একটা চালু কথা ছিল তাঁর সম্পর্কে— তিনি যে শেয়ারে হাত দিতেন, তাতেই সোনা ফলত। রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে এই কারণেই তাঁকে বলা হল ভারতীয় শেয়ার বাজারের ‘বিগ বুল’। এমনকী লকডাউনের সময় যখন দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, তখনও তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৮৫ সালে প্রথম পাঁচ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন রাকেশ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর অঙ্কটা বেড়ে হয় ১১ হাজার কোটি টাকা।
বাবা ছিলেন আয়কর দফতরের আধিকারিক। তাঁরও দারুণ আগ্রহ ছিল শেয়ার বাজারে। বাবার থেকেই শেয়ার বাজারের প্রতি ঝোঁক বাড়ে রাকেশের।
১৯৬০ সালের ৫ জুলাই হায়দরাবাদের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম রাকেশের। বড় হয়েছেন মুম্বইয়ে। সিডেনহ্যাম কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকনমিক্স থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। এর পর পড়াশোনা করেন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়া থেকে।
অনেক দিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন রাকেশ। চলছিল ডায়ালিসিস। রবিবার সকালে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
শেয়ার বাজারের পর হাত দিয়েছিলেন বিমান পরিষেবা ব্যবসায়। শুরু করেছিলেন অকাসা এয়ারলাইনস। সংস্থায় রাকেশের শেয়ারের পরিমাণ ৪০ শতাংশ।
সংস্থার অন্যতম দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন আদিত্য ঘোষ, বিনয় দুবে। আদিত্য ছিলেন ইন্ডিগো বিমান সংস্থার প্রাক্তন চিফ এগ্জিকিউটিভ। আর বিনয় ছিলেন জেট এয়ারওয়েজ সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ।
গত রবিবার, ৭ অগস্ট প্রথম বার আকাশে ওড়ে সংস্থার বিমান। মুম্বই থেকে আমেদাবাদ উড়ে যায় প্রথম বিমান। শুক্রবার থেকে বেঙ্গালুরু-কোটি রুটেও শুরু হয় অকাসা সংস্থার বিমান পরিষেবা।
অকাসা এয়ারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও বিনয় দুবে রবিবার বলেন, ‘‘রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই। রাকেশকে ধন্যবাদ জানানোর সীমা নেই আমাদের, কারণ তিনি আমাদের উপর ভরসা করেছিলেন। অকাসার মতো বিশ্ব মানের বিমান সংস্থা তৈরির ক্ষেত্রে তিনি আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন।’’
রাকেশের কথা বলতে গিয়ে বিনয় জানিয়েছেন, কাজের প্রতি, দেশের প্রতি, দেশবাসীর প্রতি অদম্য আবেগ ছিল তাঁর। সংস্থার প্রত্যেক কর্মীর কথা ভাবতেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ঝুনঝুনওয়ালার উত্তরাধিকার, মূল্যবোধ, বিশ্বাসকে সম্মান করবে অকাসা এয়ার। একদিন বিশ্ব মানের এক বিমান সংস্থা হবে।’’
এখন দু’টি বিমান নিয়ে পরিষেবা শুরু করেছে সংস্থা। পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি মাসে একটি করে নতুন ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান যোগ দেবে সংস্থায়।
লক্ষ্য রয়েছে, ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে সংস্থার বিমান সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮ করা হবে। তখন সারা দেশে ১৮টি বিমান উড়বে সংস্থার। আগামী চার বছরে আর ৫৪টি বিমান ধীরে ধীরে যোগ দেবে সংস্থায়। তখন গোটা দেশে অকাসা সংস্থার ৭২টি বিমান উড়বে।
গত বছর অক্টোবরে অকাসা সংস্থাকে বিমান পরিষেবা চালুর ছাড়পত্র দেয় কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান মন্ত্রক। গত মাসে সংস্থাকে বিমান ওড়ানোর ছাড়পত্র দেয় ডিজিসিএ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিজেদের ব্র্যান্ডের প্রতীক প্রকাশ করে সংস্থা— ‘রাইজিং এ’। আকাশের বিভিন্ন উপাদান থেকে প্রভাবিত হয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রতীক। উদিত সূর্যের উষ্ণতা, পাখির উড়ান চিহ্নিত হয়েছে এই প্রতীকে।
সংস্থার ট্যাগলাইন ‘এটা তোমার আকাশ’। রাকেশের ভাবনা ছিল, দেশের সর্বস্তরের মানুষই যাতে বিমান পরিষেবা পেতে পারেন। তাই আম আদমির জন্যই মূলত চালু করেছেন তাঁর বিমান সংস্থা, যার টিকিট মূল্য থাকবে সাধ্যের মধ্যে। ইন্ডিগো, স্পাইসজেটের মতো সংস্থার সঙ্গে মূল প্রতিযোগিতা অকাসার। রাকেশের ভাবনা মতোই সংস্থা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান সংস্থার অন্য দুই মালিক।