করোনাকালে মুঠোফোনে হাজারো অ্যাপের ভিড়ে যে অ্যাপটি রাখতেই হত, তার নাম ‘আরোগ্য সেতু অ্যাপ’। করোনা আবহে ট্রেন বা বিমান সফর করতে জরুরি ছিল এই অ্যাপ। এমনকি এই অ্যাপ দেখালেই সংশ্লিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলত, সে অফিস হোক বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান। অতিমারি খানিকটা থিতু হতে সেই অ্যাপই কি না ‘অচল’ হয়ে পড়ল।
সংবাদ সংস্থার খবর, আরোগ্য সেতুর ‘ডেটা অ্যাকসেস ও শেয়ারিং প্রোটোকল’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর অর্থ, এ বার থেকে এই অ্যাপের মাধ্যমে কোনও রকম তথ্য আদানপ্রদান করা যাবে না।
করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত নানা তথ্য পাওয়া যেত এই অ্যাপে। পাশাপাশি কোথাও কোনও করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি রয়েছেন কি না, তা-ও এই অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে বলে দাবি করেছিল কেন্দ্র।
করোনা উপসর্গ রয়েছে কি না, আপনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না, এই সব তথ্য একজন অ্যাপ ব্যবহারকারীকে নথিভুক্ত করতে হত এই অ্যাপে।
আরোগ্য সেতুর ‘ডেটা অ্যাকসেস ও শেয়ারিং প্রোটোকল’ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা গিয়েছে।
২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের যে তথ্যা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এই পরিমাণ ডেটা তা হলে গেল কোথায়? আদৌ কি সুরক্ষিত রয়েছে?
আরোগ্য সেতু অ্যাপ নিয়ে আরটিআই (তথ্যের অধিকার আইন) করে সরকারের কাছে জানতে তথ্য চেয়েছিল ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (আইএফএফ)।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র জানিয়েছে যে, ২০২২ সালের ১০ মে থেকে আরোগ্য সেতুর ‘ডেটা অ্যাকসেস ও শেয়ারিং প্রোটোকল’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরোগ্য সেতুর নির্মাতা ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারের (এনআইসি) মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘শেয়ারিং প্রোটোকল’ বন্ধ করা হয়েছে, তার কারণ এটি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।
ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, আরোগ্য সেতু ‘কনটাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ’ ছিল। অর্থাৎ, আপনার ধারে কাছে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি রয়েছেন কি না, তা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানা যেত। কিন্তু এখন আর তার কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকায় আগামী দিনে এটি জাতীয় স্বাস্থ্য অ্যাপে পরিণত করা হবে।
বস্তুত, করোনা অতিমারি পর্বে লকডাউনের পরই সব ক্ষেত্রে এই অ্যাপ বাধ্যতামূলক করেছিল মোদী সরকার।
রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী নেতারা অভিযোগ তুলেছিলেন, সরকার এর মাধ্যমে আমজনতার উপরে নজরদারি করতে চাইছে। কেন্দ্রের সাইবার হানা রোখার ভারপ্রাপ্ত সংস্থা সার্ট-ইন (কম্পিউটার এমারজেন্সি রেসপন্স টিম)-ও ওই অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য চুরির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। তার পরেই সব ক্ষেত্রে আরোগ্য সেতু অ্যাপ বাধ্যতামূলক করার শর্ত শিথিল করতে শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
অতিমারি থিতিয়ে গেলেও অনেকেই এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিল ও জুনে মোট পাঁচ লক্ষ মানুষ এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন।
গত মার্চে আরোগ্য অ্যাপে সামিল হয়েছিলেন ১১ লক্ষ মানুষ। ১০ কোটিরও বেশি মানুষ এই অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন।
আরোগ্য অ্যাপের সঙ্গে কোউইন পোর্টালের সংযুক্তিকরণ করা হয়েছিল। তাই টিকার শংসাপত্র ডাউনলোডের জন্য অনেকেই এই অ্যাপ ব্যবহার করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই অ্যাপের মাধ্যমে যত তথ্য ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে, তা সুরক্ষিত থাকবে কি?