ঘোড়ায় টানা থেকে বিদ্যুতে চলমান, কলকাতার ট্রামের ইতিহাস সুদীর্ঘ। কিন্তু আজকাল সেই ট্রামের ভবিষ্যৎ নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু ট্রামের রুট। ঐতিহ্যবাহী যান ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার আর্জি করে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়।
সেই মামলার শুনানিতেই কার্যত হাই কোর্টের ক্ষোভের মুখে পড়তে হল রাজ্য সরকারকে। সোমবার এই মামলার শুনানিতে কী বলল কলকাতা হাই কোর্ট?
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী যান ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার আর্জিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।
এই ঘটনার পর দিন মঙ্গলবার কলকাতার চারটি রুটে ট্রাম চালানোর কথা জানাল পরিবহণ দফতর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, সরকার সব সময়ই ট্রাম চালাতে আগ্রহী।
এই মুহূর্তে কয়েকটি রুটে ট্রাম চলছেও, আগামী দিনে আর কোথায় ট্রাম চালানো যায়, সেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা এবং শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলার মধ্যে ট্রাম চলাচল করছে।
কলকাতার আরও একটি ঐতিহ্যবাহী রুট, ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের মধ্যে ট্রাম চালানোর হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রোর কাজের জন্য এই রুটে এখন ট্রাম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ওই রুটে মেট্রো রেলের সমীক্ষার কাজ চালানো হচ্ছে। যদি ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটের মধ্যে মেট্রোর কাজকর্ম শুরু হয়, তা হলে এই রুটে ট্রাম চালানো স্থগিত রাখা হবে।
যদি মেট্রো ওই রুটে কোনও রকম নির্মাণকার্য না করে, তা হলে দ্রুতই ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের মধ্যে ট্রাম চালানো সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছে পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র।
কলকাতা শহরে ট্রাম চলাচল বন্ধের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে রাজ্য জানায়, কলকাতা পুলিশ ট্রাম চালানোর বিরোধিতা করেছে।
কারণ, ট্রামের ধীর গতির জন্য ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সমস্যার মুখে পড়ে। রাজ্যের এই ব্যাখ্যায় একমত হয়নি হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, পুলিশ একা ট্রাম চালানোর বিরোধিতা করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ‘‘ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য। তাকে রক্ষা করতে হবে। অহেতুক তর্কবিতর্ক না করে গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন।’’
তার পরেই কলকাতার কয়েকটি রুটে ট্রাম চালানোর কথা জানায় পরিবহণ দফতর।
কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ট্রামে যাত্রীদের আসন থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু অত্যাধুনিক করতে হবে। যাতে শুধু প্রবীণ প্রজন্মের যাত্রীরাই নন, যুবক-যুবতীরাও ট্রামে চড়ার জন্য আকর্ষণ বোধ করেন।