ছোটবেলা থেকে নানা রঙিন পেশার স্বপ্ন দেখে শিশু। বড় হওয়ার পর নেশা আর পেশাকে কেউ কেউ মেলাতে পারেন বটে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুইয়ের পথ হয়ে যায় আলাদা। পেশার বাধ্যবাধকতার আড়ালে ভাললাগার কাজটির জন্য সময় বার করে নেওয়াই জীবনের মুনশিয়ানা।
সেই কাজটিই নিপুণ দক্ষতায় করে দেখিয়েছেন অভিষেক সিংহ। তিনি পেশায় আইএএস অফিসার। উত্তরপ্রদেশে কর্মরত এই অভিষেক কিন্তু জনসমাজে পরিচিত অন্য রূপে। তাঁকে ইউটিউব কিংবা নেটফ্লিক্সের পর্দায় দেখে অভ্যস্ত দর্শক।
সম্প্রতি হার্ডি সান্ধুর একটি জনপ্রিয় গানের ভিডিয়োতে কাজ করেছেন অভিষেক। তাঁর অভিনয় সেখানেও বিস্তর প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘ইয়াদ আতি হ্যায়’-এর সুরে মজেছেন সিংহভাগ দর্শক। ইউটিউবে ভিডিয়োটি দেখেছেন ২২ লক্ষ মানুষ।
গানের ভিডিয়োতে অভিনেত্রী অস্মিতা সুদের বিপরীতে দেখা গিয়েছে অভিষেককে। তাঁর অভিনয় দেখে বোঝার উপায় নেই যে, অভিষেক আসলে আইএএস। অভিনয় তাঁর অবসরের নেশা।
নেটফ্লিক্সে ‘দিল্লি ক্রাইম’ ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় পর্বেও কাজ করেছেন অভিষেক। শেফালি শাহ অভিনীত জনপ্রিয় এই ওয়েব সিরিজ়ে ছোট চরিত্রেই তিনি নজর কেড়েছেন। সেখানে আইএএস হিসাবে নিজের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল অভিষেককে।
৩২ বছর বয়সি অভিষেক ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন ২০১১ সালে। সিভিল সার্ভিসে নজরকাড়া ফল করেছিলেন তিনি। সারা ভারতে তাঁর র্যাঙ্ক হয়েছিল ৯৪। এর পরেই আইএএস হিসাবে কাজে যোগ দেন।
অভিষেকের স্ত্রী দুর্গাশক্তি নাগপাল। তিনিও আইএএস অফিসার। তাঁর কর্মস্থলও সেই উত্তরপ্রদেশ। তবে অভিষেকের দু’বছর আগে তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে তাঁর রেজাল্টও ছিল চমকপ্রদ।
সমাজমাধ্যমে অভিষেকের অনুরাগীর সংখ্যাও কম নয়। ৩১ লক্ষ মানুষ তাঁকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করেন। যা অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে যে কোনও বলিউড সেলিব্রেটিকে।
অভিনেতা, আমলার পাশাপাশি অভিষেক সমাজকর্মীও বটে। দুঃস্থ মানুষের শিক্ষা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তিনি। তাঁর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
পর্দার সামনে যিনি দক্ষ অভিনেতা, নেপথ্যে সেই তিনিই দাপুটে আমলা। আবার সমাজকর্মী হিসাবেও নিঃশব্দে কাজ করে চলেন অভিষেক। তাঁকে নিয়ে অনুরাগীদের মধ্যে কৌতূহলের অন্ত নেই।
তবে শখের অভিনয়, সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়তা অভিষেকের চাকরি জীবনে প্রভাব ফেলেছে বেশ কয়েক বার। গত বছর গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে পর্যবেক্ষক হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অভিযোগ, অভিষেক সরকারি আমলা হিসাবে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেলেও সরকারি গাড়ির সঙ্গে নিজের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। যা নির্বাচন কমিশনের নিয়মবিরুদ্ধ।
সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশ সরকার অভিষেককে কাজে ঢিলেমির অভিযোগে সাময়িক ভাবে সাসপেন্ড করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই সাসপেন্ডের নির্দেশের কথা প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ, বিনা নোটিসে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ছিলেন অভিষেক।
এর আগে ২০১৪ সালেও এক বার অভিষেককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। ফলে সমাজমাধ্যমে ‘হিরো’ সাজলেও সরকারি কাজের ক্ষেত্রে বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে এই তরুণ তুর্কিকে।
প্রশাসনিক দুনিয়ার সঙ্গে বিনোদন জগতের মিশেল ঘটিয়েছেন অভিষেক। সেই কারণেই তাঁর চরিত্র এত আকর্ষণীয়। আমলার পদ সামলেও যে রুপোলি পর্দার জনপ্রিয়তার স্বাদ চেখে দেখা যায়, তিনিই তা প্রমাণ করেছেন।