ভারতের বিনোদন জগতে ভোজপুরী ছবি, গানের জনপ্রিয়তা কম নয়। সমাজমাধ্যমেও ভোজপুরী ভাষার নানা ভিডিয়ো নিয়ে চর্চা লেগেই থাকে। সেই ভোজপুরী সিনেমার জগতে যেন কালি লেপে দিলেন এক অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী সুমন কুমারী ভোজপুরী ছবির পরিচিত মুখ। একাধিক ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। তবে সম্প্রতি বিনোদনের পাতায় নয়, অপরাধের পাতার শিরোনামে উঠে এসেছে সুমনের নাম।
অভিনেত্রী সুমনকে শুক্রবার রাতে মুম্বইয়ের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখা আগে থেকে ছক কষে ওই হোটেলে হানা দিয়েছিল। হাতেনাতে ধরা পড়েন মধুচক্রের ‘মক্ষীরানি’ সুমন।
ভোজপুরী সিনেমায় কাজের মাধ্যমে পরিচিতি গড়ে তুললেও বিনোদন জগতের প্রথম সারিতে পৌঁছতে পারেননি সুমন। মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগও আসেনি তেমন। কেরিয়ার গড়ার দিকে মন না দিয়ে তাই তিনি রোজগারের অন্য পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তিনি।
সুমনের আসল নাম সুমন যাদব। ভোজপুরী সিনেমায় তিনি সুমন কুমারী টেটু গোপি নামে পরিচিত। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা কম নয়। সুমনের কীর্তির কথা জানতে পেরে তাঁরা হতাশ এবং বিস্মিত।
ভোজপুরীতে মূলত যে ছবির জন্য সুমনের পরিচিতি, তার নাম ‘লায়লা মজনু’। এই ছবিটিতে একটি পার্শ্বচরিত্রে কাজ করেছিলেন সুমন। ছবিতে তাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছিল দর্শকদের একাংশের।
এ ছাড়া, ‘বাপ নম্বরি বেটা ১০ নম্বরি’ নামের একটি কমেডি শো ভোজপুরী বিনোদন জগতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সেখানেও ছিলেন সুমন। তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এ ভাবেই।
২৪ বছর বয়সি এই ভোজপুরী অভিনেত্রীকে বেশ কয়েকটি হিন্দি এবং পঞ্জাবি গানের ভিডিয়োতে মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছে। ভোজপুরী গানের ভিডিয়োতেও সমান জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন তিনি।
গত ৬ বছর ধরে মুম্বইতেই থাকছিলেন সুমন। তাঁর মধুচক্রের ব্যবসাও দীর্ঘ দিনের বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোপন সূত্র মারফত এই মধুচক্রের বিষয়ে তারা খবর পেয়েছিল। তার পর ফাঁদ পেতে অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিনয়ের আড়ালে ঠিক কী করতেন সুমন? অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে তিনি মডেল ‘বিক্রি’ করতেন। জোর করে মডেলদের যৌনপেশায় আসতে বাধ্য করতেন সুমন এবং তাঁর সঙ্গীরা। শুক্রবার ওই হোটেল থেকে তিন জন মডেলকে উদ্ধারও করেছে পুলিশ।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জানতে পেরেছে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে যে সব তরুণী কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই আসতেন, তাঁদের ‘টার্গেট’ করতেন এই সুমন। তাঁর ফাঁদে পড়তেন মূলত আর্থিক ভাবে অসচ্ছল উঠতি মডেলরা।
প্রত্যেক মডেলের মূল্য নির্ধারণ করতেন সুমন। কারও জন্য ৫০ হাজার টাকা নিতেন। কারও জন্য আবার দর হাঁকাতেন ৮০ হাজার পর্যন্ত। উঠতি মডেলদের বাণিজ্যনগরীর অন্ধকার গলিতে ঠেলে দিতেন ভোজপুরী অভিনেত্রী।
এই মধুচক্রের পাণ্ডাকে হাতেনাতে ধরার জন্য পুলিশই এক জনকে আরে কলোনি এলাকার নামী হোটেলটিতে পাঠায়। নকল ‘এজেন্ট’ সেজে সুমনের কাছে যান পুলিশের চর। সুমন তাঁর কাছেও মডেল নিয়ে দর কষাকষি করতে গেলে ধরা পড়ে যান।
সুমনকে আপাতত হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। তাঁর বিরুদ্ধে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, বি-টাউনে দিন দিন মধুচক্রের রমরমা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে চিন্তিত মুম্বই পুলিশ।
পুলিশের তরফে মধুচক্র নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনও রকম সন্দেহজনক আচরণ বা ঘটনা দেখলে দ্রুত পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে।