অনিয়ন্ত্রিত মাদক, সুরা ও অত্যধিক নারীসঙ্গ! এক নিমেষে উড়ে গেল ৮৬ কোটি টাকা। ভাগ্যের জোরে কয়েক কোটি টাকার মালিক হলেও বেহিসাবি জীবনের গোলোকধাঁধায় পড়ে নিঃস্ব হন কয়েক বছরেই।
মাইকেল ক্যারল। ব্রিটিশ এই যুবক ২০০২ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ব্রিটেনের জাতীয় লটারি জিতে প্রায় এক কোটি পাউন্ডের মালিক হয়ে যান রাতারাতি।
লটারিতে পাওয়া সম্পদ কয়েক দিনের মধ্যেই পাল্টে দেয় আবর্জনা সংগ্রহকারী এই যুবকের জীবনযাত্রা। চরম দারিদ্র ভোগ করার পর এই ‘কুবেরের ধন’ হাতে পেয়ে এক নিমেষে পাল্টে যায় মাইকেলের জীবনযাত্রা। যেন আরও অন্ধকারে ডুবে যান তিনি।
লটারিতে বিপুল টাকা হাতে পেয়ে মাথা ঘুরে যায় ওই যুবকের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে চর্চায় উঠে এলেও তাকে নিয়ে কেচ্ছার শেষ ছিল না। সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, ঘুম থেকে উঠে তাঁর দিন শুরু হত কোকেন আর ভদকা সহযোগে।
একই সঙ্গে যোগ হয়েছিল অতিরিক্ত যৌন সংসর্গ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেলি স্টার জানিয়েছে, চার হাজারেরও বেশি নারীকে শয্যাসঙ্গিনী করেছিলেন একদা ধনকুবের।
কোনও রাখঢাক না করেই নিজের কীর্তির কথা বলতে ভালবাসতেন মাইকেল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সে কারণে তাঁর নামকরণ করেছিল, ‘কিং অফ চ্যাভস’।
সেই সময় ক্যারল ও তাঁর আয়োজিত উদ্দাম যৌনতার আসর শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ সমাজে। সেই আসরে কী কী হত, তার বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছিল একাধিক সংবাদপত্রে। যা পড়ে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
উদ্ভিন্নযৌবনা আবরণহীন তরুণীদের সেই আসরে কোকেন পরিবেশন করতে দেখা যেত। এমনটাই জানা গিয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। এখানেই থামতে পারেননি ক্যারল। ওই বয়সেই একসঙ্গে আট জন মহিলার সঙ্গে যৌন সংসর্গ করার কথাও উঠে এসেছিল সংবাদমাধ্যমের পাতায়।
প্রতি দিন তার কোকেনের জন্য দু’লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকত। মাদক ও যৌনতার আসরের জন্য থাকত ৫৫ লক্ষ টাকা। সোনার গয়নার প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ ছিল এই যুবকের।
যে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছিল, ঠিক সে ভাবে হঠাৎ করেই দেউলিয়া হয়ে যান মাইকেল। জমানো অর্থ নিঃশেষ হয়ে যায়, ছেড়ে চলে যান স্ত্রীও। ফিরে আসতে হয় পুরনো পেশায়।
ক্যারলের মা একটি কারখানার কর্মী ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন বায়ুসেনার ইঞ্জিনিয়ার। ক্যারলের ১৮ মাস বয়সেই তাঁর বাবা খুনের অভিযোগে ১১ বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন।
সাত বছর বয়সে তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। ক্যারলের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। ক্যারলের সৎবাবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখতেন।
লটারির জ্যাকপট জয়ের পর পরই ক্যারল বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর অর্থ ব্যয় করতে চান না এবং শুধুমাত্র একটি হ্রদের কাছে একটি তিন কামরার বাড়ি কিনতে চান, যেখানে তিনি মাছ ধরতে যেতে পারেন।
লটারির পাওয়ার সময় ক্যারলের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ছিল না। বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত উদার ছিলেন। মা, মাসি এবং বোন, প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তিনি।
২০০৬ সালে প্রতারণার জন্য নয় মাসের জন্য জেলে গিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ক্যারলের নামে ৪২টি অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছিল।
নতুন বাড়ি, মাদক, পার্টি, গয়না এবং গাড়িতে তাঁর সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে বিবিসি জানায়। শন বোরু নামে এক লেখক ‘কেয়ারফুল হোয়াট ইউ উইশ’ ফর শিরোনামে তাঁর আত্মজীবনী বার করেন।
এত কিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি ক্যারলের জীবনে। ২০১০ সালের মে মাসে নিজের পুরনো পেশায় ফিরে যান ভাগ্যহত ক্যারল।