রবিবার মধ্যরাত। আফগানিস্তানের প্রাক্তন সাংসদ মুরসাল নাবিজ়াদার মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে কাবুলে। মুরসাল তাঁর বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে প্রাণ হারান তাঁর এক নিরাপত্তারক্ষীও। মধ্যরাতে তাঁর উপর কারা হামলা করেছেন, কেনই বা তাঁকে খুন করা হল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
কাবুলে নিজের বাড়ির দোতলার ঘরের ভিতরেই ছিলেন মুরসাল। হঠাৎ চার দেওয়ালের ভিতর গুলির শব্দ। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের আচমকা হামলায় প্রাণ হারান ৩২ বছর বয়সি মুরসাল। সেই সময় বাড়িতে ছিলেন মুরসালের ভাই এবং আরও এক নিরাপত্তারক্ষী। গুলির আঘাতে জখম হন দু’জনেই।
কাবুল পুলিশের মুখপাত্র খালিদ জ়াদরান জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই হত্যার নেপথ্যে কারা রয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই মুরসালের মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন মুরসালের পরিজনেরা। মুরসালের মৃত্যুর জন্য তালিবানকে দায়ী করেছেন তাঁরা।
কিন্তু তালিবানের দিকে আঙুল তোলার কারণ কী? মুরসালের পরিজনদের অনুমান, তালিবান মসনদ দখল করার পরে বহু সাংসদ আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলেও মুরসালের মতো হাতেগোনা কয়েক জন সাংসদ নিজের দেশেই থেকে গিয়েছিলেন। তা-ই মুরসালকে ‘টার্গেট’ করেছিল তালিবান।
২০১৮ সালে কাবুলের সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন মুরসাল। এক বছর পর আইনসভার মহিলা সদস্য হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন তিনি। কিন্তু তালিবান ক্ষমতা দখলের পর তিনি এই দায়িত্ব থেকে সরে আসেন।
আফগানিস্তানের ‘পার্লামেন্টারি ডিফেন্স কমিশন’-এর সদস্যও ছিলেন মুরসাল। ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করেছিলেন তিনি।
২০২১ সালে অগস্ট মাসে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম কোনও প্রাক্তন সাংসদ খুন হলেন। প্রাক্তন আইনপ্রণেতা মারিয়াম সোলাইমানখিল এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন।
রবিবার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে মারিয়াম লিখেছেন, ‘‘মুরসালের জীবনে যতই বিপদ ঘনিয়ে আসুক না কেন, তিনি যা মনে করতেন তা সোজা ভাষায় স্পষ্ট ভাবে বলতেন। কাউকে ভয় পেতেন না তিনি। যথেষ্ট দৃঢ় স্বভাবের মানুষ ছিলেন মুরসাল।’’
মারিয়াম আরও জানিয়েছেন যে, নিজের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন মুরসাল। তিনি জানতেন, তালিবান যে কোনও মুহূর্তে তাঁর উপর হামলা করতে পারেন। কিন্তু তিনি ভয় পাননি।
মারিয়ামের বক্তব্য, ‘‘মুরসাল কাবুলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কাবুলের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করে গিয়েছিলেন তিনি। আমরা এক মূল্যবান রত্ন হারালাম। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক সদস্য হানা নিউম্যান টুইটে লিখেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের প্রাক্তন সাংসদ ছিলেন মুরসাল নাবিজ়াদা। বাড়িতে খুন করা হয় তাঁকে। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীও এই ঘটনায় প্রাণ হারান। আমি এই ঘটনায় দুঃখিত। দুঃখের সঙ্গে আমার রাগও হচ্ছে।’’
টুইটে ক্ষোভপ্রকাশ করে হানা লেখেন, ‘‘মুরসালকে রাতের অন্ধকারে মারা হয়েছে। তালিবান দিনের আলোয় তাদের লিঙ্গবৈষম্য এবং জাতিবিদ্বেষ নীতিকে প্রতিনিয়ত স্থাপন করে চলেছে।’’
শনিবার তালিবদের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ সে দেশের সংবাদমাধ্যম খামা প্রেসকে জানিয়েছেন, ইসলামি আইনের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনও কার্যকলাপকে তাঁরা বরদাস্ত করবেন না। মহিলা স্বাধীনতার বিষয়টি দেশের প্রচলিত ইসলামি আইনের নিরিখে পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
দেশের মহিলাদের উপর নানা রকম বিধিনিষেধ চালু করে তালিবান সরকার। কোনও মহিলা অসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছিল তালিবান। এমনকি বাইরে বেরিয়ে তাঁরা কোনও কাজও করতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
তালিবান সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হন সে দেশের মেয়েরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী এবং নারী অধিকার রক্ষার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তার পরেই মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সে দেশের তালিবান সরকার।
তালিবান প্রশাসনের মতে, শরিয়ত অনুযায়ী মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর পড়াশোনা করা অন্যায়। সে ক্ষেত্রে ইসলামি অনুশাসন মেনেই তাদের প্রাথমিক স্তরের পরে লেখাপড়া করা বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছে তালিবান সরকার।