রবিবার সকাল থেকে আকাশের মুখভার ছিল। সমুদ্রে দেখা গিয়েছে উত্তাল ঢেউ। বেলা গড়ানোর সঙ্গে ঝড়বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। রবিবার রাতেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়ে রেমাল। রেমালের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। সাময়িক সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। সোমবার সকালে রেমাল দাপট কমিয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। তবে ভারী বর্ষণের কারণে জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে দুই ২৪ পরগনা এবং কলকাতার বিভিন্ন এলাকা। রেমাল আছড়ে পড়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পরও দিঘার সমুদ্রসৈকত উত্তাল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের রাস্তাঘাট বৃষ্টিতে ভেজা। সোমবার সকালেও বৃষ্টি থামেনি সেখানে।
ঝড়বৃষ্টির কারণে বারুইপুরের কিছু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে গিয়েছে। ব্যাহত যান চলাচল। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের।
শুধু রাস্তাঘাটেই নয়, ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার ফলে খেতজমিতেও জল জমে গিয়েছে। ক্যানিংয়ের চাষষোগ্য জমিও জলে টইটম্বুর।
সোমবার দিনভর বৃষ্টি থামেনি গোসাবা এলাকায়। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়াও।
বকখালির সমুদ্রসৈকতে পর্যটকেরা ঘুরতে গেলেই ‘আই লভ বকখালি’ লেখা গ্লো-সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করেন। রেমালের ঝড়ের দাপটে সেই সাইনবোর্ড থেকে ভালবাসার চিহ্নই উড়ে গিয়েছে। ‘ভালবাসা’ ছাড়া এখন একা দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘আমি বকখালি’। দুই শব্দের মাঝে এখন বিস্তর ব্যবধান।
বকখালি এলাকায় বাঁধ ভেঙে যেন জল ঢুকে না পড়ে, তার জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জলমগ্ন হয়ে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিমপীঠ। সোমবার সকালে বৃষ্টি থামেনি সেখানেও।
রেমালের ঝড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় লন্ডভন্ড অবস্থা। ঝোড়ো হাওয়া কোথাও উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে টিনের চাল, কোথাও বা বাগানের গাছ ভেঙে পড়ে গিয়েছে।
রবিবার বিকেল থেকেই দফায় দফায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিতে ভিজেছে নিউ টাউন। সোমবার দিনভর বৃষ্টি থামেনি সেখানে। রাস্তায় জলও জমে গিয়েছে। সকাল থেকেই নিউ টাউনের আকাশের মুখভার।
সম্প্রতি উপকূলের গা-ঘেঁষা মৌসুনি দ্বীপ পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনস্থলের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। দিঘা-মন্দারমণি-তাজপুর-শঙ্করপুর ছাড়া কাছেপিঠে কোথাও সমুদ্র দেখতে চাইলে পর্যটকেরা বেছে নিচ্ছেন এই দ্বীপকে। রেমালের ঝড়বৃষ্টিতে জল জমে গিয়েছে মৌসুনি দ্বীপেও।
সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কলকাতার মেট্রো পরিষেবা আংশিক ভাবে বন্ধ ছিল। রাস্তায় বাস-ট্যাক্সির সংখ্যাও ছিল কম। ফলে ছাতা মাথায় রাস্তার কোথাও কোথাও নিত্যযাত্রীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।
রেমালের জন্য রেল পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে। একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্টেশনের বৃষ্টিভেজা ছবি।
বকখালির সমুদ্রতটে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বয়ে চলেছে ঝোড়ো হাওয়া। উত্তাল থাকার কারণে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের।
সমুদ্রপ্রেমীদের প্রিয় জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম মন্দারমণি। সোমবার সেখানেও আকাশ মেঘলা এবং ঝড়বৃষ্টি হয়ে চলেছে অনবরত। আলিপুরের তরফে জানানো হয়েছে, শক্তি খুইয়ে ক্রমশ উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রেমাল। প্রতি ঘণ্টায় ঝড়টির গতিবেগ ১৫ কিলোমিটার। বিকেলের দিকে ঝড়টি আরও খানিকটা শক্তি কমিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। রাতের দিকে গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হয়ে সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হবে।