সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তা— এই দুইয়ের মিশেল খুব কম নারীর মধ্যেই নাকি দেখা যায়। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছে ২৬ বছরের ঐশ্বর্যা শেরনের মধ্যে। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এক জন মডেল হিসাবে। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে খেতাবও জেতেন। সেই সুন্দরীই হয়ে গেলেন আইএএস অফিসার। মডেল থেকে ঐশ্বর্যার আইএএস অফিসার হওয়ার কাহিনি সত্যিই চমকপ্রদ।
১৯৯৭ সালের ১১ মার্চ জন্ম ঐশ্বর্যার। রাজস্থানের চুরুতে এক বর্ধিষ্ণু পরিবারের কন্যা তিনি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পরিবেশ ছিল তাঁর বাড়িতে।
ঐশ্বর্যের বাবা অজয় কুমার এনসিসি তেলঙ্গানা ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার। তাঁর মা সুমন শেরন গৃহবধূ। ঐশ্বর্যার এক ভাইও রয়েছেন।
রাজস্থানে আদি বাড়ি হলেও ঐশ্বর্যার পড়াশোনা নয়াদিল্লিতে। রাজধানীর চাণক্যপুরীতে সংস্কৃত স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। স্কুল জীবনে মেধাবী ছিলেন ঐশ্বর্যা। বরাবরই স্কুলে প্রথম হতেন তিনি।
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেছিলেন ঐশ্বর্যা। পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ৯৭.৫ শতাংশ নম্বর। ভাল নম্বর থাকায় নয়াদিল্লির নামী কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। শ্রী রাম কলেজ অফ কমার্স থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল মেধাবী ঐশ্বর্যার। সেই সঙ্গে মডেল দুনিয়ার প্রতিও তাঁর আকর্ষণ ছিল। পড়াশোনা এবং গ্ল্যামার দুনিয়ার এ হেন মেলবন্ধন সচরাচর দেখা যায় না। আর এখানেই সকলকে বিস্মিত করেছেন ঐশ্বর্যা।
পড়াশোনার পাশাপাশি মডেল দুনিয়ার প্রতি ঝোঁক থাকায় র্যাম্পেও হাঁটেন ঐশ্বর্যা। ২০১৪ সালে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন। এর পর গ্ল্যামার দুনিয়াতেও সাফল্যের স্বাদ পেতে থাকেন ঐশ্বর্যা।
২০১৫ সালে ঐশ্বর্যার মাথায় ওঠে ‘মিস দিল্লি’র খেতাব। পরের বছর, অর্থাৎ, ২০১৬ সালে ভারত সুন্দরীর প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছিলেন তিনি। একাধিক ফ্যাশন শোয়ের র্যাম্পেও হাঁটেন তিনি।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা কিন্তু তাঁর জীবনের প্রথম লক্ষ্য ছিল না। ঐশ্বর্যার আসল লক্ষ্য ছিল এক জন আইএএস অফিসার হওয়া। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নিজের ইচ্ছেপূরণের পরই এ বার আসল লক্ষ্যপূরণে জোর দেন তিনি। শুরু করে দেন ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
কলেজ পাশের পর আইআইএম ইনদওরে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ঐশ্বর্যা। কিন্তু, সেই সুযোগ ছেড়ে দেন। ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করেন। শুরু হয় ঐশ্বর্যার ‘তপস্যা’।
সাল ২০১৮। সেই বছরই ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করেন ঐশ্বর্যা। প্রায় ১ বছর পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুতেই মন দেননি তিনি। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোনও শিক্ষক রাখেননি কিংবা কোনও কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হননি। নিজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন।
প্রথম বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেই সফল হন ঐশ্বর্যা। ২০১৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৯৩ র্যাঙ্ক করেন। মডেল থেকে হয়ে যান আইএএস অফিসার। ঐশ্বর্যার এই কাহিনি অনেককেই প্রেরণা জুগিয়েছে।
ইউপিএসসি এমন একটা পরীক্ষা, যেখানে সাফল্য পাওয়া বেশ কঠিন। ঐশ্বর্যা কী ভাবে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন? এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিল তাঁর কঠিন অধ্যাবসায়। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘পরীক্ষার প্রস্তুতিতে পুরোপুরি মন দিয়েছিলাম। ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম। সমাজমাধ্যম থেকেও দূরে ছিলাম।’’
ঐশ্বর্যা ছোট থেকেই মেধাবী। ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রমী। ঐশ্বর্যার সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল সেটাই। পরীক্ষার পর ফলের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। তবে একঘেঁয়ে লাগেনি তাঁর। এমনকি, অনিশ্চয়তাতেও ভোগেননি। বরং সেই সময় সিনেমা দেখে ভালই সময় কাটিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা।
মডেল হিসাবে সাফল্য পেয়েছিলেন। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার খেতাবও জেতেন। কিন্তু আইএএস হতে চাইলেন কেন? ঐশ্বর্যা বলেছিলেন, ‘‘দেশসেবা ছিল আমার লক্ষ্য।’’ আর সেই সেবাতেই নিজেকে নিয়োজিত করলেন ঐশ্বর্যা।