এ বছরের মতো কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল সফর শেষ। শনিবার লখনউয়ের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরেই শেষ চারের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন নাইটরা।
নীতীশ রানার অধিনায়কত্বে এ বারের আইপিএল খেলতে নেমেছিল কেকেআর। কিন্তু সমর্থকদের প্রত্যাশা একেবারেই পূরণ করতে পারেনি দল।
প্রথম দিকের কয়েকটি ম্যাচে কলকাতা অবশ্য ভাল খেলেছিল। তাদের খেলা দেখে শেষ চারের আশাও জেগেছিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝপথে হোঁচট খায় দল।
আইপিএল ২০২৩-এ কেকেআরের যাত্রার দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, অন্যতম প্রাপ্তির নাম রিঙ্কু সিংহ। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত যিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন মাথা উঁচু করে।
চলতি আইপিএলে ১৪টি ম্যাচে খেলেছেন রিঙ্কু। তাঁর মোট রান ৪৭৪। আইপিএলের ইতিহাসে পঞ্চম স্থানে কিংবা তার পরে ব্যাট করতে নামা যে কোনও খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এই রানই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
২০১৮ সাল থেকেই কেকেআরের সংসারে আছেন রিঙ্কু। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই প্রতিভা প্রথম দিকে তেমন নজরে আসেননি। এ বছর রিঙ্কুর সঙ্গে কেকেআরের চুক্তি হয় ৫৫ লক্ষ টাকায়।
গত বছরের আইপিএলে কয়েকটি ম্যাচে রিঙ্কু ভাল খেলেছিলেন। তবে তাঁর খেলা আলাদা করে নজর কাড়ে এ বছর। একের পর এক ম্যাচে তিনি ধারাবাহিক ভাবে রান পেয়েছেন।
এক সময় কেকেআরের ধুঁকতে থাকা মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসার নাম হয়ে ওঠেন রিঙ্কু। ব্যাট হাতে তিনি নামলে সমর্থকেরা নিশ্চিন্ত হতেন। বিশ্বাস জন্মেছিল, অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতো তিনি নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসবেন না।
আইপিএল জুড়ে কী কী করে দেখালেন রিঙ্কু? কোন ম্যাচে কেমন খেললেন? এই প্রতিবেদনে রইল তাঁর প্রতিটি পারফর্ম্যান্সের বিস্তারিত বিশ্লেষণ।
আইপিএলের প্রথম ম্যাচে দাগ কাটতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই রিঙ্কু ছিলেন স্বমহিমায়। কোহলিদের বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তিনি ৩৩ বলে ৪৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন।
তৃতীয় ম্যাচেও ভাল রান করেন রিঙ্কু। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে তিনি ২১ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন। একটুর জন্য হাতছাড়া হয় অর্ধশতরান। দলের জয়ে তাঁর বিশেষ অবদান ছিল।
গুজরাতের বিরুদ্ধে রিঙ্কুর এই ইনিংস ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রেখে দেবেন অনেক দিন। জয়ের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন সকলে। সেখান থেকে শেষ পাঁচ বলে পাঁচটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়েছেন রিঙ্কু।
এর পর হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আসে কাঙ্ক্ষিত অর্ধশতরান। ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে এ বারও অপরাজিত ছিলেন রিঙ্কু। তাঁর নামের পাশে ছিল ৩১ বলে ৫৮ রানের ইনিংস।
চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে হেরে যায় কেকেআর। ২৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্য কলকাতার সামনে খাড়া করেছিলেন ধোনিরা। ১৮৫ রানেই থেমে যায় নাইটদের ইনিংস। তবে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচেও রিঙ্কু অর্ধশতরান করেছিলেন। ৩৩ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে এর পরের একটি ম্যাচে রিঙ্কু আবার রান পান। তিনি করেন ৩৫ বলে ৪৬। ৪টি চার এবং ১টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল সেই ইনিংস। ম্যাচটিতে জয়ও পেয়েছিল কেকেআর।
চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে আরও একটি ম্যাচে অর্ধশতরান পান রিঙ্কু। গত ১৪ মে-র ম্যাচে তিনি ৪৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। ধোনিদের ১৪৫ রানের লক্ষ্য ছুঁতে তাঁর এই ইনিংস কাজে লেগেছিল।
কেকেআরের শেষ ম্যাচ ছিল লখনউয়ের বিরুদ্ধে। দল জিততে না পারলেও রিঙ্কুকে এই শেষ ম্যাচে স্বমহিমায় দেখা গিয়েছিল। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ বলে ৬৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস।
শনিবার কেকেআরের আইপিএলে বিদায় যখন এক প্রকার নিশ্চিত, ১ বলে বাকি ছিল ৮ রান। হার নিশ্চিত জেনেও হার মানেননি রিঙ্কু। শেষ বলটিতে ছক্কা হাঁকান তিনি।
রিঙ্কুর সেই ছক্কা কেকেআরের ব্যর্থতা ঢাকতে পারেনি। তবে কি জাতীয় দলের নির্বাচকদের উদ্দেশেই শেষ বলটি গ্যালারিতে উড়িয়ে দিলেন কেকেআর তারকা?