হাওয়াই দ্বীপে থাকা বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়া জেগে ওঠার দু’সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর বুকে জেগে উঠেছে আরও এক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার মাউন্ট সেমেরু।
স্থানীয় সময় রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ এই আগ্নেয়গিরি লাভা উদ্গীরণ শুরু করেছে। রাজধানী জাকার্তার প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে মাউন্ট সেমেরু। ইতিমধ্যেই অগ্ন্যুৎপাতের একাধিক ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের কারণে পূর্ব জাভার একাধিক রাস্তা এবং বাড়িঘর লাভার ফলে সৃষ্ট ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছে। আগ্নেয়গিরির কাছে থাকা গ্রামগুলি থেকে প্রায় দু’হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানান্তরিতদের স্কুল এবং সরকারি ভবনগুলিতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ।
রবিবার ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (বিএনপিবি) থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লাভা বেরিয়ে আসার কারণে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মাস্ক স্থানীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
‘ইন্দোনেশিয়াস সেন্টার ফর ভলক্যানোলডি অ্যান্ড জিওলোজিক্যাল হ্যাজার্ড মিটিগেশন’ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের কারণে চতুর্থ স্তরের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিএনপিবি স্থানীয়দের সেমেরুর অগ্ন্যুৎপাত কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে ১৭ কিলোমিটার দূরে থাকার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
এ-ও জানানো হয়েছে আগ্নেয়গিরির ছাই কেন্দ্রস্থল থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
১২ হাজার ৬০ ফুটের মাউন্ট সেমেরু জাভার সবচেয়ে উঁচু এবং অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি।
গত বছর এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
২০২১-এর অগ্ন্যুৎপাতের থেকেও রবিবার শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাত অনেক বেশি লাভা উদ্গীরণ করছে বলেও প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তাই এই বার লাভা আরও বিস্তীর্ণ এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
গত মাসে পূর্ব জাভার পশ্চিমে ধারাবাহিক ভূমিকম্পের পর পরই আবার জেগে ওঠে ফুটন্ত লাভা নির্গমন শুরু করে মাউন্ট সেমেরু। ইন্দোনেশিয়ার এই ধারাবাহিক ভূমিকম্পে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, মাউন্ট সেমেরুর জেগে ওঠার সপ্তাহখানেক আগে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর জেগে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়া।
২৭ নভেম্বর থেকে মাউনা লোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। হাওয়াই দ্বীপের একদম উত্তর-পূর্ব দিকে এই আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি হাওয়াই দ্বীপের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে। ১৮৪৩ সাল থেকে এই আগ্নেয়গিরি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩ বার জেগে উঠেছে।
১৯৮৪ সালে শেষ বার মাউনা লোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উদ্গত লাভা থেকে বাঁচতে বাঁধ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।