বিমানসেবিকার কাজ বরাবরই ঝকঝকে। আর সে কারণে তাঁদের বেশভূষাও বেশ কেতাদুরস্ত হয়। বিমানসেবিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন অনেক তরুণীই। এই স্বপ্নে বুঁদ হয়ে কয়েক জন তরুণী বিমানসেবিকা পদে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন। আর সেখানে তাঁরা যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন, তা এক দুঃস্বপ্নই বটে!
বিমানসেবিকাদের শরীরী ভাষা বরাবরই নজর কাড়ে। তাই বিমানসেবিকা হিসাবে কোনও তরুণীকে কাজে নেওয়ার আগে তাঁর শরীরী ভাষার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে থাকেন নিয়োগকর্তারা। আর তা করতে গিয়েই গুরুতর অভিযোগের মুখে পড়ল কুয়েত এয়ারওয়েজ়।
চাকরির ইন্টারভিউতে তরুণীদের জোর করে পোশাক খোলানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে কুয়েত এয়ারওয়েজ়ের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, তরুণীদের অন্তর্বাসও খোলার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
মাদ্রিদ বিমানবন্দরের কাছে মেলিয়া বরাজ়াস নামে একটি হোটেলে বিমানসেবিকা পদের জন্য ইন্টারভিউ পর্ব চলছিল। সেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া তরুণীদের শারীরিক হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
স্পেনের সংবাদমাধ্যমে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, কয়েক জন তরুণীর নাকি দাঁতও খুঁটিয়ে দেখেছেন নিয়োগকর্তারা। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া তরুণীদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছে।
বুকে একরাশ আশা নিয়ে বিমানসেবিকার চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন ২৩ বছরের মারিয়ানা। ইন্টারভিউ পর্বে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। যা নিয়ে রীতিমতো বিধ্বস্ত ওই তরুণী। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ এক সংবাদমাধ্যমকে।
মারিয়ানা জানিয়েছেন, ইন্টারভিউতে এক মহিলা নোটপ্যাড হাতে সব কিছু লিখছিলেন। তিনি তাঁর অন্তর্বাস খুঁটিয়ে দেখেন। মারিয়ানার কথায়, ‘‘নিজেকে চিড়িয়াখানার জন্তু মনে হচ্ছিল।’’
ইন্টারভিউ দিতে এমন অনেক তরুণী গিয়েছিলেন, যাঁদের ওজন বেশি ছিল। কারও চেহারা আবার স্থূল ছিল। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারভিউ পর্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
আবার কোনও চাকরিপ্রার্থীর চোখে চশমা ছিল, কারও আবার মুখে ব্রণ ছিল, তাঁদেরও নাম উঠেছে বাতিলের খাতায়। কেন এ ভাবে তাঁদের বাদ দেওয়া হল— জানতে চেয়েছিলেন কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী। জবাবে ইন্টারভিউয়ের দায়িত্বে থাকা এক মহিলা জানান যে, মুখে ব্রণ, দাগছোপ থাকলে, তাঁদের নিয়োগ করা হবে না।
মারিয়ানা নামের ওই তরুণী জানিয়েছেন, ইন্টারভিউ দিতে আসা এক তরুণী ৭টি ভাষা জানতেন। অথচ ইন্টারভিউতে পাশ করতে পারেননি তিনি। কারণ, তাঁর ভ্রুতে ছোট দাগ ছিল। ওই তরুণীকে মুখের উপর বলা হয় যে, দাগ থাকায় তাঁকে চাকরিতে নেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয় যে, ৭টি ভাষা জানাটা কোনও মাপকাঠি নয়।
মারিয়ানার মতো বিমানসেবিকা পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন ২৩ বছরের আরও এক তরুণী বিয়ানকা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ইন্টারভিউয়ের আগে এক তরুণী বেরিয়েছিলেন। তাঁর চোখে জল ছিল।
বিয়ানকা প্রথমে বুঝতে পারেননি ইন্টারভিউ দেওয়ার পর কেন ওই তরুণীর চোখে জল ছিল। হয়তো ভেবেছিলেন, ইন্টারভিউ ভাল হয়নি। কিন্তু, চোখের জলের আসল কারণটা বুঝতে পারলেন, যখন ইন্টারভিউ দিতে তাঁর ডাক পড়ল।
বিয়ানকার অভিযোগ, ইন্টারভিউ পর্বে তাঁকে পোশাক খুলতে বলা হয়েছিল। তাঁর অন্তর্বাসও খুঁটিয়ে দেখা হয়। যার জেরে রীতিমতো ঘাবড়ে যান তিনি।
বিয়ানকা বলেছেন, ‘‘ইন্টারভিউ পর্বে এক মহিলা আমায় মুখ বড় করে হাঁ করতে বলেন। এর পর আমার দাঁত খুঁটিয়ে দেখেন। মনে হচ্ছিল যেন, আমি কুকুর। খুব অপমানিত হয়েছি।’’
১৯ বছরের মারিয়ার অভিজ্ঞতাও ভাল নয়। তিনি জানিয়েছেন, অনেক চাকরিপ্রার্থীকে বলা হয় যে, ওজন কমাতে হবে। আবার কাউকে কাউকে বলা হয় যে, কিছুটা ওজন বাড়াতে হবে।
বিমানসেবিকার চাকরির ইন্টারভিউতে তরুণীদের এ হেন অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই বিমানসংস্থা কুয়েত এয়ারওয়েজ় কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।