যে দিকে চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসের ছবি। ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। চারদিকে স্বজনহারাদের কান্না, আর্তনাদ। বিধ্বংসী টাইফুন ইয়াগির হানায় এমনই অবস্থা ভারতের প্রতিবেশী মায়ানমারের।
বিধ্বংসী চেহারা নিয়ে রবিবার মায়ানমারের স্থলভাগে প্রবল শক্তিতে আছড়ে পড়েছে টাইফুন ইয়াগি।
ঝড়ের তাণ্ডবে মায়ানমারে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। অনেকেই নিখোঁজ। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইয়াগির দাপটে মায়ামারের বহু গাছ, বাড়ি, গাড়ি ভেঙে পড়েছে। অনেক বাড়িঘর বন্যায় ভেসে গিয়েছে। শক্তিশালী ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে মায়ানমারের বহু এলাকা।
মায়ানমারের ক্ষমতাসীন জুন্টা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইয়াগির তাণ্ডবে এখনও পর্যন্ত সে দেশের ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ৬৪ জন।
যদিও বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। আমেরিকার মদতপুষ্ট বেতার সংস্থা ‘রেডিয়ো ফ্রি এশিয়া’ জানিয়েছে, ইয়াগির তাণ্ডবে মায়ানমারে কমপক্ষে ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মায়ানমারের ৩ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিককে ইতিমধ্যেই অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
মায়ানমারে সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৭৫টি স্কুল এবং একটি মঠ-সহ প্রায় ৬৬ হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা ভেসে গিয়েছে।
ইয়াগিকেই চলতি বছরে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
শুধু মায়ানমার নয়, এই টাইফুনের প্রভাব পড়েছে ভিয়েতনাম, লাওস থেকে শুরু করে হাইনান এবং ফিলিপিন্সেও।
মায়ানমারে পৌঁছনোর আগেই ইয়াগির কবলে পড়ে কমপক্ষে ২৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তর ভিয়েতনামে আছড়ে পরার পর থেকে একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ইয়াগি। যদিও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মারাত্মক ক্ষতি করেছে সেই টাইফুন।
মধ্য মায়ানমারের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে কেয়াহ, কায়িন, মান্দালয়, সোম এবং শান রাজ্যগুলি।
মায়ানমারের তথ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার কর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে। ক্রমাগত খাদ্য এবং পানীয় জলও সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং সেতু মেরামতের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।
আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যেই মায়ানমারে ইয়াগির প্রভাব কমবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
যদিও আগামী সপ্তাহে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আরও একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে টাইফুন এবং হারিকেনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আছড়ে পড়ার ঘটনা আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে মায়ানমারের প্রাক্তন শাসক তথা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেত্রী আং সান সু চির রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে মায়ানমারে ক্ষমতা দখল করে।
কিন্তু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ায় সে দেশের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সু চি ও তাঁর সহযোগী নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।