ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’ আঘাত হেনেছে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১২ মিনিটে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাত দেড়টা নাগাদ ওড়িশার ভিতরকণিকার মধ্যে দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড়ের সামনের অংশ।
সেই ‘ল্যান্ডফল’ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তবে দুই রাজ্যেই, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকাগুলিতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত। যদিও যেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর শোনা যায়নি দুই রাজ্য থেকেই।
এক দিকে যেমন ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ ‘ডেনা’র মোকাবিলা করছে, ঠিক তখনই প্রবল ঝড়ে কার্যত লন্ডভন্ড দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপিন্স। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ‘ট্রামি’ আছড়ে পড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘ট্রামি’র দাপটে ফিলিপিন্সের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখনও পর্যন্ত ঘরছাড়া। সরকারি কর্তারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ফিলিপিন্সের উত্তর-পূর্ব উপকূলের স্থলভাগের কাছে ঝড় আছড়ে পড়ার কারণে এই অবস্থা হয়েছে।
‘ট্রামি’ স্থানীয় ভাবে তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ‘ক্রিস্টিন’ নামে পরিচিত। ইসাবেলা প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডিভিলাকানে বৃহস্পতিবার আছড়ে পড়ে এই ঝড়।
যার প্রকোপে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় ফিলিপিন্সের উত্তর-পূর্ব উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রবল বর্ষণে জায়গায় জায়গায় ভূমিধসও হয়। ‘ট্রামি’র প্রভাব পড়েছে ফিলিপিন্সের প্রধান দ্বীপ লুজোনের জনজীবনের উপরেও।
সমুদ্রের সুউচ্চ ঢেউ এসে ভাসিয়ে দিয়ে গিয়েছে উত্তর-পূর্বের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিকে। সমুদ্র তীরবর্তী অনেকগুলি গ্রামে বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে।
সমুদ্রের জলের সঙ্গে বয়ে আসা কাদা এবং আগ্নেয়কাদায় বহু গাড়ি এবং বাড়িঘর কার্যত চাপা পড়ে গিয়েছে। সেই সব ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে।
ফিলিপিন্সের আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ফিলিপিন্সে তাণ্ডব চালিয়ে সর্বোচ্চ ৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝড়টি পশ্চিম দিকে কর্ডিলেরার উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল পেরিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে চলে গিয়েছে।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ঝড়বৃষ্টির কারণে মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্য বাইকল অঞ্চলের বাসিন্দা। বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে জলে ডুবে এবং ধসে চাপা পড়ে।
বৃহস্পতিবার বাইকল অঞ্চলের নাগা শহর-সহ বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।
তবে ডিভিলাকানে শহরের দুর্যোগ বিভাগের প্রধান ইজিকিয়েল শ্যাভেজ জানিয়েছেন, সেই শহরে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
ভারী বৃষ্টি ও বন্যার আশঙ্কায় ফিলিপিন্স সরকার ব্যবসা এবং স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ।
ফিলিপিন্সের ‘সিভিল ডিফেন্স অফিস’ জানিয়েছে, দ্বীপরাষ্ট্রের প্রায় দু’লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় শিবিরগুলিতে। জলের ঢেউ বাড়ির ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পরে অনেকেই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন।
বৃহস্পতিবার সে দেশের অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে সারা দেশে অন্তত এক ডজন বিমান বাতিল করা হয়েছে। ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দু’দিনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা এবং আর্থিক লেনদেন বন্ধ করেছে।
উল্লেখ্য, ফিলিপিন্সে সাধারণত বছরে গড়ে ২০টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় হয়। যার ফলে প্রায়শই ভারী বৃষ্টিপাত, ঝড় এবং ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটে।