেও তটস্থ। প্লাবিত এলাকাগুলিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, কুমিরের ভয়ে ঘরের ভিতরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। যদিও বেশ কয়েকটি কুমিরকে প্রশাসনের তরফে ধরা হয়েছে।
গুজরাতের জলমগ্ন এলাকাগুলিতে ত্রাণসামগ্রীর জন্য হাহাকারও চলছে। ঘরের মধ্যে আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। একাধিক ভবন জলের তলায় চলে গিয়েছে।