স্পেনের এয়ারবাসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টাটা গোষ্ঠী বায়ুসেনার জন্য ভারতেই তৈরি করবে পরিবহন বিমান। গুজরাতে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কারখানা হবে মোদী-রাজ্যের বরোদায়।
আগামী ৩০ অক্টোবর, রবিবার সেই কারখানার শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ জন্য বিনিয়োগ হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। বরোদার কারখানায় হবে বিপুল কর্মসংস্থানও।
বরোদার এই কারখানায় সরাসরি ৬০০ জন উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মীকে নিয়োগ করা হবে। পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে তিন হাজারেরও বেশি। আরও তিন হাজার জনের বেশি অর্ধ প্রশিক্ষিত কর্মীর সরাসরি চাকরির সুযোগ হবে। এয়ারবাস ২৪০ জন ইঞ্জিনিয়ারকে স্পেনে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।
গত মাসেই কেন্দ্র এয়ারবাসের কাছ থেকে ৫৬টি বিমান কেনায় ছাড়পত্র দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১৬টি বিমান দেওয়া হবে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (রেডি টু ফ্লাই)। বাকি ৪০টি বিমান তৈরি হবে ভারতে।
সূত্রের খবর, ১৬টি বিমান ভারতের হাতে এসে পৌঁছবে আগামী বছর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫-এর অগস্টের মধ্যে। গুজরাতের কারখানায় তৈরি প্রথম বিমান উড়তে পারে ২০২৬-এর সেপ্টেম্বরে।
ভারতীয় বায়ুসেনার অ্যাভ্রো বিমানের বদলি খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগে। অবশেষে অ্যাভ্রোর বদলি হিসেবে পাওয়া যায় এয়ারবাসের সি-২৯৫ বিমানকে। দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হয় স্পেনের এয়ারবাসের সঙ্গেই চুক্তি করা হবে।
মূলত, বায়ুসেনার পরিবহন বিমান হিসেবে এত দিন কাজ করে চলা অ্যাভ্রোর পরিবর্তে সি-২৯৫ ব্যবহার হবে। কেমন সেই বিমান? অত্যাধুনিক এই বিমানের সঙ্গে অ্যাভ্রোর মূল পার্থক্য প্রযুক্তিতে।
সি-২৯৫ বিমানটি একটি বিশেষ কৌশলগত পরিবহন বিমান। যে কোনও উচ্চতায় এক বারে ৭১ জন যাত্রী বা ৫০ জন প্যারাট্রুপারকে বহন করতে পারে সি-২৯৫। যা অ্যাভ্রোতে সম্ভব ছিল না।
সি-২৯৫ বিমানটি প্যারাট্রুপার ছাড়াও বিভিন্ন ওজনের পণ্য বহন এবং অন্যান্য কাজে পারদর্শী। এছাড়াও চিকিৎসার প্রয়োজনেও এই বিমান রোগীকে উড়িয়ে আনতে সক্ষম। যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ও এই ধরনের বিমান ব্যবহারে উপযোগী। সমুদ্রতট রক্ষায়ও সমান পারদর্শী।
৫ থেকে ১০ টন ওজন বহনে সক্ষম সি-২৯৫ বিমানের পিছনের দিকে রয়েছে একটি দরজা। ভারী ওজনের পরিবহন বিমানে খুব উচ্চতায় অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সি-২৯৫ এর ক্ষেত্রে তা কোনও সমস্যাই না।
সাধারণত, এত বড় বিমানের ওঠানামার জন্য প্রয়োজন হয় সম্পূর্ণ এয়ারস্ট্রিপ বা রানওয়ে। কিন্তু সি-২৯৫ ছোট রানওয়ে ধরেও উড়তে বা অবতরণ করতে সক্ষম। এমনকি অর্ধেক তৈরি কোনও রানওয়েতেও অনায়াসে উড়তে বা অবতরণে পারদর্শী সি-২৯৫।
‘ওয়াটার বম্বার’ হিসেবে অসাধারণ কার্যকর সি-২৯৫ বিমান। ভারতের বিভিন্ন অংশের জঙ্গলে আগুন নেভাতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায়। সে ক্ষেত্রে সি-২৯৫ বিমান অরণ্যে আগুন নেভাতে কাজে আসবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ছয় হাজার লিটার জ্বালানি নিয়ে অনায়াসে উড়তে সক্ষম সি-২৯৫।
ভারতে যে সি-২৯৫ বিমান তৈরি হবে তার মূল ইঞ্জিন, ল্যান্ডিং গিয়ার এবং অ্যাভিয়োনিক্স আসবে সোজাসুজি স্পেনের এয়ারবাস কারখানা থেকে। তা বরোদার কারখানায় জুড়ে জুড়ে বিমান তৈরি করবে টাটা গোষ্ঠী।
এই চুক্তির ফলে ভারত পৃথিবীর ৩৫তম দেশ হতে চলেছে যারা সি-২৯৫ বিমান ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমার জানান, এই প্রথম সি-২৯৫ বিমান ইউরোপের বাইরে কোথাও তৈরি হবে।
এ বছরই ভোট হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাতে। ক’দিন আগেই হিমাচলে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু গুজরাতের দিন ঘোষণা এখনও হয়নি। তার মধ্যেই খবর এল, প্রায় ২২ হাজার কোটির বিনিয়োগ আসতে চলেছে মোদী-শাহের রাজ্যে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, এই কারণেই কি এক সঙ্গে দুই রাজ্যে ভোট ঘোষণা হয়নি?