নামে মিল রয়েছে। সাদৃশ্য এতটাই যে, চট করে দেখলে দু’টি নাম আলাদা করতে পারবেন না অনেকে। তফাত কেবল একটি মাত্র অক্ষরের। এক জন ‘ফ’, অন্য জন ‘ভ’।
কথা হচ্ছে উরফি জাভেদ এবং উরভি সিংহকে নিয়ে। দু’জনেই বিনোদন জগতে বেশ পরিচিত মুখ। তবে তাঁদের জনপ্রিয়তার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বরং তা একে অপরের বিপরীত।
সমাজমাধ্যমে নানা রকমের উদ্ভট পোশাক পরে ছবি পোস্ট করেন উরফি। কখনও সাইকেলের চেন, কখনও সরু কালো ফিতে, লজ্জা নিবারণের রকমারি উপায় খুঁজে নেন। কখনও আবার কিছু না পরেই ক্যামেরার সামনে চলে আসেন।
উরফিকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে চর্চার শেষ নেই। বেশির ভাগ সমালোচক তাঁর পোশাক-ভাবনা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেন। তবে কটাক্ষে তিনি কান দেন না। বরং তাঁর পোশাক দিন দিন আরও উদ্ভট, আরও অভিনব হয়েই চলেছে।
আর উরভি? উদ্ভট পোশাক তো দূর, স্বল্পবসনে তাঁকে প্রায় দেখাই যায় না। ওয়েব সিরিজ়েও উরভির চরিত্রে থাকে নম্রতার ছাপ।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মুক্তি পায় ‘কোটা ফ্যাক্টরি’। ৫ এপিসোডের এই ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছিলেন উরভি। ‘কোটা ফ্যাক্টরি’-র মিনাল রূপেই উরভির জনপ্রিয়তা।
কোটায় থেকে বাকিদের সঙ্গে মিনালও আইআইটি-তে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই চলছিল বৃহত্তর জীবনের প্রস্তুতি। আর মিনাল ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই আইআইটি-র যোগ্য। কারণ দিন-রাত বই নিয়ে থাকতেই তিনি ভালবাসতেন।
ওয়েব সিরিজ় হিসাবে ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পার্শ্বচরিত্রে নজর কাড়েন উরভি। এর পর ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পায় নেটফ্লিক্সে। সেখানেও ছিলেন উরভি।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’র পর আরও কয়েকটি ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করেছেন উরভি। তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। মাত্র ২০ বছরেই বিনোদন জগতে নিজের জায়গা পাকা করতে পেরেছেন তিনি।
উরভিকে দেখা গিয়েছে ‘ক্রাশ্ড’ ওয়েব সিরিজ়ে। এ ছাড়া তিনি ‘হামারি বহু সিল্ক’, ‘ফার্স্টস’ নামের টেলিভিশন ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’কে জীবনের বড় ব্রেক বলে স্বীকার করে নিয়েছেন উরভি। লখনউ থেকে আসা অভিনেত্রী সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমি অনেক দিন ধরে অনেক অডিশন দিচ্ছিলাম। কোটার অডিশনের সময় ওঁরা এক জন সাধারণ মেয়েকে খুঁজছিলেন, যে পড়াশোনা নিয়ে থাকে। আমি সে সময় স্টাইলের জন্য শূন্য পাওয়ারের একটি চশমা পরতাম। মিনালের চরিত্রের সঙ্গে আমার মিল খুঁজে পান নির্মাতারা। সেখান থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার পরিচিতি তৈরি হয়েছে।’’
উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ে বেড়ে ওঠার ফলে হিন্দি বিনোদনের দুনিয়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি করতে সুবিধা হয়েছে বলে মনে করেন উরভি। স্থানীয় ভাষা, স্থানীয় বাচনভঙ্গিতে তিনি সড়গড়। যে কারণে কাজ পেতে সুবিধা হয়েছে।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’তে মিনালের চরিত্রে কাজ করতে উরভি সহায়তা করেছে আরও একটি বিষয়। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর দাঁতে চিকিৎসার জন্য তার বসানো হয়েছিল। এতে রুপোলি পর্দায় কেরিয়ারে ব্যাঘাত ঘটবে বলেই মনে করেছিলেন উরভি। কিন্তু দেখা যায়, সেটাই কাজে লেগেছে। দাঁত দেখেই উরভিকে মিনালের চরিত্রের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন নির্মাতারা।
লখনউতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে মুম্বই চলে এসেছিলেন উরভি। তার পর শুরু হয় অডিশনের পালা। বয়স এবং রূপের কারণে আপাতত কমবয়সি ছাত্রীর চরিত্রেই সুযোগ পেয়েছেন। তবে আগামী দিনে সব রকমের চরিত্রে কাজ করতে চান, জানিয়েছেন উরভি।
শুধু অভিনয় নয়, উরভির আরও গুণ আছে। তিনি বর্তমানে বি.কম পড়ছেন। মুম্বই চলে আসার আগে তিনি লন টেনিস খেলতেন। জাতীয় স্তরে লন টেনিস খেলে এসেছেন উরভি। তবে বিনোদনের ছায়ায় খেলাধুলার সেই কেরিয়ার ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
সমালোচক মহলে ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে উরভির কাজ। ইনস্টাগ্রামেও তাঁর অনুরাগী সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অদূর ভবিষ্যতে তিনি আরও ভাল কাজ করবেন, আশাবাদী অনুরাগীরা।