Criminal

Akku Yadav: ৭০ বার কুপিয়ে আদালত কক্ষেই আক্কু যাদবকে খুন করেন শতাধিক মহিলা! ভয়ে পালিয়ে যায় পুলিশও

নাগপুরের ভরত কালীচরণ ওরফে আক্কু যাদবকে আদালতের কক্ষে হত্যা করা হয়। শুধু গণপিটুনি নয়, বার বার ছুরির কোপ পড়ে আক্কুর গলা-বুক-পেটে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ১২:২১
Share:
০১ ২১

আদালত কক্ষের মধ্যেই অপরাধীকে পিটিয়ে এবং ছুরির কোপ মেরে খুন করল ক্ষিপ্ত জনতা। শুনে মনেই হতে পারে এ কোনও বলিউড সিনেমার চিত্রনাট্য। আজ থেকে ১৭ বছর আগে বাস্তবেই এ রকম এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল নাগপুর।

০২ ২১

নাগপুরের ভরত কালীচরণ ওরফে আক্কু যাদবকে আদালতের কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শুধু গণপিটুনি নয়, বারবার ছুরির কোপ পড়ে আক্কুর গলা-বুক-পেটে। এমনকি আক্কুর যৌনাঙ্গও কেটে ফেলা হয়।

Advertisement
০৩ ২১

আক্কু ছিল নাগপুরের এক জন কুখ্যাত অপহরণকারী, ধর্ষক, তোলাবাজ এবং সিরিয়াল কিলার। তার এমনই দাপট ছিল যে, পুলিশ-প্রশাসনও তার নামে কাঁপত।

০৪ ২১

২০০৪ সালের ১৩ অগস্ট নাগপুর জেলা আদালতের ৭ নম্বর আদালত কক্ষে আক্কুর জামিন পাওয়া নিয়ে একটি শুনানি চলছিল। আশেপাশের এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, আদালতে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারে।

০৫ ২১

আক্কুর অত্যাচারে জর্জরিত কস্তুরবা নগর বস্তির বাসিন্দারা তার জামিনের সম্ভাবনার খবরে একদমই খুশি ছিলেন না। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে, সকলে শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ আক্কুকে হেফাজতে রাখার এবং তার পর তাকে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল।

০৬ ২১

আক্কু ছাড়া পেতে পারে এই খবর শুনেই কয়েকশো মহিলা নাগপুরের কস্তুরবা নগর বস্তি এলাকা থেকে ছুরি, লঙ্কার গুঁড়ো নিয়ে মিছিল করতে করতে আদালতের দিকে পৌঁছন। রায় শোনার ‌জন্য আগ্রহী মহিলারা আদালতের কক্ষে ঢুকে যান।

০৭ ২১

পুলিশ আক্কুকে নিয়ে আদালত কক্ষে ঢুকতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই মহিলারা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আক্কু যখন আদালত কক্ষে প্রবেশ করছে তখন নাকি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা লক্ষ করা যায়নি।

০৮ ২১

দুপুর ৩টে নাগাদ পুলিশের ঘেরাটোপে আদালত কক্ষে ঢুকেই আক্কু এমন এক জন মহিলাকে দেখতে পায়, যাকে সে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ ছিল। ওই মহিলাকে আদালত কক্ষে দেখতে পেয়েই তাকে উপহাস করা শুরু করে আক্কু। মহিলাকে যৌনকর্মী বলে উপহাস করতে শুরু করে। এমনকি, তাকে আবারও ধর্ষণ করবে বলে হুমকিও দেয়।

০৯ ২১

আক্কুর এই হুমকি শুনে আর স্থির থাকতে পারেননি উপস্থিত মহিলারা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সামনের এক মহিলা চপ্পল দিয়ে আক্কুর মাথায় মারতে শুরু করেন। চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, ‘‘আমরা দু’জন একসঙ্গে এই পৃথিবীতে থাকতে পারব না। হয় এই শয়তান বেঁচে থাকবে নয়তো আমি বেঁচে থাকব।’’

১০ ২১

ওই মহিলার দেখাদেখি আক্কুর উপর চড়াও হন কয়েকশো মহিলা। প্রথমে ওই মহিলারা আক্কুর উপর লাথি-ঘুঁষি চালাতে থাকলেও পরে ছুরি বার করে কোপাতে শুরু করেন। কমপক্ষে ৭০ বার কোপানো হয় তাকে। পাশাপাশি, আক্কুর চোখে-মুখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

১১ ২১

আক্কুকে যে পুলিশকর্মীরা পাহারা দিচ্ছিলেন তাঁদের মুখেও লঙ্কার গুঁড়ো ছুড়ে দেন মহিলারা। এক জন মহিলা ছুরি দিয়ে আক্কুর যৌনাঙ্গ কেটে ফেলেন। আদালত কক্ষের মার্বেলের মেঝে ভিজে যায় রক্তে। আতঙ্কে প্রাথমিক ভাবে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালান পুলিশকর্মীরাও।

১২ ২১

আক্কুকে মারধর করার সময় সে ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। বলতে থাকে, ‘‘আমাকে ক্ষমা করুন। আমি আর এ রকম কিছু করব না।’’ তার পরও চলতে থাকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত। শোনা যায়, উপস্থিত প্রত্যেক মহিলাই তাকে ছুরি মারার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ছুরি দিয়ে কোপানো হয় আক্কুকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৩২ বছর বয়সি আক্কুর।

১৩ ২১

উপস্থিত মহিলারা জানিয়েছিলেন, আক্কুকে খতম করার পরিকল্পনা তাঁরা আগে থেকে করেননি। হঠাৎই রাগের বশে এই কাজ করেন তাঁরা।

১৪ ২১

কয়েক জন মহিলা কস্তুরবা নগরে ফিরে এসে আক্কুর মৃত্যুর খবর দেওয়ার পর রাস্তাতেই নাচ-গান করে উদ্‌যাপন শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খুনে জড়িত সন্দেহে পাঁচ জন মহিলাকে গ্রেফতার করা হলেও শহর জুড়ে বিক্ষোভ শুরুর পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই এলাকায় বসবাসকারী প্রত্যেক মহিলাই এই খুনের দায় স্বীকার করেন।

১৫ ২১

আক্কুকে সম্মিলিত ভাবে খুনের প্রায় এক দশক পরে, অভিযুক্ত সমস্ত মহিলাকেই উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়।

১৬ ২১

আক্কুর জন্ম ১৯৭১ সালে। কমপক্ষে তিন জনকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বস্তির সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করা ছিল তার নিত্য কাজ। এ ছাড়াও একাধিক অপহরণ, ডাকাতি এবং ৪০-এরও বেশি মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, অপরাধ ঢাকতে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে হাতে রাখত আক্কু।

১৭ ২১

আক্কু এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১০ বছর ধরে একাধিক মহিলাকে যৌননিগ্রহ এবং গণধর্ষণের অভিযোগ ছিল। যাঁরা প্রতিবাদ করতেন, তাঁদের মারধর করে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হত বলেও অভিযোগ উঠেছিল।

১৮ ২১

কস্তুরবা নগরের বাসিন্দাদের দাবি ছিল, সেই বস্তির কম-বেশি প্রত্যেক বাড়িতেই অন্তত এক জন মহিলা ছিলেন যিনি আক্কুর লালসার শিকার। আক্কুর বিরুদ্ধে ১২ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগও ছিল।

১৯ ২১

বস্তির বাসিন্দাদের মতে, আক্কুর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে একাধিক বার পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিত না। তাই আক্কুর বিরুদ্ধে নাকি থানায় কখনও একটিও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও উঠেছিল যে, কোনও মহিলা যৌননিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলে সেই মহিলাদের চরিত্রে আঙুল তুলে থানা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হত।

২০ ২১

আক্কুর নৃশংসতার কথা কস্তুরবা নগরের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরত। অভিযোগ ছিল, আক্কু এবং তার কিছু সহযোগী এক বার কলমা নামে এক মহিলাকে সন্তানপ্রসবের ১০ দিনের মাথায় গণধর্ষণ করে। এর পর কলমা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এমনকি, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাকে আক্কু এবং তার সহযোগীরা নাকি প্রকাশ্য দিবালোকে ধর্ষণ করে।

২১ ২১

মৃত্যুর আগে, আক্কুকে প্রায় ১৪ বার গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু প্রতি বারই উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে সে ছাড়া পেয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement