মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (অজিত পওয়ার গোষ্ঠী)-র নেতা বাবা সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে এসেছে গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের নাম। খুনের দায় স্বীকার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে কুখ্যাত এই দুষ্কৃতীর দল।
পঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসে ওয়ালা হত্যা থেকে শুরু করে বলি অভিনেতা সলমন খানকে হত্যার ছক— বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে বিশ্নোই গ্যাংয়ের।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ সূত্রে খবর, শুধু সলমন নন, বিশ্নোইয়ের হিট লিস্টে কৌতুক অভিনেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ— আরও অনেকেই রয়েছেন।
মনে করা হয়, লরেন্স বিশ্নোই গ্যাংয়ে মোট ৭০০ শুটার রয়েছেন। এবং তাঁদেরই বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে চলেছেন গ্যাংস্টার।
দিল্লির এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ আধিকারিক পিটিআইকে জানিয়েছেন, বিশ্নোই গ্যাংয়ের টার্গেট এখন শুধু সলমনে সীমাবদ্ধ নেই। তাঁর দাবি, “গ্যাংটি এখন বলিউডে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। যে সব এলাকা এক সময় দাউদ ইব্রাহিমের দখলে ছিল, সেগুলিতে প্রভাব জমানোর চেষ্টা করছে লরেন্স গ্যাং।’’
গ্যাংস্টার বিশ্নোইয়ের হিট লিস্টে কারা রয়েছেন? এই তালিকায় প্রথমেই আসে সলমন খানের নাম। একাধিক বার তাঁর উপর হামলার ছকও কষা হয়েছে।
কিন্তু কেন বার বার সলমন খানকে খুনের হুমকি দিচ্ছে বিশ্নোই গ্যাং? এর নেপথ্যে রয়েছে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা। ১৯৯৮ সালে রাজস্থানের জোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিং করতে যান সলমন খান। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনায় বিশ্নোই সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লাগে। কারণ কৃষ্ণসার হরিণকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন তাঁরা। ২০১৮ সালে গ্রেফতারির পর আদালতে দাঁড়িয়ে লরেন্স বিশ্নোই হুমকির সুরে বলেছিলেন, ‘‘জোধপুরে আমরা সলমন খানকে হত্যা করব। আমরা ব্যবস্থা নিলেই সবাই জানতে পারবে। আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই করিনি। ওরা বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছে।’’
২০১৮ সালে সম্পথ নেহরা নামের এক সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তি সলমনকে খুনের জন্য তাঁর বাড়ি রেকি করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিশ্নোইয়ের নির্দেশেই নেহরা ওখানে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তদন্তকারীরা।
২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল সলমনের বান্দ্রার বাড়ির সামনে বাইকে করে এসে গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতী। তবে তাতে অবশ্য অভিনেতার কোনও ক্ষতি হয়নি। ওই ঘটনার সঙ্গেও বিশ্নোই গ্যাং জড়িত ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের।
বাবা সিদ্দিকিকে খুনের দায় স্বীকারের পরে নতুন করে অভিনেতাকে খুনের হুমকি দিয়েছে বিশ্নোই গ্যাং। সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্টে তারা বলেছে, ‘‘আমাদের কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই। দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাং ও সলমন খানকে সাহায্য করলে কোনও ছাড় পাওয়া যাবে না। যাঁরা সাহায্য করছেন তাঁরা সমস্ত হিসাব ঠিক রাখুন।’’
সলমনের পর এই তালিকায় রয়েছেন বাবা সিদ্দিকির পুত্র জিশান। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ তথা বিধায়ক জিশানের উপরেও নাকি তাঁর বাবার মতোই হামলা চালাতে পারে বিশ্নোই গ্যাং।
এমন কথা পুলিশকে নাকি জানিয়েছেন সিদ্দিকি খুনে অভিযুক্ত ধর্মরাজ কশ্যপ এবং গুরমাইল সিংহ। ইতিমধ্যেই জিশানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্নোইয়ের হিট লিস্টে নাকি নাম রয়েছে কৌতুক অভিনেতা মুনাওয়ার ফারুকিরও। জানা যাচ্ছে, লরেন্স বিশ্নোইদের দলের দুই দুষ্কৃতী এক বার মুনাওয়ারের পিছু নিয়েছিল। দিল্লি পর্যন্ত মুনাওয়ারকে অনুসরণ করেছিল সেই দু’জন।
সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন কৌতুকশিল্পী। একই বিমানের টিকিট কেটেছিল ওই দুই দুষ্কৃতী। মুনাওয়ার যে হোটেলে ছিলেন, সেখানেই অন্য একটি ঘর ভাড়া করেছিল তারা। কিন্তু মুনাওয়ারের উপর হামলার পরিকল্পনা সফল হয়নি।
গোয়েন্দা সংস্থা মারফত এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ানো হয়েছিল মুনাওয়ারের নিরাপত্তা। তাই সে বারের মতো কৌতুকশিল্পীর উপর হামলা করতে পারেননি তারা। এ-ও মনে করা হচ্ছে মুনাওয়ারকে হত্যা করে ‘ডন’ হিসাবে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন বিশ্নোই।
এই তালিকায় রয়েছে গায়ক সিধু মুসে ওয়ালার ম্যানেজার শগনপ্রীত সিংহের নামও। বিশ্নোই গ্যাংয়ের বিশ্বাস, গ্যাংস্টারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভিকি মিডুখেরার হত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন শগনপ্রীত। ২০২১ সালের অগস্টে মোহালিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলেন ভিকি।
বিশ্নোইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী তথা কুখ্যাত বাম্বিহা গ্যাংয়ের সদস্য কৌশল চৌধরিও রয়েছেন তালিকায়। কৌশলর বিরুদ্ধে মিডুখেরার খুনিদের অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ তুলেছিল বিশ্নোই গ্যাং।
কৌশলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অমিত ডাগরও নাকি রয়েছেন বিশ্নোইয়ের হিট লিস্টে। বিশ্নোই গ্যাংয়ের দাবি, মিডুখেরার খুনে জড়িত ছিলেন ডাগরও।