Gurmeet Ram Rahim Singh

প্যারোলে মুক্তি পেয়েই সৎসঙ্গের আয়োজন রাম রহিমের, যোগ দিলেন হরিয়ানার ডেপুটি স্পিকার!

রাম রহিমকে প্যারোলে মুক্তি প্রসঙ্গে খট্টর বলেন, ‘‘এতে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। কোনও অভিযুক্ত জামিন পাবে কি না, তা আদালত ঠিক করে, সরকার নয়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলব না।’’

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ১২:৩৪
Share:
০১ ২৫

প্যারোলে জেল থেকে বেরিয়েই আবার বিতর্কের মুখে ধর্ষণের অপরাধী স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংহ। ডেরা সাচা সৌদা প্রধানকে ৪০ দিনের জন্য মুক্তি দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন দিল্লির মহিলা কমিশন (ডিসিডব্লিউ)-এর চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। এর জন্য তিনি হরিয়ানা সরকারেও নিন্দা করেছেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর এই সবের মধ্যে মুখ খুললেন। গুরমিত রাম রহিমকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনা প্রসঙ্গে খট্টর বললেন, ‘‘এতে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। কোনও অভিযুক্ত জামিন পাবে কি না, তা আদালত ঠিক করে, সরকার নয়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলব না।’’

০২ ২৫

স্বাতী বলেছেন, ‘‘রাম রহিম একজন ধর্ষক এবং খুনি। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে কিন্তু হরিয়ানা সরকার যখনই চায় তাকে প্যারোলে মুক্ত করে। ও জেল থেকে বেরিয়েই সৎসঙ্গের আয়োজন করছে এবং সেই অনুষ্ঠানে হরিয়ানা সরকারের ডেপুটি স্পিকার এবং মেয়রও যোগ দিচ্ছেন।’’ স্বাতী আরও দাবি করেছেন যে, গুরমিতের সৎসঙ্গে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা সকলেই তাঁর ভক্ত। হরিয়ানা সরকারের কাছে গুরমিত প্যারোল বাতিল করে তাঁকে জেলে পাঠানোর আবেদনও করেছেন স্বাতী।

Advertisement
০৩ ২৫

প্যারোলে মুক্তি পেয়েই নিজের মিউজিক ভিডিয়ো প্রকাশ করেন গুরমিত। দীপাবলির রাতে মুক্তি পাওয়া সেই ভিডিয়ো গত ৪৮ ঘণ্টায় বহু মানুষ দেখেছেন। প্রথম দিনেই ৪২ লক্ষ ভিউ হয় ভিডিয়োটির। যদিও সেখানেই থেমে থাকেননি গুরমিত। জেল থেকে বেরিয়ে নিয়মিত অনলাইনে সৎসঙ্গ করছেন তিনি। সেই শিবিরে নাকি যোগ দিচ্ছেন বহ বিজেপি নেতাও। আর সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।

০৪ ২৫

এই প্রথম নয়, এর আগেও বহু বিতর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন গুরমিত। আর তাঁকে নিয়ে চলা বিতর্কের আর এক ভাগীদার তাঁর-ই তথাকথিত দত্তক কন্যা হানিপ্রীত ইনসান। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সেই মেয়েরও নতুন নাম বাতলেছেন গুরমিত। নতুন নাম ‘রুহানি দিদি’। আরও ছোট করে ‘রুহদি’।

০৫ ২৫

মেয়ের নতুন নাম প্রসঙ্গে গুরমিত বলেন, ‘‘আমাদের মেয়ের নাম হানিপ্রীত। অনেকে তাঁকে ‘দিদি’ বলে ডাকেন। কিন্তু এতে জটিলতাও হয়, কারণ সবাই তো দিদি। তাই আমরা এখন তাঁর নাম দিয়েছি ‘রুহানি দিদি’। উচ্চারণ করতে যাতে সুবিধে হয়, তাই এই নামটাকেও একটু আধুনিক করে বলা যায়, ‘রুহদি’।’’

০৬ ২৫

ধর্ষণ ও খুনের দায়ে গুরমিত জেলের সাজা পাওয়ার পর ডেরা সমর্থকদের হিংসায় কমপক্ষে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অভিযোগ, সেই দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ইন্ধন দেন হানিপ্রীত। গ্রেফতারও হয়েছিলেন।

০৭ ২৫

৪১ বছরের হানিপ্রীত সমাজমাধ্যমে নিজের পরিচয় দেন ‘পাপার দেবদূত’ বলে। ‘পাপা’ অর্থাৎ জেলে খাটতে যাওয়া অপরাধী রাম রহিম। তবে হানিপ্রীতের দাবি, তাঁর ‘পাপা’ আসলে নির্দোষ। মাঝে মাঝে ‘পাপার’ ‘সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরও’ সঙ্গী হন তিনি।

০৮ ২৫

হানিপ্রীতের আসল নাম প্রিয়ঙ্কা তানেজা। তিনি হিসারের ফতেহবাদের এক সাধারণ ঘরের মেয়ে।

০৯ ২৫

সমাজমাধ্যমেও হানিপ্রীতের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ।

১০ ২৫

১৯৯৯-এ সিরসার এক ডেরাভক্ত বিশ্বাস গুপ্তের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন হানিপ্রীত। যদিও তখনও তাঁর নাম হানিপ্রীত হয়নি।

১১ ২৫

স্বামী বিশ্বাসের সূত্রেই রাম রহিমের সঙ্গে পরিচয় এবং ‘ঘনিষ্ঠতা’ হয় হানিপ্রীতের।

১২ ২৫

২০০৯-এ হানিপ্রীতকে দত্তক নেন রাম রহিম। তখন থেকেই বাবা-র ছায়াসঙ্গী হানিপ্রীত।

১৩ ২৫

রাম রহিমের ছায়াসঙ্গী ছাড়াও ডেরা পরিচালনার গুরুভার তার ঘাড়েই। ডেরা অনুগামীদের দাবি, হানিপ্রীত নাকি খুব প্রতিভাবান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোনও কিছু রপ্ত করে নিতে সিদ্ধহস্ত।

১৪ ২৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় হানি নিজেকে সমাজসেবী, নির্দেশক, পরিচালক এবং অভিনেত্রী হিসাবেও দাবি করেন।

১৫ ২৫

প্রসঙ্গত, খুন ও দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে ডেরা সাচা সৌদা প্রধানকে দোষী সাব্যস্ত করে জেল হেফাজতে থাকার রায় দিয়েছে আদালত। হরিয়ানায় উপনির্বাচন এবং হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহকে প্যারোলে ৪০ দিনের জন্য মুক্তি দিয়েছে বলেছে হরিয়ানার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ।

১৬ ২৫

গ্রেফতারির আগে একাধিক কুকীর্তি করার পাশাপাশি সিনেমা থেকে মিউজ়িক ভিডিয়ো— সবই করেছেন গুরমিত।

১৭ ২৫

‘এমএসজি: দ্য মেসেঞ্জার’, ‘এমএসজি-২: দ্য মেসেঞ্জার’ এবং ‘এমএসজি: দ্য ওয়ারিয়র লায়ন হার্ট’— এই তিনটি ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাম রহিম। প্রতিটি ছবিরই পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি নিজেই। হানিপ্রীতও তাঁকে এ বিষয়ে সাহায্য করেছেন।

১৮ ২৫

এই তিন ছবির চিত্রনাট্যও গুরমিতেরই লেখা। ছবির গীতিকার, সুরকার, পোশাক ডিজাইনারও তিনি নিজেই। তবে তাঁর ভক্তরা ছাড়া এই সিনেমাগুলি হলে গিয়ে তেমন কেউ দেখেননি।

১৯ ২৫

সম্প্রতি এমএক্স প্লেয়ার অরিজিনাল একটি সিরিজ নির্মাণ করেছে। সিরিজটির নাম ‘আশ্রম’। আশ্রম সিরিজের পুরো গল্পটাই সাজানো হয়েছে এই ধর্মগুরুর জীবন কেন্দ্র করে। রাম রহিমকে কেন্দ্র করে গল্পটা গড়ে উঠলেও মূলত ধর্মের নামে ব্যবসা আর অন্ধবিশ্বাসে নিজের সর্বস্ব উজাড়—এই বিষয়গুলিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

২০ ২৫

স্ত্রী নন, জেলে বসে পালিতা কন্যা হানিপ্রীত ইনসানের সঙ্গেই দেখা করতে চেয়েছিলেন রাম রহিম সিংহ। এর আগে জেলের ভিতরেই হানিপ্রীতকে পাশে চেয়েছিলেন ‘বাবা’। কিন্তু তারও অনুমতি মেলেনি।

২১ ২৫

এমনিতে রাম রহিম বেশ রঙিন চরিত্র। তাঁর ভান্ডারে লেক্সাস, রেঞ্জ রোভারের মতো বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা একাধিক। নিজের বহু গাড়ি মডিফাই করতেন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে। সেই অদ্ভুত গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়াতেন। বিশাল বিশাল ঘরের অধিকাংশ জায়গাই খাঁটি সোনায় মোড়া। এখান থেকেই রাজকীয় হালে নিজের সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত গুরমিত রাম রহিম সিংহ। গুরমিতের গোপন গুহা থেকে মেলে প্রচুর পরিমাণে কন্ডোম, গর্ভনিরোধক বড়ি, অশ্লীল সিডি, ভিডিও এমনকি সেক্স টনিকও।

২২ ২৫

রকস্টার ‘বাবা’ গুরমিত রাম রহিমের ডেরায় অত্যাধুনিক হাসপাতালের খোঁজ মিলেছিল। যে হাসপাতালের প্রধান রাম রহিম নিজেই। সেই হাসপাতালে দেদার গর্ভপাতের প্রমাণ মেলার অভিযোগ উঠেছিল। পঞ্জাব পুলিশ এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। সূত্রের খবর, গর্ভপাত করানোর কাজে বিন্দু মাত্র সরকারি অনুমতির তোয়াক্কা করা হত না। তদন্তকারীদের দাবি, যে সব মহিলার গর্ভপাত করানো হয়েছে, তাঁদের পর্যাপ্ত নথি মেলেনি হাসপাতাল থেকে।

২৩ ২৫

এই মামলার প্রধান তদন্তকারী সিবিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম নারায়ণন মুখ খোলেন সংবাদমাধ্যমে। কী ভাবে ডেরার ভিতর অসামাজিক কাজকর্ম চালাতেন গুরুজি, তা-ও সংবাদমাধ্যমকে জানান নারায়ণন। একেবারে মনের মতো করে ডেরায় পরিবেশ সাজিয়েছিলেন রাম রহিম। কেমন ছিল সেই পরিবেশ? বিভিন্ন সূত্র থেকে সেই খবর জোগাড় করেছিলেন নারায়ণন। তিনি জানান, নিজের গোপন গুহায় সুন্দরী অল্পবয়সী সাধ্বীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন বাবা। তাঁর ব্যক্তিগত পরিচর্যার দায়িত্বে থাকতেন এই সাধ্বীরাই। কিন্তু অনেক সময় তাতেও মন ভরত না বাবার। ঠিক রাত ১০টার সময় ফোন যেত প্রধান সাধ্বীর কাছে। ‘আবদার’ থাকত নতুন তরুণী সাধ্বী পাঠানোর। নারায়ণন জানিয়েছেন, ডেরার সকলেই জানত এ বিষয়ে। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতেন না কেউ।

২৪ ২৫

রাম রহিম সিংহ জেলে যাওয়ার পর থেকেই ‘বাবা’-র ডেরায় তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তল্লাশিতে নেমে সিরসার ডেরায় একটি গোপন সুড়ঙ্গ ও সুড়ঙ্গপথের খোঁজ পান গোয়েন্দারা। যেটি ‘বাবা’-র কোয়ার্টার থেকে সোজা চলে গিয়েছে সাধ্বীনিবাস পর্যন্ত। ডেরার তিন তলাতেও একটি সুড়ঙ্গের খোঁজ মেলে। জনসংযোগ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সতীশ মেহরা জানিয়েছিলেন, ফাইবারের তৈরি ওই সুড়ঙ্গটি কাদায় ভর্তি। সিল করে দেওয়া হয় বেআইনি বিস্ফোরক তৈরির কারখানা। একে-৪৭ বন্দুকের কার্তুজের একটি ফাঁকা বাক্সও মেলে। ২০০২ সালে নিজের ম্যানেজারকে খুন, এক সাংবাদিককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন রাম রহিম।

২৫ ২৫

এর আগেও তিন বার প্যারোলে মুক্তি পেয়েছে সে। অসুস্থ মা-কে দেখতে ও চিকিৎসার কারণে তাকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জেলের বাইরে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পঞ্জাবের নির্বাচনের আগেও তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement