কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনেই নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া (এফপিও) স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তারা জানিয়েছে, ২০ হাজার কোটি টাকার যে এফপিও ছাড়ার ঘোষণা হয়েছিল, তা আপাতত কার্যকর হচ্ছে না।
ইতিমধ্যে আদানিদের ওই ঘোষিত এফপিও-তে যাঁরা লগ্নি করেছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থা। এর ফলে বাজেটে পেশের দিনেই দেশের অর্থনীতি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরেই শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে আদানি গোষ্ঠী। আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনেছে। তার পর থেকেই ধস নেমেছে শেয়ার বাজারে।
হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে দাবি করেছে, কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছেন আদানিরা। তাঁরা কৃত্রিম ভাবে তাঁদের শেয়ারের দর বাড়িয়েছেন। এ ভাবে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আদনিদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দর নেমেছে হু হু করে। গত ৯ দিনে একটানা নিম্নমুখী ‘আদানি টোটাল গ্যাস’, ‘আদানি এন্টারপ্রাইসেস’-এর মতো সংস্থার শেয়ার দর।
২৪ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি, শেষ ৯ দিনের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, শেয়ার বাজারে সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে ‘আদানি টোটাল গ্যাস’-এর। তাদের শেয়ার দর কমেছে ৫১ শতাংশ। এতে তাদের ৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
শেয়ার দরের তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে ‘আদানি এন্টারপ্রাইসেস’। শেষ ৯ দিনে তাদের শেয়ারের দাম ৩৮ শতাংশ কমেছে। ক্ষতির পরিমাণ এ ক্ষেত্রেও প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা।
‘আদানি ট্রান্সমিশন’ তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। গত ৯ দিনে শেয়ারের দাম ৩৭ শতাংশ কমেছে এই সংস্থার। তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা।
তালিকায় এর পরেই রয়েছে ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’। এই সংস্থার শেয়ারের দাম গত ৯ দিনে ৪০ শতাংশ কমেছে। তাদের ক্ষতির পরিমাণও প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই সংস্থাটি হারিয়েছে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা।
শেষ ৯ দিনে ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড সেজ়’-এর শেয়ারের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে। এতে তাদের প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
‘আদানি পাওয়ার’-এর ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি। এই সংস্থার শেয়ারের দাম গত ৯ দিনে ২৩ শতাংশ কমেছে।
এই তালিকায় রয়েছে ‘অম্বুজা সিমেন্টস’। ২৪ জানুয়ারির পর থেকে তাদের শেয়ারের দাম প্রায় ৩৩ শতাংশ কমেছে। তাদেরও প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
‘আদানি উইলমার’-এর শেয়ারের দাম গত ৯ দিনে কমেছে ২৩ শতাংশ। এতে তাদের ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
শেষ ৯ দিনে ‘এসিসি’ শেয়ারের দাম ২১ শতাংশ কমেছে। তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
শেয়ারে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এনডিটিভিও। শেষ ৯ দিনে তাদের শেয়ারের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে। কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এই সংস্থার।
শেয়ার বাজারে এই বিপর্যয়ের মুখে রাতারাতি রদবদল হয়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। গত সপ্তাহেও সেই তালিকায় গৌতম আদানি ছিলেন তৃতীয় স্থানে।
কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের পর তিনি ১৩ নম্বরে নেমে গিয়েছেন। খুইয়েছেন ভারত তথা এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তির তকমাও।
আদানিকে টপকে বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছেন আর এক ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানী। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি তিনিই।