২০৩০ সালে অভিনব কায়দায় ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে ফিফা। ওই বছর ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ছ’টি দেশ।
২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মরক্কো, স্পেন এবং পর্তুগালকে। প্রথম দিকের কিছু ম্যাচ হবে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতে।
১৯৩০ সালে প্রথম বার ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছিল। ১০০ বছর আগে উরুগুয়ের মাটিতে হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। সেই কারণে ২০৩০ সালে উরুগুয়েতে বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা।
১৯৩০ সালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল উরুগুয়ে। সেই কারণে মেসির দেশেও ২০৩০ সালে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ। বিশ্বকাপে আয়োজক দেশগুলির নাম ঘোষণা করে জানানো হয়েছিল, ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ মরক্কো, স্পেন এবং পর্তুগালকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই বিশ্বকাপের ১০০ বছর স্মরণীয় করে রাখতে ম্যাচ হবে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতেও।
২০৩০ সালের বিশ্বকাপ হতে এখনও পাঁচ বছর বাকি। তবে তার অনেক আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে আয়োজক দেশগুলিতে। বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসাবে কোনও ত্রুটি না রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা।
আর এই আয়োজনের অঙ্গ হিসাবে বিশ্বকাপের আগে শহরগুলিকে ‘পরিষ্কার’ করার জন্য ৩০ লক্ষ পথকুকুর নিধনের পরিকল্পনাও নাকি করে ফেলেছে উত্তর আফ্রিকার দেশ। তেমনটাই উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমের পাতায়। এই ঘটনায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। হইচইও পড়েছে।
কুকুর নিধনের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রাণী অধিকার কর্মীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে মরক্কো। পাশাপাশি পশুপ্রেমীদের একাংশের অভিযোগ, পরিকল্পনা সফল করতে নাকি মরক্কোয় ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার পথকুকুরকে মেরে ফেলা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিখ্যাত সংরক্ষণবাদী এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে লড়াই করা আইনজীবী জেন গুডঅল এই বিষয়ে ফিফার সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাটিয়াস গ্রাফস্ট্রমকে চিঠি লিখেছেন।
ফিফার বিরুদ্ধে ‘নৃশংস এবং ভয়ঙ্কর’ সেই বিষয়টি ‘উপেক্ষা’ করার অভিযোগও তুলেছেন জেন। ফিফাকে পাঠানো চিঠিতে জেন জানিয়েছেন যে, প্রাণী সুরক্ষা এবং অধিকার নিয়ে কাজ করছেন এমন অনেক আন্তর্জাতিক মহল থেকে তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
পুরো বিষয়টি জেনে তিনি যারপরনাই হতবাক এবং ব্যথিত বলেও উল্লেখ করেছেন জেন। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যে সব ফুটবল অনুরাগীর মধ্যে পশুপ্রেম রয়েছে, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন?
চিঠিতে হুঁশিয়ারির সুরে জেন জানিয়েছেন, ফিফা যদি পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত না করতে পারে, তা হলে তাদের দুর্নাম হতে পারে। ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তারা।
জেন চিঠিতে এ-ও লিখেছেন, ‘‘পুরো বিষয়টি ফিফাকে আবার চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে আনবে। আমি জানি সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির পরে ফিফা সুনাম ফিরে পেতে কঠোর পরিশ্রম করছে। কিন্তু ফিফার তরফে যদি বিষয়টি আটকানো না যায়, তা হলে নৃশংস একটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নাম জড়াবে তাদের।’’
জেন আরও লিখেছেন, ‘‘পথকুকুরদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার অনেক মানবিক বিকল্প রয়েছে। বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে, যারা এই ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মরক্কো কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে পেরে খুশি হবে।’’
জেন ছাড়াও পথকুকুরদের নিধনের পরিকল্পনা ঠেকাতে কোমর বেঁধে নেমেছে প্রাণী অধিকার এবং সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
ওই সংস্থাগুলির অভিযোগ, কুকুরগুলোকে ‘স্ট্রাইকাইন’ বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। বিষপ্রয়োগ না করা গেলে গুলি করে সেই কাজ সারছেন রাস্তায় টহলরত বন্দুকধারীরা।
কেউ কেউ আবার অভিযোগ তুলছেন, ‘ক্ল্যাম্পিং’ যন্ত্রের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলেও নাকি ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পথকুকুরদের। পরে নির্জন কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে অমানবিক ভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে তাদের।
গত বছরের অগস্টেই মরক্কোর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন পথকুকুরদের মেরে ফেলার কাজ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সংস্থাগুলির অভিযোগ, কুকুর-হত্যা বন্ধ করা তো দূরের কথা, তাদের উপর অত্যাচার বেড়েছে।
সেই ‘হত্যালীলা’ অতি শীঘ্র বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে পশুপ্রেমী সংস্থাগুলি। সংস্থাগুলি এ-ও সতর্ক করেছে যে, পুরো বিষয়টি বন্ধ না করা গেলে ‘মুখ পুড়তে’ পারে ফিফারই।